ইতিহাস

ভক্তিবাদী আন্দোলনে কবীর এর অবদান

ভক্তিবাদী আন্দোলনে কবীর এর অবদান 

কথিত আছে যে , কবীর কাশীর এক ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন । তবে তিনি মুসলমান তাঁতি বা জোলা নিরুর পরিবারে লালিত পালিত হন । কবীর একজন বিখ্যাত ভক্তিবাদী সাধক । অধ্যাপক কালিকা রঞ্জন কানুনগো বলেছেন , কবীরের ভাবনা চিন্তায় হিন্দু ও মুসলিম রহস্যবাদের যুগ্ম প্রভাব পড়েছিল । ইসলামী একেশ্বরবাদী চিন্তাকে তিনি ভারতীয় রূপ দিতে সচেষ্ট হন । 

কবীর এর মতাদর্শ 

কবীর প্রচার করেন যে , মানুষ নানা নামে ডাকলেও আসলে আল্লাহ বা ঈশ্বর এক । তাঁর অবস্থান মানুষের অন্তরে । কবীর বিশ্বাস করতেন , ঈশ্বর সাধনার জন্য মূর্তি পূজা বা নামাজের প্রয়োজন নেই । সন্ন্যাস জীবনেরও দরকার নেই । গৃহে অবস্থান করেই তাঁকে পাওয়া সম্ভব । তিনি বলতেন , ঈশ্বর মসজিদে নেই , মন্দিরেও নেই ; কাবাতেও নেই , কৈলাসেও নেই ; আচারেও নেই , অনুষ্ঠানেও নেই ; যোগেও নেই ; ত্যাগেও নেই । তাঁর মতে নিজের অন্তরের অন্তঃস্থলেই ঈশ্বরের আসন পাতা আছে । কবীর জাতিভেদ , বর্ণবৈষম্য , পূজানুষ্ঠান কোনো কিছুই মানতেন না । 

জাতিভেদকে তীব্র নিন্দা করে তিনি বলেন , “ উচে কুলকা জনমিয়া করণি উঁচ না হোয় / সুবরণ কলস সুরা ভরা সাধু নিন্দে সোয় । ” অর্থাৎ উচ্চ কুলে জন্ম অথচ যার কর্ম উচ্চ নয় — সেই ব্যক্তি যেন সুরাভরা সোনার কলস । আত্মশুদ্ধি ও ভক্তিই ছিল তাঁর মূল মন্ত্র । 

প্রভাব 

হিন্দু-মুসলমান নির্বিশেষে বহু মানুষ তাঁর শিষ্যত্ব গ্রহণ করে । ছোটো ছোটো কবিতা বা শ্লোক রচনা করে তিনি নিজের বক্তব্য সুন্দরভাবে প্রকাশ করতে পারতেন । এগুলি কবীরের দোঁহা নামে খ্যাত । কবীরের অনুগামীদের কবীরপন্থী বলা হয় । 

কবীর ছিলেন একজন উচ্চ শ্রেণির কবি ও দার্শনিক । কবীরের দোঁহাগুলির মধ্যে দিয়ে উচ্চ দার্শনিক তত্ত্বের পরিচয় পাওয়া যায় । অপূর্ব কাব্য রসসিক্ত এই দোঁহাগুলি রচিত হয়েছিল অধিকাংশ সাধারণ মানুষের ভাষা হিন্দিতে । কারণ তাঁর মতে , সংস্কৃত হল বদ্ধ জলের মতো , কিন্তু ভাষা নদীর মতোই বেগবান হওয়া উচিত । কবীরের ধর্ম প্রচার হিন্দি ভাষা ও সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেছে ।

ঐতিহাসিক তারাচাঁদ বলেছেন , “ সর্বধর্ম সমন্বয় ও মানব প্রেমের বাণী প্রচারই ছিল কবীরের লক্ষ্য ” । ড. রোমিলা থাপারের মতে , ঐতিহাসিক দৃষ্টিকোণ থেকে মধ্যযুগের ভক্তি আন্দোলনে সবচেয়ে বেশি দান এসেছিল কবীর ও নানকের কাছ থেকে ।

error: Content is protected !!