ভক্তিবাদের প্রভাব
ভক্তিবাদের প্রভাব
ভারতীয় সমাজ ও সংস্কৃতির ওপর ভক্তিবাদের সুগভীর প্রভাব বিদ্যমান ।
( i ) ভক্তিবাদ সমাজের নীচু ও অবহেলিত মানুষের কাছে ছিল মুক্তির মন্ত্র । ভক্তিবাদের সাম্য ও ভ্রাতৃত্বের বাণী হিন্দু সমাজের নিম্ন শ্রেণির মানুষকে জাতপাত ও ভেদাভেদের বেড়াজাল থেকে বেরিয়ে আসার পথ দেখায় ।
( ii ) ভক্তি আন্দোলনের অন্যতম লক্ষ্য ছিল হিন্দু ও ইসলাম ধর্মের বিরোধ কমিয়ে দুই সম্প্রদায়ের মানুষকে পরস্পরের কাছে নিয়ে আসা । ভক্তিবাদের প্রভাবে হিন্দু-মুসলমানের বিভেদ অনেক হ্রাস পায় ।
( iii ) মধ্যযুগের কৃষক অভ্যুত্থানের পশ্চাদপটে ভক্তিবাদের প্রভাব বর্তমান । কবীর , নানক , দাদু প্রমুখ সামাজিক সাম্যের যে দাবি তোলেন , তাতে কৃষক আন্দোলন উৎসাহিত হয় ।
( iv ) নানকের ভক্তি ধর্ম প্রচারিত হয়েছিল প্রধানত পাঞ্জাবের যুদ্ধ প্রিয় জাটদের মধ্যে । ফলে দশম গুরু গোবিন্দের সময় ভক্তিধর্মের অনুরাগীরা শিখপন্থ ও খালসায় রূপান্তরিত হয় এবং মোগল রাজশক্তির সঙ্গে বিরোধে লিপ্ত হয় । নদিয়াতে চাঁদ কাজি নগর সংকীর্তনের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করলে শ্রীচৈতন্য গণমুখী চেতনাকে সম্বল করে কীর্তন সহযোগে শোভাযাত্রা করে কাজির কাছে উপস্থিত হন । কাজি বাধ্য হয়ে সংকীর্তনের অধিকারকে স্বীকৃতি দেন ।
( v ) ভক্তিবাদী আন্দোলনের ফলে সমাজে নারীদের মর্যাদা বৃদ্ধি পায় এবং তারা ধর্মসভায় যোগদানের অধিকার পায় ।
( vi ) ভক্তি আন্দোলনের ফলে আঞ্চলিক ভাষা ও সাহিত্যের প্রভূত উন্নতি হয় । ভক্তিবাদী সাধকেরা আঞ্চলিক ভাষায় নিজ নিজ মতাদর্শ প্রচার করেন । ফলে তা সাধারণ মানুষের কাছে সহজবোধ্য হয় । বাংলায় চৈতন্য পদাবলী বাংলা ভাষাকে সহজতর করে । কবীরের দোঁহা হিন্দি ভাষাকে সমৃদ্ধ করে । নামদেব মারাঠি ভাষা ও নানক গুরুমুখী ভাষাকে পরিপুষ্ট করেন ।