আলাউদ্দিন খলজির দাক্ষিণাত্য নীতি
আলাউদ্দিন খলজির দাক্ষিণাত্য নীতি
উত্তর ভারত বিজয়ের পর আলাউদ্দিন দক্ষিণ ভারত বিজয়ে উদ্যোগী হন । আলাউদ্দিনের দাক্ষিণাত্য অভিযানের পিছনে মূলত নিম্নলিখিত কারণগুলি কাজ করেছিল ।
( i ) আলাউদ্দিন ছিলেন ঘোর সাম্রাজ্যবাদী শাসক । তিনি আলেকজান্ডারের মতো দিগ্বিজয়ের স্বপ্ন দেখতেন এবং এক বিশাল সৈন্যবাহিনী গঠন করেন । সেই বিশাল সৈন্যবাহিনী আলাউদ্দিনকে দাক্ষিণাত্য অভিযানে প্রলুব্ধ করে ।
( ii ) সেই সময় দক্ষিণ ভারতে চারটি সমৃদ্ধ রাজ্য ছিল । যথা — দেবগিরির যাদব রাজ্য , তেলেঙ্গানার কাকতীয় রাজ্য , হোয়সল রাজ্য ও পাণ্ড্য রাজ্য । এই রাজ্যগুলি পরস্পর বিবাদে লিপ্ত ছিল । দক্ষিণ ভারতীয় রাজ্যগুলির মধ্যে এই অনৈক্য আলাউদ্দিনকে দাক্ষিণাত্য অভিযানে উৎসাহিত করেছিল ।
( iii ) দক্ষিণ ভারতের অফুরন্ত ঐশ্বর্য আলাউদ্দিনকে আকৃষ্ট করেছিল ।
( iv ) জালালউদ্দিনের রাজত্বকালে দেবগিরি দিল্লিকে বাৎসরিক কর দিত । এই কর প্রদান বন্ধ করে দিলে তা আদায় করার জন্য আলাউদ্দিন দাক্ষিণাত্য অভিযান করেন ।
আলাউদ্দিন খলজির দাক্ষিণাত্য অভিযান
আলাউদ্দিনের দাক্ষিণাত্য অভিযানে নেতৃত্ব দেন তাঁর বিশ্বস্ত সেনাপতি মালিক কাফুর । দেবগিরির রাজা রামচন্দ্র পূর্ব প্রতিশ্রুতি মতো বার্ষিক কর দেওয়া বন্ধ করলে আলাউদ্দিন ১৩০৬ খ্রিস্টাব্দে মালিক কাফুরকে দেবগিরির বিরুদ্ধে পাঠান । দেবগিরির রাজা রামচন্দ্র আলাউদ্দিনের বশ্যতা স্বীকার করেন । ১৩০৮ খ্রিস্টাব্দে মালিক কাফুর বরঙ্গলের কাকতীয় বংশীয় রাজা দ্বিতীয় প্রতাপরুদ্রকে আত্মসমর্পণে বাধ্য করেন । ১৩১০ খ্রিস্টাব্দে মালিক কাফুর হোয়সল রাজ্য অতর্কিতে আক্রমণ করে হোয়সলরাজ তৃতীয় বীরবল্লালকে আত্মসমর্পণে বাধ্য করেন । ১৩১১ খ্রিস্টাব্দে কাফুর পাণ্ড্য রাজ্য আক্রমণ করেন এবং সহজেই জয়লাভ করেন ।
তিনি সেতুবন্ধ রামেশ্বরম পর্যন্ত অগ্রসর হন এবং প্রচুর ধনরত্ন নিয়ে দিল্লিতে ফিরে আসেন । ১৩১৩ খ্রিস্টাব্দে কাফুরকে পুনরায় দেবগিরির বিরুদ্ধে পাঠানো হয় । রামচন্দ্রের পুত্র শঙ্কর পিতৃ প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী করদান বন্ধ করে দিলে কাফুর শঙ্করকে পরাজিত ও নিহত করেন । দেবগিরিতে দিল্লির প্রভুত্ব স্থাপন করে কাফুর হোয়সল রাজ্য দিল্লির সাম্রাজ্যভুক্ত করেন ।
এইভাবে ক্রমাগত অভিযান চালিয়ে আলাউদ্দিন সমগ্র দক্ষিণ ভারতে নিজ প্রভৃত্ব স্থাপন করেন ।