প্রথম নরসিংহ বর্মন এর কৃতিত্ব

প্রথম নরসিংহ বর্মন এর কৃতিত্ব 

মহেন্দ্র বর্মনের মৃত্যুর পর পল্লব বংশের সিংহাসনে বসেন তাঁর পুত্র প্রথম নরসিংহ বর্মন ( ৬৩০ – ৬৬৮ খ্রীঃ ) । তাঁর নেতৃত্বে পল্লব রাজ্য গৌরবের শীর্ষে আরোহণ করেছিল । এজন্য তাকে পল্লব বংশের শ্রেষ্ঠ রাজা বলা হয় । প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বী চালুক্যদের পরাজিত করে তিনি বংশের মান মর্যাদা ও শক্তি বৃদ্ধি করেন ।  

চালুক্যরাজ দ্বিতীয় পুলকেশীকে তিনি পরপর তিনটি যুদ্ধে পরাজিত করেন এবং ‘ মহামল্ল ’ উপাধি নেন । তিনি চালুক্যদের রাজধানী ‘ বাতাপি ’ দখল করে নগরটি অগ্নিদগ্ধ করেন এবং ‘ বাতাপিকোণ্ড ’ অর্থাৎ ‘ বাতাপি বিজেতা ’ উপাধি নেন ।

প্রথম নরসিংহ বর্মনের আর একটি সামরিক কৃতিত্ব হল সিংহলে সফল অভিযান । মহাবংশ গ্রন্থ থেকে জানা যায় যে , সিংহলের যুবরাজ মানব বর্মনের সাহায্যে নরসিংহ সিংহলে দুটি নৌ অভিযান প্রেরিত হয়েছিল ৬৪২-৬৪৩ খ্রীষ্টাব্দে । কিন্তু এটি ব্যর্থ সিংহল অভিযান হয়েছিল । তবে দ্বিতীয় অভিযানে ( ৬৬৮ খ্রীঃ ) তিনি সফল হন এবং সিংহলের সিংহাসনে অনুগত মানব বর্মনকে বসিয়ে সেখানে নিজ প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম হন ।  

কেবল বিজেতা নয় , শিল্প-সাহিত্যের পৃষ্ঠপোষক হিসেবেও প্রথম নরসিংহ বর্মনের খ্যাতি ছিল । মহাবলীপুরমে তিনি কয়েকটি রথ মন্দির নির্মাণ করেছিলেন । তখন মহাবলীপুরম ছিল দক্ষিণ ভারতের অন্যতম ব্যস্ত বন্দর । তাঁর রাজত্বকালে হিউয়েন সাঙ কাঞ্চীতে এসেছিলেন ( ৬৪০ খ্রীঃ ) । ৬ মাইল পরিধির এই শহরে তিনি বহু বৌদ্ধ মঠ ও জৈন মন্দির লক্ষ্য করেছিলেন । এইসব মঠে বহু বৌদ্ধ ভিক্ষু বসবাস করতেন । এই থেকে প্রমাণিত হয় যে , অবক্ষয়ের কালেও দক্ষিণ ভারতে বৌদ্ধ ধর্মের যথেষ্ট জনপ্রিয়তা ছিল । সংস্কৃত শিক্ষার পীঠস্থান হিসেবে কাঞ্চী খ্যাতিলাভ করেছিল । এগুলি তাঁর সাহিত্যানুরাগ ও ধর্মীয় উদারতার পরিচায়ক।

error: Content is protected !!