ইতিহাস

পাল যুগের সাহিত্য

পাল যুগের সাহিত্য

পাল যুগে সাহিত্য চর্চার প্রধান মাধ্যম ছিল সংস্কৃত ভাষা । তবে এই পর্বে বাঙালির লোকভাষা ছিল মাগধী প্রাকৃতের পরিবর্তিত রূপ । ফলে সংস্কৃত ভাষা এ যুগে একটি স্বতন্ত্র রীতিতে প্রতিভাত হয়েছিল , যাকে গৌড়ীয় রীতি বলা হয় । অবশ্য গৌড়ীয় সংস্কৃতে রচিত সাহিত্যগুলি সংখ্যায় ছিল অল্প এবং গুণগতভাবে ছিল খুবই সাধারণ । পাল যুগে রচিত গ্রন্থগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল— শ্রীধর ভট্টের ‘ ন্যায় কন্দলী ‘ , অভিনন্দের ‘ যোগবাশিষ্ঠ ’ ও ‘ কাদম্বরী কথাসার ‘ , সন্ধ্যাকর নন্দীর ‘ রামচরিত ‘ ইত্যাদি । সন্ধ্যাকর নিজেকে কলির বাল্মীকি বলে অভিহিত করতেন । ক্ষেমীশ্বর রচিত ‘ চণ্ডকৌশিক ’ এবং নীতিবর্মা রচিত ‘ কীচক বধ ’ ও ‘ কবীন্দ্রবচনসমুচ্চয় ‘ ছিল পাল যুগের অনন্য সৃষ্টি । 

পাল যুগে বৌদ্ধ-সংস্কৃত রীতিতে বহু সাহিত্য রচিত হয়েছিল । বৌদ্ধ সিদ্ধাচার্যগণ তখন সাহিত্যকর্মে অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছিলেন । এই যুগে বৌদ্ধ লেখকদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন শীলভদ্র , শান্তরক্ষিত , অতীশ দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞান , জ্ঞানশ্রী মিশ্র প্রমুখ । এ ছাড়া , অভয়াকর , দানশীল , কুমারবজ্র , দিবাকর চন্দ্র প্রমুখ বহু সাহিত্যকার ছিলেন । 

পাল যুগেই চর্যাপদ রচিত হয়েছিল । এই চর্যাপদ ছিল প্রাচীনতম বাংলা ভাষার নিদর্শন । ড. শহীদুল্লার মতে এই পদগুলি রচিত হয়েছিল সপ্তম খ্রিস্টাব্দে । এই পদগুলি বিভিন্ন ছন্দে রচিত হয় । পাল যুগের রচিত চর্যাপদের একটি নিদর্শন হল— “ 

” গঙ্গা জউনা মাঝে রে বহই নাঈ । 

তহিঁ চড়িলী মাতঙ্গি পোই-আ লীলে পার করেই । ” 

অর্থাৎ গঙ্গা যমুনা মধ্যে বহে যে নৌকা । তাহাতে চড়িয়া চণ্ডালী ডোবা লোককে অবলীলাক্রমে পার করে । 

চক্রপানি দত্ত ‘ আয়ুর্বেদ দীপিকা ‘ এবং ‘ ভানুমতি চিকিৎসা সংগ্রহ ‘ নামে দুটি চিকিৎসা বিষয়ক গ্রন্থ রচনা করেছিলেন । বঙ্গ সেনের লেখা চিকিৎসা বিষয়ক গ্রন্থটি হল ‘ চিকিৎসা সার সংগ্রহ ‘ ।

error: Content is protected !!