ইতিহাস

ধর্মপালের কৃতিত্ব

ধর্মপালের কৃতিত্ব

গোপালের মৃত্যুর পর আনুমানিক ৭৭০ খ্রীষ্টাব্দে তাঁর পুত্র ধর্মপাল বাংলার সিংহাসনে বসেন । তিনি ছিলেন সুদক্ষ যোদ্ধা ও কূটনীতিজ্ঞ । ক্ষুদ্র পাল রাজ্যকে তিনি সাম্রাজ্যের মর্যাদায় উন্নীত করেন । বিজেতা হিসেবে তিনি সমগ্র আর্যাবর্তে সার্বভৌম ক্ষমতার অভিলাষী ছিলেন । 

রাজ্য বিস্তার 

সিংহাসনে বসেই ধর্মপাল বারাণসী , প্রয়াগ ও মগধ জয় করেন । এই সময় উত্তর ভারতে রাজনৈতিক কর্তৃত্বের প্রতীক হিসেবে ‘ কনৌজ ’ বিবেচিত হত । তাই প্রতিহার ও রাষ্ট্রকূট বংশ কনৌজ দখলের জন্য বিশেষ তৎপর ছিল । ধর্মপালও সেই দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েন । প্রায় দু’শত বছর ব্যাপী ত্রিশক্তি সংঘর্ষের সূচনা হয় ।  

ধর্মপাল কনৌজ দখলের জন্য পশ্চিমদিকে অগ্রসর হলে প্রতিহার রাজ বৎস ধর্মপালকে পরাজিত করেন । কিন্তু অল্পকালের মধ্যেই রাষ্ট্রকূট রাজ ধ্রুব প্রতিহার রাজকে আক্রমণ ও পরাজিত করলে তিনি রাজপুতানায় ফিরে যেতে বাধ্য হন । এই সুযোগে ধর্মপাল উত্তর ভারতে আধিপত্য স্থাপনে অগ্রসর হন । কিন্তু ধ্রুব ধর্মপালকে আক্রমণ ও পরাজিত করলে ধর্মপালের বিজয় অভিযান ব্যাহত হয় । কিন্তু ধ্রুব উত্তর ভারত জয়ে অগ্রসর হয়ে দাক্ষিণাত্যে ফিরে গেলে , ধর্মপাল পুনরায় ক্ষমতা বিস্তারে অগ্রসর হন । তিনি বিনা বাধায় কনৌজের রাজা ইন্দ্রায়ুধকে পরাজিত করে নিজ মনোনীত চক্ৰায়ুধকে কনৌজের সিংহাসনে বসান । 

এই অনুষ্ঠানে ভােজ ( বেরার ) , মৎস্য ( জয়পুর ) , মদ্র ( মধ্য পাঞ্জাব ) , অবন্তী ( মালব ) , গান্ধার ( পশ্চিম পাঞ্জাব ) , কুরু ( পূর্ব পাঞ্জাব ) প্রভৃতি রাজ্যের নৃপতিগণ উপস্থিত ছিলেন । এই থেকে অনুমিত হয় , এইসব রাজ্য ধর্মপালের প্রাধান্য স্বীকার করে নিয়েছিল ।  

কিন্তু নবম খ্রীষ্টাব্দের সূচনায় প্রতিহার রাজ দ্বিতীয় নাগভট্ট কনৌজ দখল করেন এবং বাংলা আক্রমণ করে ধর্মপালকে পরাজিত করেন । এবারেও সৌভাগ্যবশতঃ রাষ্ট্রকুট রাজ তৃতীয় গোবিন্দ নাগভট্টকে আক্রমণ ও পরাজিত করলে ধর্মপালের অস্তিত্ব রক্ষা পায় । এছাড়া , নেপাল ধর্মপাল কর্তৃক বিজিত হয়েছিল বলে অনুমান করা হয় । 

শিল্প ও সাহিত্যের পৃষ্ঠপোষকতা

কেবল রাজ্য বিস্তার নয় , শিল্প , সাহিত্য , সংস্কৃতির পৃষ্ঠপোষক হিসেবেও ধর্মপাল কৃতিত্বের অধিকারী ছিলেন । বৌদ্ধ ধর্মের পৃষ্ঠপোষক হিসেবে তিনি বহু বৌদ্ধ মঠ নির্মাণ করেন । মগধে নতুন রাজধানী স্থাপন করে সেখানে বিখ্যাত বিক্রমশীল বিহার নামক বৌদ্ধ মঠটি নির্মাণ করেছিলেন ।  

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য , ‘ বিক্রমশীল ’ ছিল ধর্মপালের উপাধি । বিদ্যাচর্চার কেন্দ্র হিসেবে এর যথেষ্ট খ্যাতি ছিল । এছাড়া , পাহাড়পুরে ‘ সোমপুর বিহার এবং ওদন্তপুরী বিহার ‘ ও ধর্মপালের অনন্য কীর্তি । তারানাথের মতে , ধর্মপাল অন্তত ৫০ টি বিভিন্ন ধরনের শিক্ষাকেন্দ্র নির্মাণ করেছিলেন । ৮১০ খ্রীষ্টাব্দে তিনি মৃত্যুমুখে পতিত হলে পুত্র দেবপাল বাংলার সিংহাসনে বসেন । 

error: Content is protected !!