কুষাণ কাদের বলা হয়

কুষাণ কাদের বলা হয় 

মৌর্যোত্তর ভারতে বৈদেশিক আক্রমণের পরিণতি ঘটে কুষাণ জাতির আক্রমণে । কুষাণদের ইতিহাস জানার জন্য আমাদের মূলত নির্ভর করতে হয় মুদ্রা ও শিলালিপির উপর । এ ছাড়া , চীনা ঐতিহাসিক পান-কু , সু-মা-সিহেন , ফান-ই প্রভৃতির রচনা এবং বৌদ্ধ সাহিত্য মহাবস্তুদিব্যাবদান , নাগার্জুনের মাধ্যমিক সূত্র , অশ্বঘোষের বুদ্ধচরিত, হিউয়েন সাং এর বিবরণ প্রভৃতি থেকেও কুষাণদের সম্বন্ধে বহু তথ্য পাওয়া যায় ।  

কুষাণদের পরিচয় 

চীনা রচনা থেকে জানা যায় , কুষাণরা আদিতে ছিল যাযাবর , ইউ-চি জাতির একটি শাখা । এদের বাসস্থান ছিল চীনের উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত কান-সু ও নিং-চিয়া প্রদেশে , দ্বিতীয় খ্রীষ্টপূর্বাব্দে হিউ-নু ( হুন ) নামে অপর এক যাযাবর জাতির আক্রমণে বাসভূমি থেকে বিতাড়িত হয়ে ইউ-চিরা পশ্চিমে অগ্রসর হয় এবং তাকলামাকান অঞ্চলে উপস্থিত হয় । এখানে ইউ-চিরা আর এক যাযাবর জাতি উ-সুনদের নেতাকে হত্যা করে । এখানে ইউ-চিরা দুটি শাখায় বিভক্ত হয়ে যায় ।  

একটি শাখা দক্ষিণ দিকে এগিয়ে যায় । এই গোষ্ঠী পরিচিত হয় ক্ষুদ্র ইউ-চি নামে । অপর শাখাটি পশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে সিরদরিয়া নদীর তীরে উপস্থিত হয় । এটি পরিচিত হয় বৃহৎ ইউ-চি নামে । সিরদরিয়া অঞ্চলে ইউ-চিরা বেশি দিন বসবাস করতে পারেনি । কারণ উ-সুন জাতি হিউংনু’দের সাহায্য নিয়ে এখানে ইউ-চি দের আক্রমণ ও বিতাড়িত করে । অতঃপর ইউ-চি জাতি ব্যাকট্রিয়া অঞ্চলে উপস্থিত হয় এবং শকদের বিতাড়িত করে এই অঞ্চলে বসবাস শুরু করে । 

কুষাণ শাখা

চৈনিক বিবরণ থেকে জানা যায় , ব্যাকট্রিয়ায় বসবাসের পর ইউ-চিরা তাদের যাযাবর বৃত্তি ত্যাগ করে । এখানেই দলগত সংহতির অভাবহেতু ইউ-চিরা পাঁচটি শাখায় বিভক্ত হয়ে পড়ে । ফান-ই’র মতে , এই পাঁচটি শাখার মধ্যে শেষ পর্যন্ত ‘ কুই-শুয়াং ‘ বা কুষাণ শাখা শক্তিশালী হয়ে উঠে এবং অপর চারটি শাখাকে নিজেদের অধীনে নিয়ে আসে । পরে এই শাখা ভারতে প্রবেশ করে রাজ্য স্থাপন করে । কুষাণ শাখার নেতা কুজুল বা প্রথম কদফিসেস উত্তর-পশ্চিম ভারতে কুষাণ রাজত্বের সূচনা করেন । পরবর্তী রাজা বিম বা দ্বিতীয় কদফিসেস কাবুল , কান্দাহার সহ হিন্দুকুশ পর্বতের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে কুষাণ অধিকার প্রতিষ্ঠা করেন ।

error: Content is protected !!