ইতিহাস

ফারুকশিয়ারের ফরমান

ফারুকশিয়ারের ফরমান

১৭১৭ খ্রিস্টাব্দে জন সুরম্যানের নেতৃত্বে ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির প্রতিনিধি দল মোগল সম্রাট ফারুকশিয়ারের সঙ্গে দেখা করে । তারা বার্ষিক তিন হাজার টাকার বিনিময়ে বাংলায় বিনা শুল্কে বাণিজ্য করার ছাড়পত্র বা ‘দস্তক ’ লাভ করে । এই সনদ ১৭১৭ খ্রিস্টাব্দের ‘ ফরমান ’ বা ‘ ফারুকশিয়ারের ফরমান  ‘ নামে পরিচিত ।

ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ফারুকশিয়ারের ফরমান দ্বারা বার্ষিক ৩ হাজার টাকার বিনিময়ে বাংলা , বিহার , উড়িষ্যায় বিনা শুল্কে বাণিজ্য করার অধিকার লাভ করে । এ ছাড়া , কোম্পানি মুর্শিদাবাদের টাকশাল থেকে মুদ্রা তৈরি অধিকার এবং আটত্রিশটি নতুন গ্রাম কেনার অনুমতি পায় ।

ফরমান লাভের পটভূমি

১৬৫১ খ্রি. ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ইউরোপের অন্যান্য বণিক কোম্পানিগুলির মতো বাংলায় কুঠি নির্মাণ করে বাণিজ্য করার জন্য । বাণিজ্যের উন্নতির এতে সাথে তারা কলকাতা, গোবিন্দপুর ও সুতানুটি এই তিনটি গ্রামের জামিদারি লাভ করে । পরবর্তীকালে আরও বেশি বাণিজ্যিক সুবিধার জন্য ইংরেজরা জন সুরম্যানের নেতৃত্বে দূত পাঠায় মোগল সম্রাট ফারুকশিয়ারের কাছে (১৭১৫ খ্রি.) । যারই পরিনাম হল ফারুকশিয়ারের ফরমান (১৭১৭ খ্রি.) ।

ফারুকশিয়ারের ফরমান এর গুরুত্ব

( ১ ) ফারুকশিয়ারের ফরমান ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হিসাবে চিহ্নিত হয়ে রয়েছে । ব্রিটিশ ইস্ট কোম্পানির পক্ষে এই ফরমান লাভ ছিল একটি সত্যিকারের কূটনৈতিক সাফল্য । ফারুকশিয়ারের ফরমানের মাধ্যমে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি যে দস্তক লাভ করেছিল তা বাংলায় ব্রিটিশদের বাণিজ্য এর  ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিল ।

( ২ ) ফারুকশিয়ারের ফরমান লাভের পর ভারতে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বাণিজ্যিক অধিকার আইনগত ভাবে স্বীকৃতি লাভ করেছিল । এরফলে ভারতে ইংরেজ বণিকদের রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠার পথ ধিরে ধিরে সুগম হয়েছিল ।
( ৩ ) ফরমান লাভের পর কোম্পানি কিছু অতিরিক্ত সুযোগ সুবিধা পেতে লাগলো । কোম্পানির প্রাপ্ত সুযোগ সুবিধাগুলির অন্যতম ছিল ইংরেজ বাণিজ্য কুঠির প্রধান তার মনোনীত বাণিজ্য প্রতিনিধিকে একটি দস্তক বা বিনা শুল্কে বাণিজ্যের অনুমতিপত্র প্রদান করবেন । যেটি দেখালে নবারের কোনো কর্মচারী ইংরেজদের কোনো জাহাজ পরীক্ষা করতে পারবে না ।
( ৪ ) দস্তকের সুযোগ নিয়ে ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ইউরোপীয় অন্যান্য বণিক কোম্পানিগুলির তুলনায় বাণিজ্যিক প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অনেকটা এগিয়ে গিয়েছিল । সেইসাথে দেশীয় বণিকগোষ্ঠীগুলিও বিনা শুল্কে বাণিজ্য করতে না পারায় বাণিজ্যিক প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল । 

( ৫ ) ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কর্মচারীরা ব্যক্তিগত বাণিজ্য শুল্ক ছাড়ের সুযোগ নেওয়ায় নবাব তার প্রাপ্য রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয়েছিল , ফলে আদায়কৃত রাজস্বের মোট পরিমাণ কমে গিয়েছিল । 

( ৬ ) ফারুকশিয়ারের ফরমানের সুদূরপ্রসারী ফল হিসাবে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ভারতে ইংরেজ শাসনের ভিত্তি সুদৃঢ় করেছিল ।

error: Content is protected !!