ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসারে খ্রিস্টান মিশনারীদের ভূমিকা
ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসারে খ্রিস্টান মিশনারীদের ভূমিকা
ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসারে খ্রিস্টান মিশনারীদের বিশেষ উদ্যোগ ছিল ।
( i ) খ্রিস্টান মিশনারী উইলিয়াম কেরি ১৮০০ খ্রিস্টাব্দে শ্রীরামপুর মিশন প্রতিষ্ঠা করেন । তিনি মার্শম্যান এবং উইলিয়াম ওয়ার্ড এর সহায়তায় একটি ইংরেজি বিদ্যালয় ও ছাপাখানা চালানোর কাজে ব্রতী হন ।
( ii ) স্কটিশ মিশনারী আলেকজান্ডার ডাফ এদেশে ইংরেজি শিক্ষার প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন । তাঁর প্রতিষ্ঠিত জেনারেল অ্যাসেম্বলিজ ইন্সটিটিউশন পরবর্তীকালে স্কটিশ চার্চ কলেজ নামে পরিচিত হয়েছে ।
( iii ) শ্রীরামপুর ব্যাপটিস্ট মিশন এবং মিশনারী সোসাইটিগুলির উদ্যোগে ভারতে বহু বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল । খ্রিস্টান মিশনারীদের প্রচেষ্টায় গড়ে উঠেছিল শিবপুরে বিশপ কলেজ ( ১৮২০ খ্রি. ) , মাদ্রাজে খ্রিস্টান কলেজ ( ১৮৩৭ খ্রি . ) , বোম্বাইয়ে উইলসন কলেজ ( ১৮৩২ খ্রি . ) প্রভৃতি ।
( iv ) বাংলাদেশে পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তারের ইতিহাসে বিশেষ উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ হল হিন্দু কলেজের প্রতিষ্ঠা । সুপ্রিমকোর্টের প্রধান বিচারপতি স্যার এডওয়ার্ড হাইড ইস্ট , বৈদ্যনাথ মুখোপাধ্যায় , ডেভিড হেয়ার প্রমুখের উদ্যোগে ১৮১৭ খ্রিস্টাব্দে কলকাতায় হিন্দু কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয় । অনেকের মতে রামমোহন রায়ও এই মহাবিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন । এই বিদ্যালয় খুব দ্রুত জনপ্রিয়তা অর্জন করে এবং খ্যাতির শীর্ষে পৌঁছোয় । বর্তমানে এটিই প্রেসিডেন্সি কলেজ নামে অভিহিত হয়েছে ।
ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসারে কোম্পানির উদ্দেশ্য
ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষা প্রবর্তনে কোম্পানির আসল উদ্দেশ্য ছিল বাণিজ্যিক স্বার্থ রক্ষা করা ।
( i ) আরবি বা ফারসি ভাষায় শিক্ষিত ভারতীয়দের দ্বারা কোম্পানির সরকারি দপ্তর পরিচালনা করা সম্ভব হচ্ছিল না । সাধারণ কেরানিদেরও ইংল্যান্ড থেকে আনতে হচ্ছিল । তাই কোম্পানির কর্তৃপক্ষ অনুভব করে এদেশে ইংরেজি শিক্ষিত কিছু কেরানি তৈরি করলে তাদের পক্ষে সুবিধাই হবে ।
( ii ) ভারতের মধ্যবিত্ত শ্রেণি পাশ্চাত্যের জ্ঞান বিজ্ঞান ও শিক্ষার প্রতি ক্রমশ আগ্রহী হয়ে উঠলে ব্রিটিশ প্রশাসন তাদেরও ইংরেজি শিক্ষায় শিক্ষিত করে প্রশাসনিক কাজে লাগাতে চেয়েছিল । তাই কোম্পানি এদেশে ইংরেজি শিক্ষা প্রবর্তন করার বিষয়ে চিন্তাভাবনা শুরু করে । অবশ্য অনেক টালবাহানার পর সরকারিভাবে এদেশে পাশ্চাত্য শিক্ষা প্রসারের উদ্যোগ নেওয়া হয় ।