ইতিহাস

লর্ড ক্লাইভের ভূমি রাজস্ব নীতি

লর্ড ক্লাইভের ভূমি রাজস্ব নীতি

আইনত কোম্পানি দেওয়ানি পেলেও অধিকার ছিল নবাবের হাতে । কিন্তু বক্সারের যুদ্ধের পর বাংলার নবাবের স্বাধীন অস্তিত্ব আদৌ ছিল না । নবাবের প্রতিটি কাজেই ছিল কোম্পানির পরোক্ষ কিংবা প্রত্যক্ষ নিয়ন্ত্রণ । তাই নবাব তাঁর উপর রক্ষিত নিজামতি ক্ষমতাও কোম্পানির মনোনীত ব্যক্তির হাতে ছেড়ে দেন । নায়েব দেওয়ান রেজা খাঁ একই সাথে দেওয়ানি ও নিজামতির দায়িত্ব নিয়ে বাংলার প্রধান প্রশাসকে পরিণত হন । কোম্পানির তরফে মুর্শিদাবাদে নিয়োজিত একজন ব্রিটিশ রেসিডেন্ট বাংলার নায়েব দেওয়ান রেজা খাঁ ও বিহারের সীতাব রায়ের কাজ তত্ত্ববধান করতেন । 

রেজা খাঁ ছিলেন স্বার্থপর , লোভী , উচ্চাকাঙ্ক্ষী , অসৎ এবং দুর্নীতিপরায়ণ ব্যক্তি । স্বভাবতই প্রশাসনে কোনো মৌলিক পরিবর্তন বা উন্নতি তার কাছে আশা করা ছিল বৃথা । তিনি বুঝতেন যে , কোম্পানি চায় অতিরিক্ত রাজস্ব । তাই রাজস্ব আদায়ের জন্য তিনি সেইসব ব্যক্তিকেই আমিন নিযুক্ত করেন যারা জোর জবরদস্তি করে কৃষকের ঘর থেকে রাজস্ব সংগ্রহে সক্ষম । ফলে নির্বিচারে রাজস্বের পরিমাণ বৃদ্ধি ও আদায় করা হতে থাকে । রাজস্ব সংগ্রহের দ্রুত বৃদ্ধি থেকে বোঝা যায় কীভাবে রাজস্বের হার বাড়ানো হত ।  

১৭২২ খ্রিস্টাব্দে মুর্শিদকুলির মৃত্যুর পর বাংলার রাজস্বের পরিমাণ ছিল ১,৪২,৮৮,১২৬ সিক্কা টাকা । ১৭৬৫ খ্রিস্টাব্দে কোম্পানি দেওয়ানি লাভের পর তা বেড়ে দাঁড়ায় ১,৬০,২৯,০৯১ সিক্কা টাকায় । এককভাবে দেখা যায় আলিবর্দির আমলে পূর্ণিয়া ও দিনাজপুর থেকে রাজস্ব আদায় হত যথাক্রমে ৪ লক্ষ ও ১৪ লক্ষ সিক্কা টাকা । কিন্তু কোম্পানি দেওয়ানি লাভের পরেই তা বেড়ে দাঁড়ায় যথাক্রমে ১২ লক্ষ ও ১৭ লক্ষ সিক্কা টাকায় ।  

মুর্শিদাবাদের ব্রিটিশ রেসিডেন্ট সাইক্‌স এবং রিচার্ড বেচার প্রচলিত ব্যবস্থার ত্রুটি সম্পর্কে পরোক্ষ কিছু ইঙ্গিত দিলেও , কোম্পানির কর্তৃপক্ষ তাতে কর্ণপাত করেননি । এত চড়া হারে রাজস্ব আদায় করাও আমিলদের সবার পক্ষে সম্ভব ছিল না । ফলে বহু আমিল পদচ্যুত হন এবং তাদের স্থলে নিযুক্ত হন সেইসব ব্যক্তি , যারা ন্যায় নীতি , দয়ামায়া বিসর্জন দিয়ে কৃষকদের কাছ থেকে সর্বস্ব কেড়ে আনতে পারবেন ।

error: Content is protected !!