দ্বিতীয় ইঙ্গ-মহীশূর যুদ্ধ
দ্বিতীয় ইঙ্গ-মহীশূর যুদ্ধ
মাদ্রাজের সন্ধি ( ১৭৬৯ খ্রিঃ ) দ্বারা প্রথম ইঙ্গ-মহীশূর যুদ্ধের অবসান ঘটলেও , উভয়ের মধ্যে মৌলিক বিরোধের কোনো সমাধান হয়নি । রাজনৈতিক ভাবে দক্ষিণ ভারতে মহীশুর ও ইংরেজ — এই দুই বৃহৎ শক্তির সহাবস্থান সম্ভব ছিল না । তাই আপাত মীমাংসা হলেও , স্থায়ী সমাধান সংক্রান্ত প্রশ্ন থেকেই গিয়েছিল ।
ইংরেজগণ আন্তরিকভাবে চাইত ভারতীয় শক্তিগুলি , বিশেষত মারাঠা ও মহীশূর নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্বে লিপ্ত থাকুক এবং উভয়ের শক্তি ক্ষয় হোক । তাই ১৭৭১ খ্রিস্টাব্দে মারাঠাগণ মহীশূর রাজ্য আক্রমণ করলে ইংরেজ পক্ষ নিশ্চুপ থাকে । অথচ মাদ্রাজের সন্ধি অনুযায়ী এক্ষেত্রে ইংরেজগণ মহীশূরকে সাহায্য দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ছিল । ইংরেজের এই বেইমানি হায়দার আলিকে প্রচণ্ডভাবে ক্ষুব্ধ করে তোলে । ঠিক এমনি সময়ে ইঙ্গ-ফরাসি বিরোধের সূত্রে ইংরেজগণ ভারতস্থ ফরাসি উপনিবেশ মাহে অধিকার করে । মাহে ছিল মহীশূর রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত । হায়দার ইংরেজের এই কাজের তীব্র প্রতিবাদ করেন ।
হায়দার উপলব্ধি করেন যে , ইংরেজগণ তাঁর সার্বভৌম ক্ষমতায় আঘাত করার উদ্দেশ্যেই মাহে দখল করেছে । তা ছাড়া মাহে ছিল মালাবার উপকূলে অবস্থিত । এই অঞ্চল দিয়েই পারস্যের সাথে মহীশূরে বাণিজ্য চলত । মাহে ইংরেজ দখলে গেলে হায়দারের আর্থিক ক্ষতির সম্ভাবনা ছিল । এইসব কারণে হায়দার ইংরেজের বিরুদ্ধে যুদ্ধ প্রস্তুতি শুরু করেন ।
হায়দার আলী মারাঠা , নিজাম ও মহীশূরের মধ্যে ত্রিশক্তি জোট গঠন করে কর্ণাট আক্রমণ করেন । শুরু হয় ‘ দ্বিতীয় ইঙ্গ-মহীশূর যুদ্ধ ‘ ( ১৭৮০ খ্রিঃ ) । চতুর ইংরেজ ‘ সলবাই এর সন্ধি ’ দ্বারা মারাঠাদের সাথে বিরোধ মিটিয়ে নেয় । ফলে মারাঠাগণ যুদ্ধ থেকে সরে দাঁড়ায় । অনির্ভর নিজামও সুযোগ বুঝে ইংরেজের দিকে চলে যান । ফলে হায়দার মিত্রহীন ও দুর্বল হয়ে পড়েন । তবুও তিনি একাই যুদ্ধ চালিয়ে যান । এই সময় তাঁর অনুরোধে সাঁফ্রেন -এর নেতৃত্বে একটি ফরাসি নৌবহর মহীশূরের সাহায্যার্থে দাক্ষিণাত্যে এসে উপস্থিত হয় । কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত , আকস্মিক ভাবে হায়দার প্রাণত্যাগ করেন ( ১৭৮২ খ্রিঃ ) ।
ম্যাঙ্গালোরের সন্ধি
হায়দারের মৃত্যুর পর তাঁর পুত্র টিপু সুলতান ইংরেজের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যেতে থাকেন । কিন্তু ‘ ভার্সাই সন্ধি ‘র ফলে( ১৭৮৩ খ্রিঃ ) ইউরোপে ইঙ্গ-ফরাসি বিরোধ মিটে গেলে ফরাসিরা টিপুর পক্ষ ত্যাগ করে । শেষ পর্যন্ত ১১ মার্চ, ১৭৮৪ খ্রিঃ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ও টিপু সুলতানের মধ্যে স্বাক্ষরিত হয় ‘ম্যাঙ্গালোরের সন্ধি ‘ । এই সন্ধি দ্বারা দ্বিতীয় ইঙ্গ-মহীশূর যুদ্ধের অবসান ঘটে ।
ম্যাঙ্গালোরের সন্ধির শর্ত অনুযায়ী , উভয়ে পরস্পরের বিজিত স্থানগুলি ও যুদ্ধবন্দি প্রত্যর্পণ করে । তবে এই যুদ্ধ দ্বারা প্রমাণিত হয় যে , ইংরেজের সেনাবাহিনী ভারতীয় বাহিনীর তুলনায় উন্নত এবং পারদর্শী ।