ইতিহাস

প্রথম ইঙ্গ-মহীশূর যুদ্ধ

প্রথম ইঙ্গ-মহীশূর যুদ্ধ

১৭৬০ খ্রিস্টাব্দে হায়দার আলি মহীশূরের সর্বময় ক্ষমতা লাভ করেন । তিনি উপলব্ধি করেন যে , সামরিক শক্তিই ক্ষমতা লাভের একমাত্র উপায় । তাই ফরাসি সেনাপতিদের সহায়তায় তিনি মহীশুরের সৈন্যদলকে পাশ্চাত্য কৌশলে তালিম দেন এবং বাকি সেনাদের পটু অশ্বারোহী ও পদাতিকে পরিণত করেন । দক্ষিণে মারাঠা যুদ্ধ ও ইঙ্গ-ফরাসি যুদ্ধের সুযোগে তিনি সেবা , বেদনুর ও গুটি দখল করেন । ১৭৬৫ খ্রিস্টাব্দে তিনি মালাবার ও কুর্গ অধিকার করে নিজের শক্তি বৃদ্ধি করেন । এদিকে মারাঠাদের গৃহ বিবাদের সুযোগে তিনি পেশোয়ার রাজ্যের কিছু অঞ্চল দখল করেন । হায়দারের ক্ষমতা বৃদ্ধিতে ইংরেজরা শঙ্কিত হয় ।

অন্যদিকে ইঙ্গ-ফরাসি যুদ্ধের সময় হায়দার ইংরেজদের বিরুদ্ধে ফরাসিদের অশ্বারোহী সৈন্য দিয়ে সাহায্য করেন । এতে ইংরেজরা ক্রুদ্ধ হয় । হায়দার আলি ছিলেন সাহসী এবং বিচক্ষণ । তিনি উপলব্ধি করতে পারেন যে , ক্ষমতালোভী ইংরেজ মহীশূরের স্বাধীনতাকে সহ্য করবে না । সুযোগ পেলেই তারা মহীশূরকে ধ্বংস করবে । তাই তিনিই ইংরেজের বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি শুরু করেন । 

প্রথমে তিনি কৌশলে মারাঠা ও নিজামকে ইংরেজের কাছ থেকে সরিয়ে আনেন । এরপর হায়দার ও নিজামের মিলিত বাহিনী ইংরেজ অধিকৃত কর্ণাটক আক্রমণ করে । এইভাবে শুরু হয় প্রথম ইঙ্গ-মহীশূর যুদ্ধ ( ১৭৬৭-৬৯ খ্রি. ) । 

মাদ্রাজের সন্ধি

ত্রিনোমালির যুদ্ধে পরাজিত হলেও হায়দার নতুন উদ্যমে যুদ্ধ করে ম্যাঙ্গালোর পুনরুদ্ধার করেন । কিন্তু ইংরেজ সেনাপতি স্মিথের দক্ষতার জন্য তিনি চূড়ান্ত জয়লাভ থেকে বঞ্চিত হন । তারপর হায়দার আলি তাঁর সুদক্ষ ও ক্ষিপ্র গতি সম্পন্ন অশ্বারোহী বাহিনীর সাহায্যে ইংরেজ প্রতিরোধ ভেঙে মাদ্রাজের উপকণ্ঠে উপস্থিত হন ( ১৭৬৯ খ্রি. ) । মাদ্রাজের পতন আসন্ন বুঝতে পেরে শঙ্কিত ইংরেজ মহীশুরের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করতে বাধ্য হয় । ১৭৬৯ খ্রিস্টাব্দে ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সঙ্গে মহীশুরের শাসক হায়দার আলী মাদ্রাজের সন্ধি স্বাক্ষরিত হয় । 

মাদ্রাজের সন্ধির শর্ত অনুযায়ী -( i ) উভয়ে পরস্পরের দখল করা অঞ্চল ফিরিয়ে দেবে ; ( ii ) ভবিষ্যতে কোনো তৃতীয় শক্তি মহীশুর আক্রমণ করলে ইংরেজ মহীশূরকে সৈন্য সাহায্য করবে । এইভাবে প্রথম ইঙ্গ মহীশূর যুদ্ধ শেষ হয় ।

error: Content is protected !!