বেসিনের সন্ধি
বেসিনের সন্ধি
১৮০০ খ্রিস্টাব্দে নানা ফড়নবিশ এর মৃত্যুর পর মহারাষ্ট্রের ভাগ্য এক শ্রেণির উদ্ধত , ক্ষমতালোভী , অদূরদর্শী, অবিবেচক যুব নেতার হাতে পড়ে । ফলে মহারাষ্ট্রে গৃহবিবাদের সূচনা হয় । যশোবন্ত রাও হোলকার ও দৌলত রাও সিন্ধিয়ার মধ্যে বিরোধ বাধলে পেশোয়া দ্বিতীয় বাজীরাও সিন্ধিয়ার পক্ষ নেন । এতে ক্রুদ্ধ হয়ে হোলকার দ্বিতীয় বাজীরাওকে আক্রমণ করলে পেশোয়া ইংরেজের সাহায্যপ্রার্থী হন , এমতাবস্থায় পেশোয়া দ্বিতীয় বাজীরাও ও লর্ড ওয়েলেসলির মধ্যে স্বাক্ষরিত হয় ‘ বেসিনের সন্ধি ’ ( ১৮০২ খ্রি . ) ।
বেসিনের সন্ধির শর্ত
এই সন্ধির শর্ত অনুযায়ী 一
( ১ ) ইংরেজগণ বাজীরাওকে পেশোয়া পদে বসতে সাহায্য করবে । এরফলে তিনি বৈদেশিক নীতি নিয়ন্ত্রণের অধিকার পান ।
( ২ ) এই সাহায্যের ব্যয় নির্বাহের জন্য পেশোয়া তাঁর রাজ্যের একাংশ ইংরেজদের দান করবেন ।
( ৩ ) ইংরেজদের অনুমতি ছাড়া পেশোয়া কোনো শক্তির সাথে সন্ধি করতে পারবেন না ।
( ৪ ) মারাঠা সর্দারদের সাথে বিরোধের মীমাংসার জন্য পেশোয়া ইংরেজের মধ্যস্থতা মানতে বাধ্য থাকবেন ।
( ৫ ) পেশোয়ার রাজ্যে তাঁরই খরচে ইংরেজ বাহিনী মোতায়েন থাকবে ইত্যাদি ।
( ৬ ) ইংরেজদের অনুমতি ছাড়া সেনাবিভাগে অন্যান্য ইউরোপীয়দের নিয়োগ করা যাবে না ।
এইভাবে পেশোয়া দ্বিতীয় বাজীরাও ওয়েলেসলির অধীনতামূলক মিত্রতা নীতি মেনে নিয়ে মারাঠাদের স্বাধীনতা বিকিয়ে দেন ।
বেসিনের সন্ধির গুরুত্ব বা ফলাফল
( i ) পেশোয়া শাসনকার্যের ব্যাপারে ইংরেজের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েন ।
( ii ) পেশোয়া কোম্পানির বিনা অনুমতিতে অন্য কোনো শক্তির সঙ্গে মিত্রতা না করার অঙ্গীকার করেন ।
( iii ) ভারতের রাজনৈতিক শক্তির কেন্দ্র হিসেবে মারাঠা জাতির উত্থানের সম্ভাবনা বিনষ্ট হয় ।
( iv ) সন্ধির জাল থেকে বেরিয়ে আসার জন্য মারাঠারা যুদ্ধে জড়িয়ে পড়তে বাধ্য হয় এবং পরিণামে মারাঠা শক্তির চূড়ান্ত পতন ঘটে । ঐতিহাসিক এডওয়ার্ডস এর মতে , বেসিনের সন্ধির ফলে ভারতের ব্রিটিশ সাম্রাজ্য ভারতীয় ব্রিটিশ সাম্রাজ্যে পরিণত হয় ( By the Treaty of Bassien , the British Empire in India became the British Empire of India ) ।