সলবাই এর সন্ধি
সলবাই এর সন্ধি
ইঙ্গ-মারাঠা যুদ্ধে নানা ফড়নবিশ মহীশূরের রাজাকে মারাঠাদের পক্ষে আনতে সক্ষম হলে ইংরেজবাহিনী পুনা অভিমুখে অগ্রসর হলে মহাদজী সিন্ধিয়া তেলিগাঁও নামক স্থানে ইংরেজদের বাধা দেন । তেলিগাঁও -এর যুদ্ধে ( ১৭৭৯ খ্রিঃ ) পরাজিত হয়ে ইংরেজগণ ওয়াড়গাঁও -এর সন্ধি স্বাক্ষর করতে বাধ্য হয় ।
কিন্তু ওয়ারেন হেস্টিংস এই অপমানজনক সন্ধি মানতে অস্বীকার করেন এবং বাংলা থেকে গোডার্ড এর নেতৃত্বে নতুন বাহিনী প্রেরণ করেন । প্রাথমিকভাবে সাফল্য লাভ করলেও শেষ পর্যন্ত গোডার্ড মারাঠাদের হাতে পরাজিত হন । অতঃপর ইংরেজ বাহিনী সিন্ধিয়ার রাজধানী গোয়ালিয়র দখল করতে সক্ষম হয় । শেষ পর্যন্ত এই দীর্ঘস্থায়ী ও ফলহীন যুদ্ধ শেষ করার জন্য উভয় পক্ষের আগ্রহ দেখা দেয় । মহাদজী সিন্ধিয়ার মধ্যস্থতায় সলবাই এর সন্ধি ( ১৭৮২ খ্রিঃ ) স্বাক্ষরিত হয় মারাঠা নেতা নানা ফড়নবিশ এবং ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির মধ্যে । এই সন্ধির দ্বারা প্রথম ইঙ্গ-মারাঠা যুদ্ধের সমাপ্তি ঘটে ।
সলবাই এর সন্ধির শর্ত
সলবাই সন্ধির শর্তানুযায়ী –
( ১ ) ইংরেজগণ সমস্ত বিজিত অঞ্চল মারাঠাদের ফিরিয়ে দেয় ।
( ২ ) ইংরেজগণ সলসেট ও থানা অঞ্চল বা ব্রোচ অঞ্চল লাভ করে ।
( ৩ ) দ্বিতীয় মাধব রাও পেশোয়া রূপে স্বীকৃত হন ।
( ৪ ) রঘুনাথ রাওকে বার্ষিক ভাতা দানের ব্যবস্থা করা হয় ।
উভয়পক্ষ যাতে সন্ধির শর্তাবলী মান্য করে , তা দেখার দায়িত্ত্ব পান মহাদজী সিন্ধিয়া।
সলবাইয়ের সন্ধি গুরুত্ব
ঐতিহাসিক পার্সিভ্যাল স্পিয়ার এর মতে , প্রথম মারাঠা যুদ্ধের সূচনা ছিল অনাবশ্যক এবং পরিচালনা ছিল দুর্ভাগ্যজনক। কিন্তু এই যুদ্ধের ফল ছিল গুরুত্বপূর্ণ।
( i ) হেস্টিংসের মারাঠা নীতি ফলপ্রসূ হয়নি । শুধুমাত্র সলসেট ও ব্রোচ ছাড়া ইংরেজদের কিছু লাভ হয়নি । বরং যথেষ্ট আর্থিক ক্ষতি হয় । এই আর্থিক সঙ্কট দূর করার জন্য হেস্টিংসকে বহু অবৈধ উপায় গ্রহণ করতে হয় ।
( ii ) সলবাই এর সন্ধির ফলে পরবর্তী কুড়ি বছর ইংরেজ ও মারাঠাদের মধ্যে কোনো সংঘর্ষ হয়নি ।
( iii ) এই সুযোগে ইংরেজরা ভারতের অন্যান্য শক্তিকে পরাস্ত করতে পেরেছিল । তাই লুয়ার্ড এই সন্ধিকে ইংরেজের কূটনৈতিক জয় বলে বর্ণনা করেছেন । স্মিথও মনে করেন , সলবাই এর সন্ধি ভারতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের পথ প্রশস্ত করেছিল ।