ইতিহাস

সুরাটের সন্ধি

সুরাটের সন্ধি

মাধব রাও -এর মৃত্যুর পর তাঁর ভাই নারায়ণ রাও পেশোয়া হন । কিন্তু তাঁর পিতার ভ্রাতা রঘুনাথ রাও বা রাঘোবা পেশোয়া পদ দখলে উদ্যত ছিলেন । তাঁর চক্রান্তে এক গুপ্তঘাতকের হাতে পেশোয়া নারায়ণ রাও নিহত হলে রঘুনাথ রাও নিজেকে পেশোয়া বলে ঘোষণা করেন । অধিকাংশ মারাঠা সর্দারই রঘুনাথ-এর আচরণে অসন্তুষ্ট ছিলেন । নানা ফড়নবিশ-সহ ওইসব বিক্ষুব্ধ মারাঠা সর্দার রাঘোবা’র বিরুদ্ধাচারণ করতে থাকেন । ইতিমধ্যে নিহত পেশোয়া নারায়ণ রাও-এর পত্নী একটি পুত্র সন্তান প্রসব করেন । নানা ফড়নবিশ প্রমুখ ওই সদ্যোজাত বালককে মাধব রাও নারায়ণ ( বা দ্বিতীয় মাধব রাও ) নাম দিয়ে প্রকৃত পেশোয়া বলে দাবি করেন । নানা ফড়নবিশ তাঁর অভিভাবক রূপে নিযুক্ত হন । 

এই ঘটনায় রঘুনাথ রাও অত্যন্ত বিচলিত হয়ে পড়েন । জাতীয় ঐতিহ্যের কথা ভুলে তিনি পেশোয়া পদকে নিজ কুক্ষিগত রাখার জন্য শেষ পর্যন্ত ইংরেজের সাহায্যপ্রার্থী হন । তিনি যোগাযোগ করেন পুনের ব্রিটিশ রেসিডেন্টের সঙ্গে । বোম্বাই -এর ইংরেজ কর্তৃপক্ষও মারাঠাদের গৃহ বিবাদের সুযোগে ওই অঞ্চলে ক্ষমতা বৃদ্ধিতে আগ্রহী ছিল । তাই এই সুযোগ তাঁরা লুফে নেয় এবং রঘুনাথ রাও এর সাথে ‘ সুরাটের সন্ধি ’ স্বাক্ষর করে ( ১৭৭৫ খ্রিঃ ) । 

সুরাটের সন্ধি অনুযায়ী ইংরেজগণ রঘুনাথকে পেশোয়া পদে বসবার প্রতিশ্রুতি দেয় । বিনিময়ে পেশোয়া সলসেট ও বেসিন নামক দুটি স্থান এবং সুরাট ও ভারুচের রাজস্ব কোম্পানিকে ছেড়ে দিতে রাজি হলেন । রঘুনাথ কর্তৃক ইংরেজদের সাহায্য গ্রহণে মারাঠা সর্দারেরা হতবাক হলেও ভেঙে পড়লেন না । নানা ফড়নবিশ , সিন্ধিয়া , ভোঁসলে প্রমুখ মারাঠা সর্দারগণ দ্বিতীয় মাধব রাও -এর পক্ষ সমর্থন করে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হলেন । কিন্তু আরাসের ( Arras ) যুদ্ধে মারাঠা বাহিনী পরাজিত হয় । পেশোয়া মাধব রাও সহ মারাঠা সর্দারেরা পুরন্দরের দুর্গে আশ্রয় নেন । তখন ইংরেজরা রঘুনাথকে পেশোয়া বলে ঘোষণা করে ।

error: Content is protected !!