পেশোয়া বালাজি বিশ্বনাথ
পেশোয়া বালাজি বিশ্বনাথ
মারাঠা গৃহযুদ্ধের কালে পেশোয়া বালাজী বিশ্বনাথের নেতৃত্বে মারাঠা রাজ্যে এক নতুন ধরনের শাসন ব্যবস্থার উদ্ভব ঘটেছিল । এই ব্যবস্থায় সমস্ত প্রশাসনিক ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত হয়েছিল পেশোয়ার হাতে । এখান থেকেই পেশোয়া তন্ত্রের উদ্ভব । প্রথম পেশোয়া বালাজী বিশ্বনাথ নিজ দক্ষতা , কর্মদ্যোগ ও কূটনীতির দ্বারা নিজ ক্ষমতাকে সুপ্রতিষ্ঠিত করেন ।
দিল্লির সাথে চুক্তি
কূটনীতি প্রয়োগে বালাজী বিশ্বনাথের বিশেষ দক্ষতা ছিল । মুঘলদের স্বার্থহানির মধ্যেই মারাঠাদের স্বার্থবৃদ্ধির সম্ভাবনা লুকিয়েছিল । বিচক্ষণ বালাজী বিশ্বনাথ অত্যন্ত দক্ষতার সাথে এই পরিস্থিতির মোকাবিলা করেন । তখন দিল্লির রাজনীতিতে সৈয়দ ভ্রাতৃদ্বয় অপ্রতিদ্বন্দ্বী ক্ষমতার অধিকারী । সম্রাট তাদের হাতের পুতুল মাত্র । যাই হোক , বিশ্বনাথ সৈয়দ হুসেন আলির সাথে এক চুক্তি স্বাক্ষর করে ( ১৭১৪ খ্রিঃ ) নিজের গৌরব মুকুটে একটা নতুন পালক যোগ করেন । এই চুক্তি দ্বারা –
( ১ ) শিবাজীর স্বরাজ্য শাহু ফিরে পান ,
( ২ ) খান্দেশ , গণ্ডোয়ানা , হায়দ্রাবাদ , বেরার , কর্ণাটক প্রভৃতি পূর্ব অধিকৃত স্থানে শাহুর কর্তৃত্ব অনুমোদিত হয় ।
( ৩ ) দাক্ষিণাত্যের ছয়টি সুবা’র ‘ চৌথ ’ ও ‘ সরদেশমুখী ’ আদায় করার অধিকার শাহু লাভ করেন ,
( ৪ ) প্রতিদানে শাহু মুঘল সম্রাটের সার্বভৌমত্ব মেনে নেন এবং সম্রাটকে বাৎসরিক দশ লক্ষ টাকা এবং বিদ্রোহ দমনের জন্য পনেরো হাজার অশ্বারোহী সৈন্য দিয়ে সাহায্য করতে সম্মত হন ।
স্যার রিচার্ড টেম্পল ( R. Tample ) এই চুক্তিকে ‘ মারাঠা শক্তির মহাবিজয় ’ বলে উল্লেখ করে বলেছেন , “ এটি মারাঠা জাতির অভ্যুত্থানের এক অনন্য নজির । ” বস্তুত এই চুক্তির দ্বারা দাক্ষিণাত্যে মারাঠাদের সার্বভৌম কর্তৃত্ব দিল্লির অনুমোদন পেয়ে যায় । পরন্তু মারাঠাদের অর্থে পনেরো হাজার অশ্বারোহী পোষণ করার ফলে বাদশাহ মারাঠাদের উপর অনেকটা নির্ভরশীল হয়ে পড়েন । মারাঠাগণ দিল্লির রাজনীতিতে অংশগ্রহণেরও সুযোগ পেয়ে যায় । বালাজী বিশ্বনাথের দুরদর্শিতা ও বিচক্ষণতার জয় ঘোষণা করে এই চুক্তি ।
ভ্রান্ত সিদ্ধান্ত
‘ চৌথ ‘ ও ‘ সরদেশমুখী ‘ আদায়ের জন্য বালাজী বিশ্বনাথ এক একটা অঞ্চল এক একজন মারাঠা সর্দারকে নির্দিষ্ট করে দিয়েছিলেন । এই এলাকা ভাগের কর্তৃত্ব ছিল সম্পূর্ণভাবে পেশোয়ার হাতে । ফলে মারাঠা সর্দারেরা অনুগ্রহ লাভের জন্য ক্রমশ পেশোয়ার নেতৃত্ব মেনে নিচ্ছিল । অবশ্য পরিণামে এই অবস্থা মারাঠা শক্তির দুর্বলতার অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল । ‘ ওয়াতন ’ ও ‘ সরঞ্জাম ’ ( জায়গির ) প্রথা মারাঠা সর্দারদের মধ্যে স্বাধীনতাবোধ বাড়িয়ে তুলেছিল । দূরদুরান্তের মারাঠা সর্দারের মধ্যে রাজা বা পেশোয়া’র কর্তৃত্ব অস্বীকার করার প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছিল । মারাঠাদের কেন্দ্রীয় শক্তি এই প্রবণতা ও বিচ্ছিন্নতা দমন করতে ব্যর্থ হয়েছিল । পরিণামে বহু সর্দার শত্রুপক্ষে যোগদান করে মারাঠা সাম্রাজ্যের পতন ডেকে এনেছিল ।