ইতিহাস

১৮৫৩ সালের সনদ আইন

১৮৫৩ সালের সনদ আইন

১৮৫৩ খ্রিস্টাব্দে শেষবারের জন্য সনদ আইন বা চার্টার অ্যাক্ট পাস করা হয় । এই আইনে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ধারা সংযোজিত হয়েছিল । যথা—

( ১ ) বাংলার জন্য একটি স্বতন্ত্র লেফটেন্যান্ট গভর্নর-এর পদ সৃষ্টি করা হয় ।

( ২ ) আইন-সদস্যকে গভর্নর জেনারেল -এর কাউন্সিলের পূর্ণ সদস্য রূপে পরিগণিত করা হয় ।

( ৩ ) প্রথম চারজন ছাড়াও ভারতের প্রধান সেনাপতি , প্রধান বিচারপতি , অন্য একজন বিচারপতি , চারটি প্রদেশের একজন করে প্রতিনিধিকে নিয়ে মোট বারো জনকে গভর্নর জেনারেলের কাউন্সিলের সদস্য করা হয় ।

( ৪ ) আইন প্রণয়নের জন্য একটি আইন পরিষদ গঠন করা হয় । স্থির হয় , গভর্নর জেনারেলের অনুমতি ছাড়া কোনো আইন প্রণয়ন করা চলবে না । গভর্নর জেনারেলের প্রয়োজনে যে-কোনো আইনকে বাতিল ঘোষণা করতে পারবেন ।

( ৫ ) কোম্পানির কর্মচারী মনোনয়নের জন্য একটি প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হয় । ফলে ডাইরেক্টর সভার ক্ষমতা হ্রাস পায় ।

( ৬ ) ডাইরেক্টর সভা নতুন প্রেসিডেন্সি গঠনের বা পুরোনো প্রেসিডেন্সির সীমানা পুনর্নির্ধারণের ক্ষমতা লাভ করে ।

( ৭ ) ডাইরেক্টরের সদস্য সংখ্যা করা হয় ১৮ জন । এদের মধ্যে ৬ জন ইংল্যান্ডের রাজা বা রানি কর্তৃক মনোনীত হবেন ।

নানা বিচারে ১৮৫৩ -র সনদ আইন গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত হয় । অনেকের মতে , এই আইন দ্বারা সর্বপ্রথম ভারতে সাংবিধানিক শাসনের সূচনা ঘটেছিল । আইন বিভাগ ও শাসন বিভাগকে পৃথকীকরণের দৃষ্টান্তও এই আইন স্থাপন করেছিল । তবে এই আইনের প্রধান ত্রুটি ছিল এই যে , আইন পরিষদে কোনো ভারতীয়কে সদস্য করা হয়নি । ফলে সরকার ও আইন প্রণেতাদের সাথে সাধারণ ভারতবাসীর একটা ব্যবধান থেকে গিয়েছিল । ভারতবাসীর ক্ষোভ বা চাহিদা সম্পর্কে সরকার অন্ধকারেই থেকে গিয়েছিল ।

এইভাবে প্রতি কুড়ি বছর অন্তর সনদ আইন বা চার্টার অ্যাক্ট ( Charter Act ) পাস করে ব্রিটিশ সরকার ভারতে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির গঠনতন্ত্র এবং শাসন পদ্ধতির উপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ এবং পরিবর্তন সাধন করেছিল ।

error: Content is protected !!