জাহান্দার শাহ
জাহান্দার শাহ
বাহাদুর শাহের প্রথম পুত্র জাহান্দার শাহ তার তিন ভ্রাতা আজিম উস সান , জাহান শাহ ও রফি উস্ শান -কে হত্যা করে মসনদ দখল করেন । এই সময় থেকেই মুঘল রাজনীতিতে একটি নতুন বৈশিষ্ট্য দেখা যায় ৷ অতঃপর কেবল রাজরক্ত সম্পর্কিত ব্যক্তিরাই নন , দরবারের প্রতিপত্তিশালী আমির ওমরাহগণও বাদশাহ নির্বাচনে ও প্রশাসনে সক্রিয় ভূমিকা নিতে শুরু করেন ।
অযোগ্য জাহান্দারের প্রধান পরিচালক ছিলেন তার প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার খান্ । জাহান্দার ছিলেন দুর্বলচিত্ত ও মাদকাশক্ত । তাঁর অপদার্থতার সুযোগে জুলফিকার খানই মুঘল সাম্রাজ্যের সর্বেসর্বা হয়ে ওঠেন । জুলফিকার ছিলেন কর্মদক্ষ ও বুদ্ধিমান । তিনি একটি নতুন সাংবিধানিক নীতি প্রবর্তন করেন । তা হল বাদশাহ রাজত্ব করবেন এবং উজির শাসনকার্য পরিচালনা করবেন । তিনি রাজপুত , জাঠ , মারাঠা , বুন্দেলা , শিখ সহ সমস্ত হিন্দু রাজ্যগুলির সাথে মৈত্রী গড়ে তুলে সাম্রাজ্যের ভিত্তিকে সুদৃঢ় করেন । তবে তিনি ‘ ইজারা ’ প্রথার ব্যাপক প্রয়োগ করে কৃষকদের দুর্দশা বৃদ্ধি করেন । ইতিপূর্বে টোডরমলের ‘ জাবতি প্রথা ’ অনুযায়ী সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে একটা নির্দিষ্ট রাজস্ব আদায় করা হত ।
মধ্যস্বত্বভোগীদের দ্বারা কৃষকেরা শোষিত হত না । কিন্তু জমিদারদের ইজারাদানের ফলে কৃষকদের উপর নির্যাতন ও পীড়ন অনিবার্য হয়ে দাঁড়ায় । ফলে তার উপর কৃষকেরা অসন্তুষ্ট হয় । আবার বাড়তি জায়গির না পাবার জন্য অভিজাতরাও জুলফিকার খানের উপর রুষ্ট হয় । এদিকে সম্রাট প্রকাশ্যে তার উজিরের বিরুদ্ধাচরণ করতে সাহসী না হলেও , উজিরের ক্ষমতা বৃদ্ধিতে তিনি ক্রমেই ঈর্ষান্বিত ও শঙ্কিত হতে থাকেন । তাই স্বয়ং সম্রাট জুলফিকারের বিরুদ্ধে হীন ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হন এবং নিজেরও বিপদ ডেকে আনেন ।