প্রথম বাহাদুর শাহ
প্রথম বাহাদুর শাহ
ছাপ্পান্ন বছর বয়স্ক সম্রাট বাহাদুর ছিলেন বিদ্যোৎসাহী , আত্মমর্যাদা সম্পন্ন ও দক্ষ প্রশাসক । রাজ্যশাসনের ক্ষেত্রে তিনি ঔরঙ্গজেবের গোঁড়ামি ও পক্ষপাতমুলক নীতি বর্জন করে পারস্পরিক সমঝোতা ও সহযোগিতার নীতি গ্রহণ করেন । তাঁর ব্যবহারে হিন্দু সম্প্রদায়ের মনে সরকারের প্রতি আস্থা ফিরে আসে । রাজত্বের প্রথমদিকে তিনি যুদ্ধ দ্বারা অম্বর ও মাড়োয়ার -এর রাজপুত রাজ্য দুটিকে দখল করার চেষ্টা করেছিলেন । কিন্তু শীঘ্রই তিনি রাজপুত মৈত্রীর গুরুত্ব অনুধাবন করতে সক্ষম হন এবং এই দুটি রাজ্যের সাথে আপস মীমাংসা করে নেন । শিখ ও মারাঠা শক্তিকে দমন করার জন্য তিনি সমঝোতা ও যুদ্ধ এই দ্বিবিধ নীতি অনুসরণ করেছিলেন । গুরু গোবিন্দ সিংহকে যথাযোগ্য স্বীকৃতি প্রদান করে বাহাদুর শাহ শিখ জাতির বৈরিতা অনেকখানি হ্রাস করতে সক্ষম হয়েছিলেন ।
গুরু গোবিন্দের মৃত্যুর পর বান্দা বাহাদুর পুনরায় মুঘল বিরোধিতা শুরু করলে বাহাদুর শাহ কঠোর হাতে তা দমনের চেষ্টা করেন । লোহাগড় -সহ বহু শিখ দুর্গ তিনি দখল করে নেন । মারাঠা সর্দারদের অযৌক্তিক দাবি তিনি মানতে অস্বীকার করেন । শাহুকে তিনি শিবাজীর ন্যায়সংগত উত্তরাধিকার রূপে স্বীকৃতি দেননি । বুন্দেলরাজ ছত্রশাল এবং জাঠ নেতা চূড়ামনের সাথে মিত্রতা স্থাপন করে তিনি দুরদৃষ্টির পরিচয় দেন ।
ঐতিহাসিক পার্সিভ্যাল স্পীয়ার এর মতে , বাহাদুর শাহ ছিলেন তৈমুর বংশের উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্ব । তিনি মুঘল সাম্রাজ্যের সীমা সুরক্ষা করেছেন এবং ধর্মীয় উদারতার দ্বারা ঔরঙ্গজেবের আমলের ধর্মীয় বিভেদ ও বিদ্বেষ হ্রাস করেছেন সফল ভাবে । তাঁর রাজত্বকালে কোনো মন্দির ধ্বংস বা জোরপূর্বক ধর্মান্তকরণের ঘটনা ঘটেনি ; কিন্তু তবুও মুঘল সাম্রাজ্যের অবক্ষয়ের শরিক হিসেবে তার দুর্বলতা ও ভ্রান্তিগুলি উল্লেখযোগ্য । যেমন শিথিল শাসনব্যবস্থাকে সুদৃঢ় করার কোনো উদ্যোগ তিনি নেননি , পরক্ত মন্ত্রী জুলফিকার খাঁ’কে বেশি গুরুত্ব প্রদান করে কেন্দ্রীভূত প্রশাসনের মূল ভিতকেই দুর্বল করেছেন । অভিজাতদের সন্তুষ্ট করার জন্য বেহিসেবি জায়গির প্রদান করে তিনি রাজকোষকে সম্পূর্ণ পঙ্গু করে তুলেছেন । ফলে ১৭১২ খ্রিস্টাব্দে তাঁর মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে আবার ভ্রাতৃদ্বন্দ্বে মুঘল রাজনীতি অস্থির হয়ে ওঠে ।