সভা ও সমিতি কাকে বলে
সভা ও সমিতি কাকে বলে
রাজশক্তির দ্রুত বিস্তারকে সীমাবদ্ধ রাখা হয়েছিল ‘ সভা ‘ ও ‘ সমিতি ‘ নামক দু’টি উপজাতীয় পরিষদের মাধ্যমে । সম্ভবত সভা ছিল উপজাতীয় বয়োবৃদ্ধদের সমাবেশ এবং সমিতিতে অংশ নিত গোষ্ঠীর সমস্ত মানুষ । রোমিলা থাপারের মতে , এমন বহু উপজাতি গোষ্ঠী ছিল , যাদের কোন রাজা ছিল না । সেক্ষেত্রে উপরিলিখিত সংস্থা দুটিই শাসনকাজ পরিচালনা করত । যুদ্ধে দক্ষতা প্রদর্শন এবং নিজ গোষ্ঠীকে রক্ষা করায় সাফল্যের উপর রাজার স্থায়িত্ব নির্ভর করত । পরবর্তীকালে রাজার উপর দেবত্ব আরোপ করা হয় । মানুষ ও দেবতার যোগসূত্র হিসেবে পুরোহিত শ্রেণীর গুরুত্ব বৃদ্ধি পায় । এইভাবে রাজা ও পুরোহিতের মধ্যে পারস্পরিক নির্ভরতার সূচনা ঘটে । ঋকবেদে সভাকে ‘ গ্রাম্য পরিষদ ‘এবং সমিতিকে ‘ জন পরিষদ ‘ বলে অভিহিত করা হয়েছে । সভার তুলনায় সমিতি আকারে এবং ক্ষমতায় বড় ছিল ।
ড. রমেশচন্দ্র মজুমদার সভা ও সমিতিকে যথাক্রমে ‘ স্থানীয় পরিষদ ’ এবং ‘ কেন্দ্রীয় পরিষদ ‘ বলে বর্ণনা করেছেন । তবে সমিতির ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব সম্পর্কে সবাই একমত । প্রথমদিকে সমিতি সর্বোচ্চ রাজনৈতিক ক্ষমতা ভোগ করত এবং রাজা সমিতির নিয়ন্ত্রণাধীনে থাকতে বাধ্য হতেন ।
আল্তেকর ( Altekar ) দেখিয়েছেন যে , সমিতির কাছে জবাবদিহি করতে রাজার জীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠত । অবশ্য পরবর্তীকালে রাজা সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী হয়ে ওঠেন । রাজা রাষ্ট্র পরিচালনার নানা গুরুত্বপূর্ণ কাজে এই দুটি সভার মতামত গ্রহণ করতেন । সাধারণত রাজাগণ উত্তরাধিকারসূত্রে সিংহাসনে বসতেন । তবে ঐ যুগে প্রজাতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থারও কিছু কিছু উল্লেখ পাওয়া গিয়েছে । ওগুলি ছিল নিয়মতান্ত্রিক রাজতন্ত্র , এবং প্রজাগণই রাজাকে মনোনীত করত । ঐ সমস্ত গণরাজ্যগুলিকে বলা হত ‘ গণ ’ এবং শাসকের উপাধি ছিল ‘ গণপতি ’ বা ‘ গণজ্যেষ্ঠ ’।