ইতিহাস

প্রাচীন ভারতের ইতিহাস রচনায় বৈদেশিক বিবরণ

Contents

প্রাচীন ভারতের ইতিহাস রচনায় বৈদেশিক বিবরণ

বিদেশী লেখক ও পর্যটকদের বিবরণ থেকে প্রাচীন ভারত  ইতিহাসের বহু মূল্যবান উপাদান পাওয়া যায় । প্রাচীনকালে আগত বিদেশী পর্যটকদের মধ্যে গ্রীক , চৈনিক ও মুসলমানদের অবদান ছিল সর্বাধিক । তবে বিদেশীদের রচনা থেকে ঐতিহাসিক তথ্যসংগ্রহের ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বনের দরকার আছে । কারণ এদের অধিকাংশই ভারতের ভাষা জানতেন না , বা ভারতের রীতি-নীতির সাথে পরিচিত ছিলেন না । আবার অনেকে ভারতে না এসেই অপরের লেখা ও প্রতিবেদনের ভিত্তিতে পুস্তক রচনা করেছেন ।

স্বভাবতই , এ ধরনের রচনায় ঘটনার আতিশয্য বা ভ্রান্ত ব্যাখ্যার সম্ভাবনা থাকে । যাই হোক , প্রাচীন ভারতের সামাজিক , রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক জীবন এবং ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান সংক্রান্ত বহু তথ্য এইসব বিবরণ থেকে পাওয়া যায় ।

গ্রীক বিবরণ

গ্রীক ঐতিহাসিক হেরোডোটাস ও টেসিয়াস এর গ্রন্থ থেকে উত্তর পশ্চিম ভারতে পারসিক আক্রমণের বিবরণ পাওয়া যায় । অবশ্য এরা ভারতে আসেননি । জনশ্রুতির ভিত্তিতেই ইতিহাস রচনা করেছেন । আলেকজান্ডারের ভারত আক্রমণ সংক্রান্ত বিবরণ কোনও ভারতীয় রচনায় পাওয়া যায় না । আলেকজান্ডারের সঙ্গে আগত এরিস্টবুলাস , ওনোসক্রেটিস প্রমুখ অনুচরদের রচনা থেকেই এ বিষয়ে জানা যায় ।

তাছাড়া ডায়োডোরাস , আরিয়ান , প্লুটার্ক , কার্টিয়াস প্রমুখ লেখকদের গ্রন্থ থেকে আলেকজাণ্ডারের ভারত আক্রমণের কাহিনী ও সমকালীন ভারতের রাজনৈতিক চিত্র পাওয়া যায় । চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের রাজসভায় আগত গ্রীকদূত মেগাস্থিনিস – রচিত ‘ ইন্ডিকা ‘ ( Indica ) গ্রন্থ থেকে মৌর্যযুগের বিস্তৃত বিবরণ পাওয়া যায় । অবশ্য মূল’ ইন্ডিকা ‘ গ্রন্থটি পাওয়া যায়নি । এ ছাড়া , ডাইমেকসডাইওনিসাস এর দেওয়া তথ্য থেকেও ভারত সম্পর্কে বহু বিষয় জানা যায় । এই অজ্ঞাতনামা গ্রীক লেখক ‘ পেরিপ্লাস অফ দি এরিথ্রিয়ান সী ‘ নামক গ্রন্থে ভারতের সামুদ্রিক কার্যকলাপ ও ব্যবসা বাণিজ্য সম্পর্কে বহু অজানা তথ্য লিপিবদ্ধ করেছেন । টলেমীর ‘ভূগোল ‘ এবং প্লিনির ‘ বিবরণ ‘ থেকেও ভারতের বহু অজ্ঞাত বিষয় জানা যায় ।

চৈনিক বিবরণ

মৌর্য পরবর্তী ভারতের বহু মূল্যবান তথ্য চৈনিক লেখক ও পরিব্রাজকদের বিবরণ থেকেও ভারতের বহু অজ্ঞাত বিষয় জানা যায় । সু- মা- কিয়েন খ্রীঃ পূঃ প্রথম শতকে রচিত তার ‘ ইতিহাস ‘ গ্রন্থে ভারত সম্পর্কে বহু মূল্যবান তথ্য উল্লেখ করেছেন । এঁকে ‘ চীনের হেরোডোটাস ‘ বলা হয় । চীনা পরিব্রাজক ফা- হিয়েন গুপ্তসম্রাট দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্তের আমলে ভারতে আসেন । তিনি তার ‘ ফো-কুয়ো- কিং ‘ গ্রন্থে ভারত সংক্রান্ত বই তথ্য পরিবেশন করেছেন । হর্ষবর্ধনের রাজত্বকালে ভারত পরিভ্রমণে আসেন হিউয়েন সাং । তার রচিত ‘ সে- ইউ-কাই ‘ গ্রন্থ থেকে সমসাময়িক ভারত ও ভারতবাসী সম্পর্কে বহু সংবাদ জানা যায় । এছাড়া ই- সিং -এর বিবরণ থেকেও ভারত ইতিহাসের অনেক কথা জানা যায় । তিব্বতীয় ঐতিহাসিক ও বৌদ্ধ পণ্ডিত তারানাথ এর বিবরণ থেকে বাংলার পালরাজাদের বহু তথ্য পাওয়া যায় ।

আরবীয় বিবরণ

মুসলমান আক্রমণকালে আরবীয় পণ্ডিত অলবেরুণী ভারতে আসেন । তার ‘ তহকক-ই-হিন্দ ‘ গ্রন্থ থেকে সমকালীন ভারতের রাজনৈতিক ও সামাজিক ইতিহাস জানা যায় । অন্যান্য আরবীয় লেখক , যথা — সুলেইমান , হাসান নিজামী , আল মাসুদি প্রভৃতির রচনা থেকেও ভারত ইতিহাস রচনার বহু উপাদান পাওয়া যায় ।

error: Content is protected !!