নিউরনের গঠন ও কাজ
Contents
নিউরনের গঠন ও কাজ

কোশদেহ ও প্রলম্বিত অংশ বা প্রবর্ধক সমন্বয়ে গঠিত স্নায়ুতন্ত্রের গঠনগত ও কার্যগত একক হল নিউরোন বা স্নায়ুকোশ ।
নিউরনের গঠন
কোশদেহ ( Cell body ) এবং কোশদেহ হতে সৃষ্ট কতকগুলি প্রলম্বিত অংশ ( Processes ) নিয়ে নিউরোন গঠিত ।
1. কোশ দেহ :
কোশদেহ নিউরোনের প্রধান অংশ ।
আকৃতি : গোলাকার , ডিম্বাকার , নক্ষত্রাকৃতি প্রভৃতি ধরনের ।
কোশপর্দা : দেহকোশকে বেষ্টন করে থাকে । এই পর্দা প্রোটিন ও লিপিড সহযোগে গঠিত ।
নিউরোপ্লাজম : কোশদেহের সাইটোপ্লাজমকে নিউরোপ্লাজম বলে । এটি দানাযুক্ত ও তন্তুময় ।
নিউক্লিয়াস : নিউরোপ্লাজমে থাকে । সাধারণত গোলাকার , আকারে একটু বড়ো , একটি বা দুটি নিউক্লিওলাস অল্প পরিমাণ ক্রোমাটিন এবং নিউক্লিওলাস একটি নিউক্লিয় পর্দার দ্বারা আবৃত থাকে ।
নিউরোফাইব্রিল : নিউরোপ্লাজমস্থ সূক্ষ্ম তন্তুগুলিকে নিউরোফাইব্রিল বলে ।
নিসল দানা : নিউরোপ্লাজমস্থ সূক্ষ্ম দানাগুলিকে নিসল দানা ( Nissl granules ) বলে । দানাগুলি রাইবোনিউক্লিক অ্যাসিড ও প্রোটিন দ্বারা গঠিত । প্রকৃতপক্ষে এগুলি রাইবোজোম দানা ।
মাইটোকন্ড্রিয়া : ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দানাকৃতি বা দণ্ডাকৃতি অজস্র কণা নিউরোপ্লাজমে বিক্ষিপ্ত অবস্থায় থাকে , তাদের মাইটোকন্ড্রিয়া বলে ।
গলগি বডি : নিউরোপ্লাজমস্থ কোশীয় অঙ্গাণু ।
এছাড়া নিউরোপ্লাজমে কিছু পরিমাণ মেলানিন , লাইপোক্রোম রঞ্জক দেখা যায় ।
কোশদেহের কাজ :
( i ) স্নায়ুকোশের যাবতীয় বিপাকক্রিয়া সম্পন্ন করা । ( ii ) স্নায়ু স্পন্দন গ্রহণ ও প্রেরণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা ।
2. প্রলম্বিত অংশ বা প্রবর্ধক :
কোশদেহের কোশপর্দা সম্প্রসারিত হয়ে সুতার ন্যায় প্রোটোপ্লাজমীয় যে শাখা প্রশাখা বাহির হয় তাকে প্রলম্বিত অংশ বা প্রবর্ধক বলে । প্রলম্বিত অংশ দুপ্রকারের— ( i ) ডেনড্রন ( Dendron ) ( ii ) অ্যাক্সন ( Axon ) ।
ডেনড্রন : নিউরােনের কোশদেহ থেকে উৎপন্ন ছোটো ছোটো শাখা-প্রশাখাযুক্ত প্রলম্বিত অংশকে ডেনড্রন বা কৈশতন্তু বলে ।
( i ) প্রতিটি ডেনড্রন কোশদেহের সংযোগস্থলে অপেক্ষাকৃত চওড়া এবং প্রান্তটি ক্রমশ সরু হয়ে অনেকগুলি শাখা-প্রশাখায় বিভক্ত ।
( ii ) ডেনড্রনের প্রতিটি শাখাকে ডেনড্রাইট ( Dendrite ) বলে । ডেনড্রনে নিসল দানা থাকে ।
ডেনড্রনের কাজ : ডেনড্রন পূর্ববর্তী নিউরোনের অ্যাক্সন হতে অথবা গ্রাহক যন্ত্র ( receptor ) হতে উদ্দীপনা গ্রহণ করে কোশদেহের দিকে প্রবাহিত করে ।
অ্যাক্সন :
নিউরোনের কোশদেহ থেকে উৎপন্ন অপেক্ষাকৃত দীর্ঘ প্রবর্ধক বা শাখাটিকে অ্যাক্সন বা অক্ষতন্তু বলে ।
( i ) অ্যাক্সনের কেন্দ্রীয় স্তম্ভকে অক্ষীয় স্তম্ভ ( Axis cylinder ) বলে ।
( ii ) কোশদেহের যে উঁচু অংশ থেকে অ্যাক্সনের উদ্ভব ঘটে তাকে অ্যাক্সন হিলক ( Axon hillock ) বলে ।
( iii ) অ্যাক্সনের আবরণকে অ্যাক্সোলেমা ( Axolemma ) এবং বিস্তৃত নিউরোপ্লাজমকে অ্যাক্সোপ্লাজম ( Axoplasm ) বলে ।
( iv ) অ্যাক্সোপ্লাজমে নিউরোফাইব্রিল ও মাইটোকন্ড্রিয়া থাকে ।
( v ) অ্যাক্সনের প্রতিটি বাহু শাখাযুক্ত এবং শাখার প্রান্তগুলির বিন্দু স্ফীত । এই প্রান্তকে এন্ডব্রাশ বলে ।
( vi ) অ্যাক্সোলেমার বাইরে কখনো কখনো প্রোটিন চর্বি সহযোগে নির্মিত ছেদযুক্ত একটি পুরুস্তর থাকে । একে মেডুলারী আচ্ছাদন বা মায়োলিন সিদ বলে এবং ছেদযুক্ত স্থানগুলিকে র্যানভিয়ারের পর্ব বলে ।
( vii ) মেডুলারী আচ্ছাদনের বাইরে সোয়ান কোশ বহনকারী একটি স্তর থাকে , একে সোয়ান সীথ বা নিউরোলেমা বলে ।
অ্যাক্সনের কাজ : কোশদেহ থেকে উদ্দীপনা বা স্নায়ুস্পন্দন বহন করে পরবর্তী স্নায়ুকোশে বা কারকে প্রেরণ করে ।
নিউরোনের কাজ
কোশদেহের কাজ : নিউরোন বা স্নায়ুকোশের কোশদেহ বিপাকীয় কার্য পরিচালনার সঙ্গেই ডেনড্রাইট দ্বারা গৃহীত উদ্দীপনাকে অ্যাক্সনের দিকে পরিচালিত করে এবং বিশেষ কিছুক্ষেত্রে হরমোন নিঃসরণে বিশেষ ভূমিকা পালন করে ।
ডেনড্রাইটের কাজ : স্নায়ুকোশের ডেনড্রাইট সাইন্যাপসের মাধ্যমে পূর্ববর্তী স্নায়ুকোশের অ্যাক্সন থেকে উদ্দীপনা গ্রহণ করে ।
অ্যাক্সনের কাজ : স্নায়ুকোশের অ্যাক্সন সাইন্যাপসের মাধ্যমে পরবর্তী স্নায়ুকোশের ডেনড্রাইটে উদ্দীপনা প্রেরণ করে ।