নেফ্রন কাকে বলে
Contents
নেফ্রন কাকে বলে
বৃক্কের গঠনগত ও কার্যগত একককে নেফ্রন বলে ।
নেফ্রনের গঠন
প্রতিটি নেফ্রন প্রায় 5 সেন্টিমিটার বিশিষ্ট লম্বা এক নালিকা । নালিকার অংশ বিশেষের জটিলতা অনুযায়ী নেফ্রন প্রধানত দুটো অংশে চিহ্নিত –
1. ম্যালপিজিয়ান কণিকা ( Malpighian Corpuscle )
2. বৃক্কীয় নালিকা ( Renal Tubule ) ।
ম্যালপিজিয়ান কণিকা :
নেফ্রনের গোলাকার স্ফীত প্রান্তটিকে ম্যালপিজিয়ান কণিকা বলে । প্রতিটি ম্যালপিজিয়ান কণিকা আবার দুটি অংশে যথা – ( A ) বাওম্যানস ক্যাপসুল ( Bowman’s Capsule ) ও ( B ) গ্লোমেরুলাস ( Glomerulus ) ।
বাওম্যানস ক্যাপসুল :
ম্যালপিজিয়ান কণিকার পেয়ালাকৃতি বন্ধ অংশকে বাওম্যানস ক্যাপসুল বলে ।
বাওম্যানস ক্যাপসুল এর গঠন :
( i ) পেয়ালাকৃতি , অগ্ৰপ্রান্ত গহ্বর স্থিত গ্লোমেরুলাসকে বেষ্টন করে থাকে । ( ii ) দ্বি -প্রাচীরস্তর বিশিষ্ট , ভিসেরাল স্তরটি গ্লোমেরুলাসের সংস্পর্শে থাকে , প্যারাইটাল স্তরটি বৃক্কীয় নালিকার সঙ্গে যুক্ত । ( iii ) প্রাচীর স্তর দুটির মাঝে ক্যাপসুল বিবর অবস্থিত ।
বাওম্যানস ক্যাপসুল এর কাজ :
গ্লোমেরুলাসকে ধারণ করে গ্লোমেরুলাসের পরিশ্রত তরলকে সংগৃহীত করে ।
গ্লোমেরুলাস :
বাউম্যানস ক্যাপসুল গহ্বরে অবস্থিত । রক্ত জালিকার কুণ্ডলীকে গ্লোমেরুলাস বলে ।
গ্লোমেরুলাস এর গঠন :
( i ) বৃক্কীয় ধমনি থেকে আসা অন্তর্মুখী বৃক্কীয় উপধমনি বাউ ম্যানস ক্যাপসুলের মধ্যে প্রচুর রক্ত জালিকা সৃষ্টির মাধ্যমে গ্লোমেরুলাসের অস্তিত্ব প্রদান করেছে । ( ii ) রক্তনালিকাগুলি পুনরায় মিলিত হয়ে বহির্মুখী । বৃক্কীয় উপধমনি সৃষ্টি করেছে । ii ) / বহির্মুখী উপধমনি দীর্ঘ কিন্তু সরু , অন্তর্মুখী উপধমনি হ্রস্ব কিন্তু প্রশস্ত ব্যাস যুক্ত । ( iv ) গ্লোমেরুলাসের রক্তজালকের রক্তচাপ অন্যান্য স্থানের রক্ত জালকের রক্ত চাপ অপেক্ষা বেশি । ( v ) গ্লোমেরুলাসের রক্তজালিকার আন্তঃআবরণীস্তর , বেসমেন্ট ঝিল্লি ও বাউম্যানস ক্যাপসুলের অন্তঃস্থ কোশস্তর – এই তিন স্তরের সমন্বয়ে গঠিত হয়েছে বৃক্কের পরিস্রাবণ ঝিল্লি ।
গ্লোমেরুলাস এর কাজ :
অতি সূক্ষ্ম পরিসুত যন্ত্র হিসেবে রক্ত থেকে রেচন পদার্থগুলোকে পরিস্রাবণ করা ।
বৃক্কীয় নালিকা :
নেফ্রনের ম্যালপিজিয়ান করপাসল -এর তলদেশ থেকে উৎপন্ন হয়ে যে সূক্ষ্ম , প্যাঁচানো বা কুণ্ডলীকৃত নালি সংগ্রাহী নালি পর্যন্ত বিস্তৃত তাকে বৃক্কীয় নালি বলে । বাউম্যানস ক্যাপসুল থেকে আসা বহির্মুখী বৃক্কীয় উপধমনির সৃষ্ট পরিনালিকা রক্ত জালকে বৃক্কীয় নালী আবদ্ধ থাকে । প্রতিটি বৃক্কীয় নালী আবার নিম্নলিখিত তিনটি অংশে বিভক্ত ।
নিকটবর্তী সংবর্ত নালিকা :
ম্যালপিজিয়ান করপাসল – এর তলদেশ থেকে প্রায় 14 মিলিমিটার দীর্ঘ , 0.5 মিলিমিটার ব্যাস যুক্ত জটিল কুণ্ডলীকৃত অংশকে নিকটবর্তী সংবর্ত নালিকা বলে ।
নিকটবর্তী সংবর্ত নালিকার কাজ :
বাউম্যানস ক্যাপসুলের পরিস্রুত তরল থেকে দেহের পক্ষে প্রয়োজনীয় বস্তু যথা — সোডিয়াম , গ্লুকোজ , অ্যামাইনো অ্যাসিড , ক্রিয়াটিন , সালফেট প্রভৃতির পুনঃবিশ্লেষণ করে রক্তে ফিরিয়ে দেওয়া নেফ্রনের এই অংশে সব থেকে বেশি পুনঃশোষণ ঘটে ।
হেনলির লুপ :
নিকটবর্তী সংবর্ত নালিকার শেষ প্রান্ত সোজা হয়ে বৃক্কের অন্তঃস্তরে প্রবেশ করে ইংরাজি ‘ U ‘ অক্ষরের ন্যায় নালিকার যে অংশ গঠন করে তাকে হেনলির লুপ বলে ।
হেনলির লুপের কাজ :
নালিকাস্থিত তরল থেকে জল , ক্লোরাইড ও সোডিয়াম বিশোষণ ।
দূরবর্তী সংবর্ত বা দূরসংবর্ত নালিকা :
হেনলী লুপের পরবর্তী প্রায় 5 মিলিমিটার দৈর্ঘ্য ও 22-50 মাইক্রন ব্যাস সম্পন্ন কুণ্ডলীকৃত নালিকাকে দূরবর্তী সংবর্ত নালিকা বলে ।
দূরবর্তী সংবর্ত নালিকার কাজ :
ADH হরমোনের উপস্থিতিতে জলের বিশোষণ ঘটিয়ে একটি অতিসারক তরল তথা মূত্র তৈরি করা ।
বৃক্কের সংগ্রাহক নালিকা :
যে স্থূল নালিকায় যুক্ত হয় , তাকে সংগ্রাহক নালিকা বলে । অনেকগুলি সংগ্রাহক নালিকা একত্রিত হয়ে বেলিনীর নালি সৃষ্টি করেছে ।
বৃক্কের সংগ্রাহক নালিকার কাজ :
মূত্রকে গবিনীর মাধ্যমে মূত্র থলিতে চালিত করা ।