কৃত্রিম অঙ্গজ জনন কাকে বলে

Contents

কৃত্রিম অঙ্গজ জনন কাকে বলে

অঙ্গজ জনন পদ্ধতিতে উৎপন্ন অপত্য উদ্ভিদে জনিতৃ উদ্ভিদের সম্পূর্ণ বৈশিষ্ট্য থাকায় মানুষ নিজের প্রয়ােজনে কিছু উদ্ভিদের ক্ষেত্রে অঙ্গজ জনন পদ্ধতির মাধ্যমে অপত্য উদ্ভিদ সৃষ্টি থাকে , একে কৃত্রিম অঙ্গজ জনন বলা হয় । 

কৃত্রিম অঙ্গজ জনন পদ্ধতি

প্রধানত চারটি পদ্ধতির সাহায্যে কৃত্রিম অঙ্গজ জনন ঘটানাে হয় : ( i ) শাখা কলম । ( ii ) দাবা কলম  ( iii ) গুটি কলম ( iv ) জোড়কলম ।

শাখা কলম :

জবা , গােলাপ , সজিনা , প্রভৃতি উদ্ভিদের পরিণত কাণ্ড বা শাখার অংশ কেটে ভিজে মাটিতে রােপণ করলে মাটি সংলগ্ন কাণ্ডের পর্ব থেকে অস্থানিক মূল বের হয়ে মাটিতে প্রবেশ করে এবং কাণ্ড বা শাখাটি থেকে নতুন উদ্ভিদ উৎপন্ন হয় ।

দাবা কলম :

লেবু , জুঁই , চন্দ্রমল্লিকা প্রভৃতি গাছের মাটি সংলগ্ন লম্বা শাখাকে বেঁকিয়ে কাণ্ডের পর্ব অংশকে মাটি চাপা দিতে হবে । ওই মাটি চাপা অংশে সার এবং মাঝে মাঝে জল সিঞ্চন করতে হবে । নির্দিষ্ট সময় পরে ওই পর্ব থেকে অস্থানিক মূল বের হলে , মূলসহ শাখাটিকে সাবধানে কেটে জনিতৃ গাছ থেকে বিচ্ছিন্ন করে মাটিতে রােপণ করলে নতুন উদ্ভিদের সৃষ্টি হবে । 

গুটি কলম :

পেয়ারা , আম , গােলাপ , লেবু প্রভৃতি গাছের কোনাে পরিণত শাখার কিছু পরিমাণ অংশের ছাল বা বল্কল তুলে ওই জায়গায় মাটি , সার ও খড় দিয়ে ঢাকা দড়ি দিয়ে শক্ত করে বেঁধে দিতে হবে এবং নিয়মিত জল দিতে হবে , তাহলে নির্দিষ্ট সময় পরে ওই অংশ থেকে অস্থানিক মূল নির্গত হবে । এরপর অস্থানিক মূল সুদ্ধ ওই শাখাকে সাবধানে কেটে মাটিতে রােপন করলে নতুন উদ্ভিদের সৃষ্টি হবে । 

জোড়কলম :

এই পদ্ধতিতে দুটি জনিতৃ উদ্ভিদের প্রয়ােজন হয় । কোনাে উপযুক্ত গাছের ছােটো শাখা কেটে নিয়ে সমগােত্রীয় মূলসহ ছােটোগাছের কাণ্ডের সঙ্গে বিশেষ উপায়ে অর্থাৎ দুটি শাখার ক্ষেত্রেই ভাজক কলার স্তর পর্যন্ত কেটে সংযােগ স্থাপন করতে হবে এবং ভালাে করে জোড়া দেওয়া অংশটি বেঁধে দিতে হবে । কিছুদিন পর উভয় শাখা পরস্পর জুড়ে গিয়ে নতুন উদ্ভিদের সৃষ্টি করবে । 

মূলসহ গাছের শাখাকে স্টক এবং যে শাখার অংশটি জোড়া হয় তাকে সিয়ন বলে । নতুন উদ্ভিদের মূলত সিয়নের বৈশিষ্ট্য‌ই প্রকাশ পায় ।

কৃত্রিম অঙ্গজ জননের গুরুত্ব বা তাৎপর্য

কৃত্রিম অঙ্গজ জননের গুরুত্ব বা তাৎপর্যগুলি হল―

( i ) কোনাে নির্দিষ্ট গুণসম্পন্ন ফুল বা ফল কৃত্রিম অঙ্গজ জননের মাধ্যমে ইচ্ছানুসারে বংশ পরম্পরায় সৃষ্টি করা যায় । 

( ii ) যে সব গাছের ক্ষেত্রে ( যেমন — আম , পেয়ারা প্রভৃতি ) বীজ থেকে উৎপন্ন অপত্য গাছে দেরি করে ফল ধরে , সেই সব গাছ থেকে কৃত্রিম অঙ্গজ জননের ( কলম থেকে উৎপন্ন ) মাধ্যমে উৎপন্ন অপত্য গাছে দ্রুত ফল ধরে । 

( iii ) গােল আলু , আদা , হলুদ ইত্যাদি উদ্ভিদের ক্ষেত্রে অল্পসময়ে অনেক অপত্য উদ্ভিদ সৃষ্টির জন্য কৃত্রিম অঙ্গজ জননের সাহায্য নেওয়া হয় । উদাহরণ স্বরূপ বলা যায় গােল আলুর মুকুল ( চোখ ) অংশ কেটে নিয়ে একটু আলু থেকে অসংখ্য অপত্য উদ্ভিদ সৃষ্টি করা হয় ।

error: Content is protected !!