রুই মাছের অভিযোজন
Contents
রুই মাছের অভিযোজন

মাছের উৎপত্তি জলচর পূর্বপুরুষ থেকে , সেজন্য মাছ প্রাথমিক বা মুখ্য জলজ প্রাণী । জলজ পরিবেশে বাস করার জন্য মাছের দেহের গঠনে যে অভিযােজনগুলি দেখা যায় , তা নিম্নরূপ ―
দেহ :
জলের পরিবেশে স্বাভাবিক গমনের জন্য মাছের দেহের আকৃতি মাকুর ন্যায় । অর্থাৎ দেহের অগ্র এবং পশ্চাৎ প্রান্ত সরু এবং মধ্যভাগ অপেক্ষাকৃত চওড়া । এছাড়া দেহ প্রবর্ধকবিহীন এবং পার্শ্বীয়ভাবে চ্যাপটা হয় ।
দেহের আবরণ :
আত্মরক্ষার জন্য রুইমাছের দেহ আঁশ দ্বারা আবৃত থাকে এবং আঁশের ওপর পিচ্ছিল শ্লেম্মা জাতীয় পদার্থের আস্তরণ থাকে । এছাড়া এই শ্লেষ্মা জাতীয় পদার্থের আস্তরণ গমনের সময় মাছকে জলের ঘর্ষণজনিত বাধা অতিক্রম করতে সাহায্য করে ।
পাখনা :
রুইমাছের দেহে অবস্থিত দুটি জোড় এবং তিনটি বিজোড় পাখনা মাছের গমনে পরােক্ষভাবে সাহায্য করে । শ্রোণি পাখনা এবং বক্ষ পাখনা জোড় পাখনা এবং পৃষ্ঠপাখনা , পায়ু পাখনা এবং পুচ্ছ পাখনা বিজোড় পাখনা । পুচ্ছ পাখনা নৌকার হালের ন্যায় কাজ করে এবং জলের মধ্যে দিক পরিবর্তনে সাহায্য করে । বক্ষ পাখনা এবং শ্রোণি পাখনা নৌকার দাঁড়ের মতাে কাজ করে , জলের বিভিন্ন তলে ওঠা নামা করতে এবং একটি নির্দিষ্ট তলে স্থিরভাবে ভেসে থাকতে সাহায্য করে । পুচ্ছ পাখনা দেহের আয়তন বৃদ্ধি করে দেহকে ভেসে থাকতে এবং অগ্রগমনেও সাহায্য করে । পায়ু পাখনাও দেহকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করে ।
পটকা :
জলের মধ্যে বিভিন্ন গভীরতায় গমনের জন্য দেহের অভ্যন্তরে বায়ুথলি বর্তমান , একে পটকা বলে । পটকার মধ্যে বায়ুর পরিমাণ বৃদ্ধি করে মাছ জলের উপরিতলে উঠতে পারে এবং বায়ুর পরিমাণ হ্রাস করে জলের গভীরে নেমে যেতে পারে ।
চক্ষু :
জলের মধ্যে দেখতে পাওয়ার সুবিধার জন্য নিকটিটেটিং পর্দা নামক স্বচ্ছ পাতলা আবরণ দ্বারা মাছের চোখ আবৃত থাকে , এছাড়াও এই পর্দা জলের আঘাত থেকে চোখকে রক্ষা করে ।
ফুলকা :
জলজ পরিবেশে শ্বাসকার্য চালানাের জন্য ফুলকা নামক শ্বাসঅঙ্গ বর্তমান , মাছের গলবিলের উভয়পার্শ্বে অবস্থিত ফুলকা কানকুয়া নামক ঢাকনা দ্বারা আবৃত থাকে । ফুলকা রক্তজালকপূর্ণ হওয়ায় ব্যাপন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে রক্তজালকের রক্ত এবং জলের মধ্যে গ্যাসীয় আদান প্রদান হয় ।
পার্শ্বরেখা বা স্পর্শেন্দ্রিয় রেখা :
দেহের দুপাশে মাঝ বরাবর কানকুয়া থেকে লেজ পর্যন্ত বিস্তৃতরেখা দুটিকে পার্শ্বরেখা বা স্পর্শেন্দ্রিয় রেখা বলে । এই রেখা দুটি সংবেদন গ্রাহক রূপে মাছকে জলের চাপ , তাপ , গভীরতা বুঝতে সাহায্য করে । এছাড়া সংবেদন গ্রহণের মাধ্যমে আত্মরক্ষা এবং দেহের ভারসাম্য রক্ষাতেও সাহায্য করে ।
মুখ :
রুইমাছ জলের মধ্যতল থেকে খাদ্য সংগ্রহ করে বলে , এদের মুখের মুখছিদ্র সােজাসুজিভাবে বিন্যস্ত থাকে ।
বহিঃ নাসারন্ধ্র :
ফুলকা দ্বারা শ্বাসকার্য হয় বলে মাছের দেহে অন্তঃনাসারন্ধ্র থাকে না , শুধুমাত্র বহিঃনাসার থাকে , যা শুধুমাত্র ঘ্রাণকার্যে ব্যবহৃত হয় ।
কর্ণ :
মাছের দেহে শুধুমাত্র অন্তকর্ণের অর্ধচন্দ্রাকার নালি থাকে । বহিঃকর্ণ এবং মধ্যকর্ণ থাকে না । মাছ কর্ণের সাহায্যে শুধুমাত্র দেহের ভারসাম্য রক্ষা করে ।
মায়োটোম পেশি :
মেরুদণ্ডের দুপাশে অবস্থিত ‘ V ’ আকৃতির পেশিকে মায়োটোম পেশি বলে । মায়োটোম পেশি সংকোচনের মাধ্যমে মেরুদণ্ডকে দেহের দুপাশে আন্দোলিত করে সাঁতার কাটে । অর্থাৎ মায়ােটোম পেশি প্রত্যক্ষভাবে গমনে সাহায্য করে ।
হৃৎপিণ্ড :
মাছের দেহে দুই প্রকোষ্ঠযুক্ত হৃৎপিণ্ড দেখা যায় । একটি অলিন্দ এবং একটি নিলয়দ্বারা গঠিত হৃৎপিণ্ডে সর্বদা কার্বন ডাইঅক্সাইড সমৃদ্ধ রক্ত প্রবাহিত হয় । মূলত জলজ পরিবেশে অক্সিজেনের অপ্রতুলতার কারণেই হৃৎপিণ্ডের গঠন সরলীকৃত হয় ।
নিষেক :
মাছের দেহে বহিঃনিষেক দেখা যায় । জলের মধ্যে নিষেক হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকায় এবং নিষিক্ত ডিম্বাণু নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকায় স্ত্রী মাছ প্রচুর পরিমাণে ডিম্বাণু এবং পুরুষ মাছ । প্রচুর পরিমাণে শুক্রাণু জলের মধ্যে নিঃসরণ করে এবং এই ডিম্বাণু ও শুক্রাণুগুলি দেহের বাইরে । মিলিত হওয়ায় , এই নিষেক পদ্ধতিকে বহিঃনিষেক বলে ।