জৈব বিবর্ধন কাকে বলে
জৈব বিবর্ধন কাকে বলে
যে পদ্ধতিতে পরিবর্তনহীন বিষাক্ত পদার্থ আমাদের খাদ্যশৃঙ্খলে প্রবেশ করলে প্রতিটি খাদ্যস্তরে এর গাঢ়ত্বের পরিমাণ বহু গুণ হিসাবে বৃদ্ধি পায় , সেই পদ্ধতিকে জৈব বিবর্ধন বা বায়োলজিক্যাল ম্যাগনিফিকেশন বলে ।
পৃথিবীব্যাপী জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে সমগ্র দেশে ওই জনসংখ্যার জন্য খাদ্য উৎপাদনের প্রয়ােজনীয়তা অনুভূত হতে থাকে । সুতরাং বিশ্বব্যাপী ‘ অধিক শস্য জন্মাও ’ , ‘ সবুজ বিপ্লব সংঘটিত করাে ’ , ‘ উন্নতমানের প্রযুক্তির প্রয়ােগে চাষবাস করাে ’ ইত্যাদি শ্লোগান প্রচলিত হয় । ফলে খাদ্যোৎপাদন প্রচুর পরিমাণে বৃদ্ধি পেয়েছে নিঃসন্দেহে কিন্তু গভীর সমস্যাও সৃষ্টি করেছে । অধিক ফলন ফলানাের জন্য যেমন সার প্রয়ােগ করা হয় তেমনি ফসলকে ক্ষতিকারক পােকামাকড় এবং রােগের আক্রমণ থেকে রক্ষা করবার জন্য বিষাক্ত কীটনাশক প্রয়ােগ করা হয় ।
বর্তমানে চাষ-আবাদে নানাপ্রকার বিষাক্ত কীটনাশক প্রয়ােগ আজ আধুনিক চাষের অন্যতম বৈশিষ্ট্য । এই বিষাক্ত কীটনাশকগুলি এবং অন্যান্য উৎস আগত বিভিন্ন বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ বাস্তুতন্ত্রে প্রবেশ করে । এই সকল কীটনাশক এই কারণে বিষাক্ত যে ওরা সাধারণত পরিবর্তিত হয় না , আর হলেও এত ধীরে হয় যে তা তাৎপর্যহীন । সুতরাং ওই বিষাক্ত পদার্থগুলি ওই অবস্থায় যদি আমাদের খাদ্যশৃঙ্খলে প্রবেশ করে তবে তা মারাত্মক বিষ বা টক্সিন ( toxin ) হিসেবে জীবদেহে প্রবেশ করে । শুধু তাই নয় প্রতি খাদ্যস্তরে এর গাঢ়ত্ব ( concentration ) বহুগুণ বৃদ্ধি পায় ।
বিষাক্ত কীটনাশক যেমন DDT , BHC ক্লোরডেন ( chlordane ) , অলড্রিন ( aldrin ) , হেপ্টাক্লোর ( heptachlor ) , PCB ( Polychlorinated bi phenyl ) প্রভৃতি , ভারি ধাতু যেমন সিসা , পারদ এবং তেজস্ক্রিয় পদার্থ যেমন — স্ট্রনসিয়াম ( Strontium ) প্রভৃতি অতি পরিচিত রাসায়নিক পদার্থগুলির জৈব বিবর্ধন যে ঘটে তা পরীক্ষিত সত্য । জৈব বিবর্ধন কীভাবে ঘটে তা জানবার জন্য বহু বিজ্ঞানী কীটনাশক DDT -এর ওপর গবেষণা করেন । তাদের গবেষণালব্ধ ফলকে আদর্শ হিসাবে গ্রহণ করে এখানে শুধুমাত্র DDT- র জৈব বিবর্ধন সম্বন্ধে সংক্ষিপ্ত আলােচনা করা হল ।
বিগত কয়েক দশক ফসলের পেস্ট দমনে এবং মশা ধ্বংস করার জন্য DDT এমন ব্যাপক হারে ব্যবহার করা হয়েছে যে বাতাসে , মাটিতে , জলে সর্বত্রই এটি পরিমাপযােগ্য পরিমাণে পাওয়া যায় । শুধু তাই নয় , যেখানে এটি প্রথম খাদ্যশৃঙ্খলে প্রবেশ করে সেখানে থেকে কয়েক হাজার কিলােমিটার দূরেও এর অস্তিত্ব ধরা পড়েছে । পূর্বেই বলা হয়েছে প্রকৃতিতে DDT- র কোনাে প্রকার পরিবর্তন ঘটে না । পুকুরের বা হ্রদের জলে আপতিত DDT ওই জলাশয়ে অবস্থিত উদ্ভিদ দ্বারা গৃহীত হয় ।
জলে দ্রবীভূত কীটনাশক DDT ফাইটোপ্ল্যাঙ্কটনের দেহে প্রবেশ করে । সেই কীটনাশক ফাইটোপ্ল্যাঙ্কটন ভক্ষণকারী জুপ্ল্যাঙ্কটনের দেহে আসে । জুপ্ল্যাঙ্কটন থেকে খাদ্যশৃঙ্খলের মাধ্যমে ছােটো মাছের দেহে , সেখান থেকে বড়াে মাছের দেহে কীটনাশক প্রবেশ করে । মাছ থেকে মাছ খাদক পাখির দেহে কিম্বা মানুষের দেহে তা প্রবেশ করে । খাদ্যশৃঙ্খলের মাধ্যমে DDT শুধুমাত্র খাদক থেকে অন্য খাদকে প্রবেশ করবার সঙ্গে সঙ্গে এর গাঢ়ত্ব বহুগুণ বৃদ্ধি পায় । তাই এই ঘটনাকে জৈব বিবর্ধন বা বায়োলজিক্যাল ম্যাগনিফিকেশন বলা হয় ।