জীবন বিজ্ঞান

খাদ্যশৃঙ্খল কাকে বলে

Contents

খাদ্যশৃঙ্খল কাকে বলে 

IMG ২০২১০৭০৩ ১৮৫৩১৮1
খাদ্যশৃঙ্খল কাকে বলে

বাস্তুতন্ত্রে খাদ্য শক্তি নীচের পুষ্টিস্তর থেকে সর্বোচ্চ পুষ্টিস্তর পর্যন্ত অর্থাৎ উৎপাদক থেকে বিয়ােজক পর্যন্ত খাদ্য-খাদক সম্পর্কিত বিভিন্ন জীবগােষ্ঠীর মধ্যে ক্রমহ্রাসমান হারে স্থানান্তরিত হলে ঐ শৃঙ্খলিত পর্যায়ক্রমিক শক্তির প্রবাহকে খাদ্যশৃঙ্খল বলে । 

খাদ্য শৃঙ্খলের উদাহরণ : 

তৃণ → হরিণ → বাঘ / সিংহ । 

খাদ্যশৃঙ্খলের বৈশিষ্ট্য

খাদ্য শৃঙ্খলের বৈশিষ্ট্য গুলি হল 一

1. নীচের পুষ্টিস্তর থেকে সর্বোচ্চ পুষ্টিস্তর পর্যন্ত খাদ্যশক্তির শুধুই একমুখী প্রবাহ ঘটে । প্রবাহপথ সরল হয় । 

2. শক্তি ও পুষ্টি পদার্থের পরিবহন একটিমাত্র অনুক্রমিক খাদ্যশৃঙ্খলের মাধ্যমে সম্পন্ন হয় । 

3. খাদ্য-খাদকের সম্পর্কের ভিত্তিতে পুষ্টির বিভিন্ন স্তরে একটি করে খাদ্য ও খাদক থাকে ।

4. খাদ্যশৃঙ্খল জীববৈচিত্র্য কম হয় । বৈচিত্র্যপূর্ণ প্রজাতি যেমন কম , তেমনি প্রতিটি প্রজাতির জীবের সংখ্যাও কম হয় । 

5. বিভিন্ন খাদ্যস্তরে শক্তি সরবরাহে একবার বিঘ্ন ঘটলে এর কুপ্রভাব সর্বোচ্চ স্তর পর্যন্ত পৌঁছায় এবং বাস্তুতন্ত্রের অস্তিত্ব বিপন্ন হওয়ার সম্ভাবনা থাকে । 

6. বাস্তুতন্ত্রে কোনাে খাদ্যশৃঙ্খল প্রাকৃতিক নিয়মে একবার নষ্ট হলে অর্থাৎ পুষ্টি বা শক্তির জোগান বন্ধ হলে পুনরায় তা তৈরি হতে অথবা ভারসাম্য অবস্থায় আসতে দীর্ঘ সময় লাগে ।

খাদ্যশৃঙ্খল কয় প্রকার ও কী কী

খাদ্য-খাদকের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য বা প্রকৃতি এবং খাদ্য গ্রহণের ধরন অর্থাৎ খাদ্যাভ্যাস অনুযায়ী খাদ্যশৃঙ্খলকে দু-ভাগে ভাগ করা যায় । i. খাদ্য-খাদকের প্রকৃতি অনুসারে এবং ii. খাদ্যাভ্যাস অনুসারে ।

খাদ্য-খাদকের প্রকৃতি অনুসারে 

শিকারি খাদ্যশৃঙ্খল : 

যে খাদ্যশৃঙ্খল তৃণভােজী প্রাণী থেকে শুরু হয় এবং পর্যায়ক্রমে ক্ষুদ্র থেকে বৃহত্তর মাংসাশী প্রাণীতে শেষ হয় তাকে শিকারি খাদ্যশৃঙ্খল বলা হয় । 

যেমন — ফড়িং → ব্যাঙ → সাপ → ময়ূর / বাজপাখি

পরজীবী খাদ্যশৃঙ্খল : 

যে খাদ্যশৃঙ্খল বৃহত্তর জীবকে আশ্রয় করে শুরু হয় তাকে পরজীবী খাদ্যশৃঙ্খল বলা হয় । এক্ষেত্রে প্রত্যেক পুষ্টিস্তরে জীবের আকার ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর হতে থাকে ।

যেমন — কুকুর → কৃমি → আদ্যপ্রাণী বা বিয়ােজক

মৃতজীবী খাদ্যশৃঙ্খল : 

যে খাদ্যশৃঙ্খলে মৃত ও গলিত জীবদেহ থেকে ক্রমান্বয়ে জীবাণুর দিকে শক্তি প্রবাহিত হয় তাকে মৃতজীবী খাদ্যশৃঙ্খল বলা হয় । 

যেমন — মৃতদেহ → ছত্রাক 

খাদ্যাভ্যাস অনুসারে

গ্ৰেজিং বা চারণভূমি খাদ্যশৃঙ্খল : 

যে খাদ্যশৃঙ্খল উৎপাদক থেকে শুরু হয় এবং পর্যায়ক্রমে মাংসাশী প্রাণীতে শক্তিপ্রবাহের শেষ হয় তাকে গ্ৰেজিং বা চারণভূমি খাদ্যশৃঙ্খল বলা হয় । 

যেমন — লতাগুল্ম → হরিণ → বাঘ / সিংহ । 

ডেট্রিটাস বা বিয়োজক খাদ্যশৃঙ্খল : 

যে খাদ্যশৃঙ্খলের শক্তিপ্রবাহ অণুখাদক বা বিয়ােজক স্তর থেকে শুরু হয়ে বড়াে প্রাণীতে শেষ হয় তাকে ডেট্রিটাস বা বিয়োজক খাদ্যশৃঙ্খল বলা হয় । 

যেমন — পচা পাতা → লার্ভা → ছােটো মাছ → বড়াে মাছ ।

বাস্তুতন্ত্রে খাদ্যশৃঙ্খলের গুরুত্ব 

সমগ্র জীবমণ্ডলের অস্তিত্ব ক্ষেত্রে খাদ্যশৃঙ্খলের গুরুত্ব অপরিসীম । কারণ —

1. উৎপাদকের মধ্যে সঞ্চিত সৌরশক্তি খাদ্যশৃঙ্খলের মাধ্যমে উৎপাদক থেকে সর্বশেষ স্তর পর্যন্ত বিভিন্ন জীবদেহে ছড়িয়ে পড়ে ।

2. খাদ্যশৃঙ্খল থাকায় প্রতিটি জীব বাস্তুতন্ত্রে টিকে থাকে । বাস্তুতন্ত্রে আন্তঃসম্পর্ক যুক্ত বিভিন্ন কাজ সম্পন্ন হয় । বাস্তুতন্ত্র একমাত্র ও প্রধান কার্যকরী এককরূপে অবস্থান করে । 

3. খাদ্যশৃঙ্খল বিনষ্ট হলে পুষ্টিস্তরের জীবগােষ্ঠীর জীবনে সংকট দেখা দেবে এবং সেই সঙ্গে বাস্তুতন্ত্রের অস্তিত্বও বিপন্ন হবে । 

4. খাদ্যশৃঙ্খলের জন্য ক্রমােচ্চ পর্যায়ে খাদ্যের কোনাে অভাব হয় । খাদ্যশৃঙ্খল যত সচল থাকে ততই বাস্তুতন্ত্র সুগঠিত হয় এবং বাস্তুতন্ত্রে ভারসাম্য বজায় থাকে । 

error: Content is protected !!