জীবন বিজ্ঞানভূগোল

বাস্তুতন্ত্র কাকে বলে

Contents

বাস্তুতন্ত্র কাকে বলে

বাস্তুতন্ত্র কাকে বলে

কোনাে একটি নির্দিষ্ট স্থানে বসবাসকারী জীবগােষ্ঠীগুলির মধ্যে একে অপরের সঙ্গে এবং ওই বসতি অঞ্চলের জড় পদার্থগুলির সঙ্গে জীবগােষ্ঠীগুলির প্রতিটি সদস্যের মিথস্ক্রিয়ার ( Interaction ) মাধ্যমে যে অনুকূল বসবাসরীতি গড়ে ওঠে , ইকোসিস্টেম বা বাস্তুতন্ত্র বা বাস্তুরীতি বলে ।

বাস্তুতন্ত্রের ধর্ম বা বৈশিষ্ট্য

বাস্তুতন্ত্রের ধর্ম বা বৈশিষ্ট্য বাস্তুতন্ত্রের ধর্মগুলি হল— 

i. বাস্তুতন্ত্রের একটি নির্দিষ্ট এলাকা আছে । 

ii. বাস্তুতন্ত্রকে সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে পর্যবেক্ষণ করা হয় । 

iii. এখানে শক্তি ও পদার্থের সরবরাহ এবং উৎপাদন সবসময় ঘটতে থাকে । 

iv. শক্তি বাস্তুতন্ত্র কাজ করার পর এখান থেকে বেরিয়ে যায় , তাই এটিকে একটি উন্মুক্ত প্রণালী বলা হয় । 

v. বাস্তুতন্ত্র আকারে খুব ছােটো থেকে সুবৃহৎ হতে পারে । বড়াে বাস্তুতন্ত্রে জীববৈচিত্র্য বেশি হয় । 

vi. বাস্তুতন্ত্রে শক্তির একমাত্র উৎস হল সূর্যালােক । 

vii. খাদ্যশৃঙ্খলের মাধ্যমে শক্তি সরবরাহে বিঘ্ন না ঘটলে বাস্তুতন্ত্র স্থায়ী ভারসাম্যের দিকে এগিয়ে যায় । 

viii. বাস্তুতন্ত্র সুসংগঠিত ও নির্দিষ্ট কাঠামাে বিশিষ্ট হয় । 

বাস্তুতন্ত্রের গুরুত্ব বা তাৎপর্য

বাস্তুতন্ত্র প্রাকৃতিক পরিবেশ তথা জীবমণ্ডলের অন্যতম মূল একক । তাই এর গুরুত্ব ও তাৎপর্য অনেক । যেমন— 

i. বাস্তুতন্ত্র অধ্যয়ন করলে বিভিন্ন পরিবেশ এবং ওই পরিবেশের জীবগােষ্ঠীর সম্বন্ধে জ্ঞান লাভ করা যায় । 

ii. বাতাসে কার্বন ডাইঅক্সাইড ও অক্সিজেনের ভারসাম্য বাস্তুতন্ত্রের সবুজ উদ্ভিদের ওপর নির্ভর করে । তাই বাস্তুতন্ত্রের কার্যকারিতা তাৎপর্যপূর্ণ । 

iii. পরিবেশ দূষণ রােধ ও সেই সঙ্গে প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণের জন্য বাস্তুতন্ত্রকে কাজে লাগানাে যায় । 

iv. আদর্শ বাস্তুতন্ত্রে খরা ও বন্যার প্রকোপ থাকে না । 

v. উদ্ভিদ ও প্রাণীর বাসস্থানের সুরক্ষা , জমির উর্বরতা বৃদ্ধি ও ভূমিক্ষয় রােধ আদর্শ বাস্তুতন্ত্রে স্বাভাবিক নিয়মে হয়ে থাকে । 

vi. বাস্তুতন্ত্রের সঠিক মূল্যায়ন করলে উন্নয়নমূলক পরিকল্পনা , বনভূমির গঠন ও সুরক্ষা , বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ইত্যাদির সফল রূপায়ণ সম্ভব । 

vii. বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য বজায় থাকলে উদ্ভিদ ও প্রাণী প্রজাতি লােপ পায় না ।

বাস্তুতন্ত্রের বিভিন্ন উপাদান 

বাস্তুতন্ত্রের উপাদানগুলিকে প্রধানত দুভাগে ভাগ করা হয় , যথা — 1. জড় বা অ্যাবায়ােটিক উপাদান । 2. সজীব বা বায়ােটিক উপাদান ।

জড় বা আবায়ােটিক উপাদান :

বাস্তুতন্ত্রের জড় বা অ্যাবায়ােটিক উপাদানগুলিকে প্রধানত তিন ভাগে ভাগ করা হয় , যথা —

ভৌত অবস্থা : সূর্যালােক , বায়ুপ্রবাহ , উষ্ণতা , বৃষ্টিপাতের পরিমাণ , বায়ুর আর্দ্রতা , বায়ুর চাপ , মাটির গঠনগত বৈশিষ্ট্য ও প্রকৃতি , কোন স্থানের অবস্থান , পর্বতমালার অবস্থান প্রভৃতি । 

অজৈব উপাদান : জল , বিভিন্ন প্রকার খনিজ পদার্থ ( যথা — ক্যালশিয়াম , ম্যাগনেসিয়াম , ফসফরাস , সালফার প্রভৃতি ) , গ্যাসীয় পদার্থ ( যথা — অক্সিজেন , কার্বন ডাইঅক্সাইড , নাইট্রোজেন প্রভূতি । ) 

জৈব উপাদান : জীবের দ্বারা পরিত্যক্ত বর্জ্য পদার্থের মধ্যে উপস্থিত জৈব পদার্থ এবং মৃত জীবদেহের মধ্যস্থিত জৈব পদার্থকে একত্রে পরিবেশের জৈব উপাদান বলে । 

সজীব বা বায়ােটিক উপাদান :

পরিবেশে উপস্থিত সজীব উপাদানগুলিকে কার্যকারিতার ওপর ভিত্তি করে প্রধানত দুটি শ্রেণিতে ভাগ করা হয়- ( i ) উৎপাদক ও ( ii ) পরভােজী উপাদান । 

উৎপাদক : স্বভােজী জীবগােষ্ঠী । 

পরভােজী উপাদান : পরভোেজী উপাদান আকৃতি এবং খাদ্যের প্রকৃতি অনুসারে দু-প্রকার হয় —

( i ) ম্যাক্রোকনজিউমার ( ii ) মাইক্রোকনজিউমার । 

ম্যাক্রোকনজিউমার : এদের তিনটি শ্রেণিতে ভাগ করা হয়— ( ক ) প্রাথমিক খাদক , ( খ ) গৌণ খাদক এবং ( গ ) প্রগৌণ খাদক । 

মাইক্রোকনজিউমার : খাদ্যের প্রকৃতি অনুযায়ী দুভাগে ভাগ করা হয় — ( ক ) বিয়ােজক ও ( খ ) পরিবর্তক ।

error: Content is protected !!