জীবন বিজ্ঞান

একটি আদর্শ পাতার বিভিন্ন অংশ

Contents

একটি আদর্শ পাতার বিভিন্ন অংশ

Screenshot ২০২১০৬১৮ ১৭১৩২৫
একটি আদর্শ পাতার বিভিন্ন অংশ

একটি আদর্শ পাতার তিনটি প্রধান অংশ থাকে । যথা — পত্রমূল ( Leaf base ) , পত্রবৃন্ত ( Petiole ) এবং পত্রফলক ( Lamina or Leaf Blade )। 

পত্রমূল  

পাতা তার যে অংশ দিয়ে কান্ড বা শাখাপ্রশাখার পর্বের সঙ্গে যুক্ত থাকে , তাকে পত্রমূল বা হাইপােপােডিয়াম ( Hypopodium ) বলে । 

অনেক সময় পত্রমূল ও বৃন্তের মধ্যে পার্থক্য করা যায় না । আম , কৃষ্ণচূড়া , অপরাজিতা , তেঁতুল প্রভৃতি পাতার পত্রমূল স্ফীত হয় , একে উপাধান বা পালভাইনাস ( pulvinus ) বলে । 

অনেক সময় পত্রমূল চ্যাপটা ও প্রসারিত হয়ে কান্ডকে সম্পূর্ণভাবে বা আংশিকভাবে বেষ্টন করে থাকে ; এরূপ পত্রমূলকে আবরণী পত্রমূল ( sheathing ) বলে । 

পানমরিচ ও কিছু ঘাস শ্রেণির উদ্ভিদের আবরণী পত্রমূল কান্ডকে সম্পূর্ণরূপে বেষ্টন করে থাকে , একে কান্ড বেষ্টক পত্রমূল ( amplexicaul ) বলে ।  এবং তাল , নারকেল সুপারি প্রভৃতি উদ্ভিদের আবরণী পত্রমূল কান্ডকে অর্ধেক বেষ্টন করে থাকে , একে অর্ধকান্ড বেষ্টক পত্রমূল ( semi – amplexicaul ) বলে । 

অনেক সময় পাতার পত্রমূলের কাছে দুটি ছােটো পাতার মতাে অংশ থাকে , তাকে উপপত্র ( stipules ) বলে । উপপত্র যুক্ত পাতাকে সােপপত্রিক ( stipulate ) এবং উপপত্রবিহীন পাতাকে অনুপপত্রী ( exstipulate ) বলে । 

ঘাস জাতীয় উদ্ভিদের পত্রমূল দ্বিখন্ডিত হয়ে ফলক সংলগ্ন অংশে অবস্থান করে , একে লিগিউল ( ligule ) বলে । যৌগিক পত্রের অনুফলক -এর পত্রমূলে উপপত্রের মতাে অংশকে স্টিপেল ( stipel ) বলে ।

পত্রমূলের কাজ :

i. পাতাকে পর্বের সঙ্গে সংযুক্ত রাখা পত্রমূলের প্রধান কাজ । 

ii. কাক্ষিক মুকুলকে রক্ষা করাও পত্রমূলের কাজ । 

পত্রবৃন্ত 

পত্রমূল ও পত্রফলকের মাঝখানের সরু দন্ডাকার অংশকে পত্রবৃন্ত বা বোঁটা বা পিটিওল বা মেসােপােডিয়াম ( mesopodium ) বলে । যেসব পাতায় বৃন্ত থাকে , তাদের সবৃন্তক ( petiolate ) এবং যেসব পাতায় বৃন্ত থাকে না , তাদের অবৃন্তক ( sessile ) বলে । জবা , বট , আম সবৃন্তক পাতা এবং ধান , গম , রজনিগন্ধা অবৃন্তক পাতা । 

পত্রবৃন্ত বিভিন্ন আকৃতির হতে পারে । ছােটো ফলকের মতাে বৃন্তকে পক্ষল ( লেবু ) , স্ফীত স্পঞ্জের মতাে বৃন্তকে স্ফীত বৃন্ত ( কচুরিপানা ) , চ্যাপটা প্রসারিত পাতার মতাে বৃন্তকে পর্ণবৃন্ত ( আকাশমনি ) এবং সরু আকর্ষের মতাে বৃন্তকে আকর্ষী বৃন্ত ( ছাগলবটি ) বলে । পত্রবৃন্ত সাধারণত ফলকের তলদেশের কিনারায় যুক্ত থাকে । অনেকক্ষেত্রে পত্রবৃন্ত পত্রফলকের অঙ্কদেশের কেন্দ্রে যুক্ত থাকে । এরকম পাতাকে পেলটেট ( peltate ) বলে । যেমন — শালুক , পদ্ম ইত্যাদি পাতা ।

পরিবর্তিত পত্রবৃন্ত :

1. স্ফীত বৃন্ত — কচুরিপানা 

2. আকর্ষী বৃন্ত — ছাগলবটি 

3. পর্ণবৃন্ত — আকাশমনি 

4. সপক্ষল বৃন্ত — বাতাবী লেবু ।

পত্রবৃন্ত এর কাজ :

i. পত্রবৃন্ত ফলককে ধারণ করে । পত্রবৃন্তের মাধ্যমে কান্ড থেকে জল ও খনিজ লবণ ফলকে আসে এবং ফলক থেকে খাদ্যবস্তু কান্ডে আসে । 

ii. সবুজ পত্রবৃন্ত সালােকসংশ্লেষে সহায়তা করে । 

iii. এ ছাড়া জলজ উদ্ভিদের স্ফীত পত্রবৃন্ত উদ্ভিদকে জলে ভাসতে সাহায্য করে । 

ফলক  

পত্রবৃন্তের শীর্ষে অবস্থিত সবুজবর্ণের চ্যাপটা ও প্রসারিত অংশকে ফলক বা ল্যামিনা বলে । ফলকের শীর্ষকে পত্রাগ্র ( apex ) , দু-প্রান্তকে পত্ৰকিনারা ( margin ) এবং নীচের প্রসারিত অংশকে পাদদেশ ( base ) বলে । ফলকের কিনারা মসৃণ ( যেমন — আম , বট ইত্যাদি পাতা ) বা খন্ডিত ( যেমন — জবা পাতা ) বা ঢেউখেলানাে ( যেমন — দেবদারু পাতা ) হতে পারে । 

দ্বিবীজপত্রী উদ্ভিদের পাতার উৰ্ধত্বক মসৃণ এবং নিম্নতল অমসৃণ ; এরকম পাতাকে বিষমপৃষ্ঠ পাতা ( dorsiventral leaf ) বলে । একবীজপত্রী উদ্ভিদের পাতার দুটি তলই সমান দেখতে বলে একে সমাঙ্কপৃষ্ঠ পাতা ( isobilateral leaf ) বলে । 

ফলকের মধ্যরেখা বরাবর বৃন্ত থেকে শুরু করে পত্রাগ্র পর্যন্ত বিস্তৃত মােটা শিরাকে মধ্যশিরা ( midrib ) বলে । মধ্যশিরা থেকে অনেকগুলি শিরা ( veins ) এবং শিরা থেকে অসংখ্য উপশিরা ( veinlets ) উৎপন্ন হয়ে ফলকের ওপর বিন্যস্ত হয়ে শিরাবিন্যাস গঠন করে । ফলকের মধ্যে শিরা এবং উপশিরার সজ্জারীতিকে শিরাবিন্যাস ( venation ) বলে । দ্বিবীজপত্রী উদ্ভিদের পাতার শিরা-উপশিরাগুলি জালকের মতাে বিন্যস্ত থাকায় একে জালকাকার শিরাবিন্যাস ( reticulate venation ) বলে । একবীজপত্রী পাতার শিরা উপশিরাগুলি পরস্পর সমান্তরালভাবে অবস্থান করায় এদের শিরাবিন্যাসকে সমান্তরাল শিরাবিন্যাস ( parallel venation ) বলে । 

পত্রফলক বিভিন্ন আকৃতির হতে পারে , যেমন — রেখাকার ( ঘাস , রজনিগন্ধার ফলক ) , সূঁচ্যাকার ( পাইন ) , ভল্লাকার ( দেবদারু , বাঁশ ) , আয়তাকার ( কলার ফলক ) ইত্যাদি । 

পত্রফলকের কাজ :

i. সালােকংসশ্লেষ প্রক্রিয়ায় খাদ্য উৎপন্ন করা , 

ii. সালােকসংশ্লেষ ও শ্বসনের জন্য প্রয়ােজনীয় গ্যাসীয় পদার্থের আদান প্রদান করা এবং 

iii. বাষ্পমােচনে সাহায্য করা ।

error: Content is protected !!