উদ্ভিদের মুকুল কাকে বলে
Contents
উদ্ভিদের মুকুল কাকে বলে

অতিশয় ক্ষুদ্র , সংকুচিত ও অবিকশিত বিটপকে মুকুল বলা হয় ।
মুকুলের মধ্যে পর্ব , পর্বমধ্য , পত্র ইত্যাদি সবই বিদ্যমান । কিন্তু এগুলি এত ঘনসন্নিবিষ্ট ভাবে অবস্থান করে যে আপাতদৃষ্টিতে পৃথকভাবে চিহ্নিত করা যায় না ।
মুকুলের প্রকারভেদ
A. প্রকৃতি অনুসারে এবং B. উৎপত্তি ও অবস্থান অনুসারে ।
প্রকৃতি অনুসারে
প্রকৃতি অনুসারে মুকুল নিম্নলিখিত প্রকারের হয়—
i. দৈহিক মুকুল ( Vegetative buds ) ii. পুষ্প মুকুল ( Floral buds ) iv. মিশ্র মুকুল ( Mixed buds ) v. আকর্ষ মুকুল ( Tendrillar buds ) ।
দৈহিক মুকুল : এই মুকুল নতুন কান্ড ও শাখা উৎপন্ন করে ।
পুষ্প মুকুল : এই মুকুল ফুল সৃষ্টি করে ।
মিশ্র মুকুল : এই মুকুল উদ্ভিদের দৈহিক অঙ্গ ও পুষ্প উভয়ই সৃষ্টি করে । উদাহরণ — আপেল ।
আকর্ষ মুকুল : এই মুকুল আকর্ষে রূপান্তরিত হয় । উদাহরণ — ঝুমকোলতা ।
উৎপত্তি ও অবস্থান অনুসারে
উৎপত্তি ও অবস্থান অনুসারে মুকুল নিম্নলিখিত প্রকারের হয়— i. অগ্রমুকুল ( Apical buds ) ii. পার্শ্বমুকুল ( Lateral buds ) এবং iii. অস্থানিক মুকুল ( Adventitious buds ) iv. মুকুল শল্কপত্র ( Bud scale ) v. শীতকালীন মুকুল ( Winter buds ) এবং vi. বিশেষ মুকুল বা বুলবিল ( Specialized buds or Bulbils ) ।
অগ্রমুকুল :
এইপ্রকার মুকুল কান্ড ও শাখাপ্রশাখার অগ্রভাগে উৎপন্ন হয় এবং এদের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে ।
পার্শ্ব মুকুল :
এই ধরনের মুকুল নিম্নলিখিত প্রকারের হয় –
i. কাক্ষিক মুকুল ( Axillary buds ) ii. অতিরিক্ত মুকুল ( Accessory buds ) iii. সুপ্ত মুকুল ( Dormant buds ) ।
কাক্ষিক মুকুল : পাতার কক্ষে উৎপন্ন মুকুলকে কাক্ষিক মুকুল বলে । এই মুকুল থেকে শাখাপ্রশাখা এমনকি ফুলও উৎপন্ন হয় । উদাহরণ — গােলাপ , সূর্যমুখী ইত্যাদি ।
অতিরিক্ত মুকুল : যখন একটি পাতার কক্ষে একের অধিক মুকুল উৎপন্ন হয় , তখন তাকে অতিরিক্ত মুকুল বলে । উদাহরণ — বেগুন , লংকা ইত্যাদি ।
সুপ্ত মুকুল : কাক্ষিক মুকুল শাখাপ্রশাখা সৃষ্টি না করে সুপ্ত বা নিষ্ক্রিয় অবস্থায় থাকে ; একে সুপ্ত মুকুল বলে ।
অস্থানিক মুকুল :
কান্ডের নির্দিষ্ট স্থান থেকে মুকল উৎপন্ন না হয়ে যখন অন্য কোনাে অংশ থেকে উৎপন্ন হয় , তখন তাকে অস্থানিক মুকুল বলে । এইপ্রকার মুকুল নিম্নলিখিত প্রকারের হয়—i. পত্রাশ্রয়ী মুকুল ( Epiphyllous buds ) ii. কান্ডজ মুকুল ( Cauline buds ) এবং iii. মূলজ মুকুল ( Radical buds ) ।
পত্রাশ্রয়ী মুকুল : পাতা থেকে উৎপন্ন মুকুলকে পত্রাশ্রয়ী মুকুল বলে । উদাহরণ — পাথরকুচি পাতার কিনারা থেকে এবং বিগােনিয়া পাতার শিরার ওপর উৎপন্ন মুকুল ।
কান্ডজ মুকুল : কান্ড বা শাখাপ্রশাখার কাটা স্থান থেকে উৎপন্ন মুকুলকে কান্ডজ মুকুল বলে । উদাহরণ — দুরন্ত , ডালিয়া , গােলাপ ইত্যাদি ।
মূলজ মুকুল : ভূনিম্নস্থ পরিবর্তিত মূল থেকে উৎপন্ন মুকুলকে মূলজ মুকুল বলে । উদাহরণ — পটল , রাঙাআলু ইত্যাদি ।
মুকুল শল্কপত্র :
কাঁঠাল , চাপা প্রভৃতি উদ্ভিদের মুকুল শল্ক দ্বারা আবৃত থাকে । এই শল্কপত্র পাতা বা পাতার কোনাে অংশরূপে রূপান্তরিত হতে পারে ।
শীতকালীন মুকুল :
প্রচন্ড ঠান্ডার সময় যখন উদ্ভিদের সব পাতা ঝরে যায় তখন কান্ডে উৎপন্ন বিশেষ মুকুল অক্ষত অবস্থায় থেকে যায় এবং বসন্তকালে । ওই মুকুল থেকে নতুন পাতা উৎপন্ন হয় । এই ধরনের মুকুলকে শীতকালীন মুকুল বলে । ফুলকপি ও বাঁধাকপি এই ধরনের মুকুল । বাঁধাকপি সবচেয়ে বড়াে মুকুল ।
বুলবিল :
কাক্ষিক মুকুল খাদ্য সঞ্চয়ের ফলে যে স্ফীত ও গােলাকার আকৃতি ধারণ করে , তাকে বুলবিল বা বিশেষ মুকুল বলে । এই বুলবিল উদ্ভিদের বংশবিস্তারে সাহায্য করে । উদাহরণ — চুপড়ি আলু , কন্দপুষ্প ইত্যাদি ।