উদ্ভিদের গৌণ বৃদ্ধি বলতে কী বোঝ
Contents
উদ্ভিদের গৌণ বৃদ্ধি বলতে কী বোঝ
ক্যাম্বিয়াম ও কর্ক ক্যাম্বিয়াম বা ফেলােজেন নামক পার্শ্বীয় ভাজক কলার ক্রিয়াশীলতার দ্বারা গৌণ কলা সমষ্টি গঠনের মাধ্যমে দ্বিবীজপত্রী কান্ড ও মূলের পরিধিতে বা স্থূলত্বে যে বৃদ্ধি ঘটে , তাকে গৌণ বৃদ্ধি বা সেকেন্ডারি গ্রোথ বলে ।
দ্বিবীজপত্রী উদ্ভিদের কান্ডের গৌণ বৃদ্ধি
অন্তঃস্টিলীয় অঞ্চলে গৌণ বৃদ্ধি
ক্যাম্বিয়াম বলয়ের উৎপত্তি :
দ্বিবীজপত্রী উদ্ভিদের কান্ডের নালিকা বান্ডিলের জাইলেম ও ফ্লোয়েমের মাঝে বর্তমান ফ্যাসিকুলার ক্যাম্বিয়াম -এর সঙ্গে একই রেখায় বিন্যস্ত মজ্জাংশুর কিছু প্যারেনকাইমা কলা বিভাজনক্ষম হয়ে ইন্টারফ্যাসিকুলার ক্যাম্বিয়াম ( interfascicular cambium ) নামক নতুন পার্শ্বীয় ভাজক কলার সরু ও লম্বা স্তর গঠন করে । এই ইন্টারফ্যাসিকুলার ক্যাম্বিয়াম এবং ফ্যাসিকুলার ক্যাম্বিয়াম মিলিত হয়ে একটি সম্পূর্ণ বলয় গঠন করে , একে ক্যাম্বিয়াম বলয় বলে । ক্যাম্বিয়াম বলয়ের সক্রিয়তার দরুন গৌণ বৃদ্ধি ঘটে ।
গৌণ কলা সমষ্টির উৎপত্তি :
সমগ্র ক্যাম্বিয়াম বলয়ের সক্রিয়তার ফলে ক্যাম্বিয়াম বলয়ের বাইরে ও ভিতরের দিকে নতুন কোশ সৃষ্টি হয় । বাইরের দিকের কোশগুলি থেকে গৌণ ফ্লোয়েম এবং ভিতরের দিকের কোশগুলি থেকে গৌণ জাইলেম গঠিত হয় ।
গৌণ মজ্জাংশুর উৎপত্তি :
মাঝে মাঝে কোনাে কোনাে স্থানে ক্যাম্বিয়ামের অপত্য কোশগুলি জাইলেম ও ফ্লোয়েমে পরিবর্তিত না হয়ে প্যারেনকাইমা কোশ উৎপন্ন করে সরু সরু পটির মতাে অংশ গঠন করে । ওই প্রকার গঠনগুলিকে গৌণ মজ্জাংশু বলে ।
বর্ষবলয় উৎপত্তি :
ক্যাম্বিয়ামের সক্রিয়তার ফলে গৌণবৃদ্ধি কালে বৃক্ষজাতীয় উদ্ভিদের কান্ডে গৌণ জাইলেম বা কাষ্ঠিক উপাদান বলয়াকারে সঞ্চিত হয় , একে বর্ষবলয় বা বৃদ্ধিবলয় বলে । বসন্তকালে কাষ্ঠিক উপাদান অধিক সঞ্চিত হয় । গৌণ জাইলেম দ্বারা গঠিত প্রতিটি বর্ষবলয়ে দুটি ভিন্ন প্রকারের কাষ্ঠকলা ( wood tissue ) ক্যাম্বিয়াম বলয় দিয়ে যুক্ত হয় , যথা — পূর্বকালীন কাষ্ঠ ( early wood ) বা বসন্ত কাষ্ঠ ( spring wood ) এবং বিলম্বিত কাষ্ঠ ( late wood ) বা গ্রীষ্ম বা শরৎ কাষ্ঠ ( summer or autumn wood ) । বসন্ত কাষ্ঠ হালকা এবং এতে তন্তুর পরিমাণ কম থাকে । অপরদিকে গ্রীষ্ম কাষ্ঠে জাইলেম বাহিকার পরিমাণ কম কিন্তু তন্তুর পরিমাণ বেশি থাকায় এই অংশের কাষ্ঠটি দৃঢ় ও গাঢ়বর্ণের হয় ।
বসন্ত কাষ্ঠ এবং গ্রীষ্ম কাষ্ঠের সমন্বয়ে প্রতি বৎসর বর্ষবলয় গঠিত হয় । সাধারণত বর্ষবলয় বলতে প্রতি বৎসরের একবার মাত্র ঋতু অনুযায়ী বৃদ্ধিকে বােঝায় । এইভাবে বছরের পর বছর ধরে বর্ষবলয় গঠিত হতে থাকে । কাষ্ঠের প্রস্থচ্ছেদ থেকে প্রাপ্ত বর্ষবলয়ের সংখ্যা থেকে উদ্ভিদের বয়স নির্ণয় করা যায় ।
অসার ও সার কাষ্ঠ :
গৌণ বৃদ্ধির ফলে কান্ডে দু -রকম কাষ্ঠ অঞ্চল দেখা যায় , যেমন 一
( a ) সদ্য গঠিত গৌণ জাইলেম সমৃদ্ধ অঞ্চলটিকে অসার বা সরস কাষ্ঠ ( sap wood ) এবং
( b ) পূর্বে গঠিত গৌণ জাইলেম সমৃদ্ধ কেন্দ্রের অঞ্চলটিকে সার বা নীরস কাষ্ঠ ( heart wood ) বলে ।
সার কাষ্ঠ : দীর্ঘদিন যাবৎ ক্রমাগত গৌণ বৃদ্ধির ফলে কান্ডের কেন্দ্রস্থ গৌণ জাইলেম অংশ শারীরবৃত্তীয় ভাবে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে । ট্রাকিড , ট্রাকিয়া কোশে রজন , ট্যানিন প্রভৃতি সঞ্চিত হয়ে কালাে রঙের হয় , এই অংশকে হার্ট উড বলে । হার্ট উড অত্যন্ত মূল্যবান , আসবাবপত্র , গৃহসামগ্রী তৈরিতে কাজে লাগে ।
অসার কাষ্ঠ : হার্ট উডের পরিধিস্থ সদ্য গঠিত গৌণ জাইলেম অংশ হালকা রঙের এবং শারীরবৃত্তীয় ভাবে সক্রিয় হয় , এই অংশকে স্যাপ উড বলে ।
বহিঃস্টিলীয় অঞ্চলে গৌণ বৃদ্ধি
পেরিডার্মের উৎপত্তি :
গৌণ বৃদ্ধিকালে অন্তঃস্টিলীয় অঞ্চলে যে চাপের সৃষ্টি হয় তা প্রতিরােধ করার জন্য এবং বহিঃস্তর ও ত্বকের অন্তর্গত কোশগুলিকে প্রতিস্থাপন বা বিনষ্টের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য ত্বক ও ত্বকের নীচের কোশে ফেলোজেন বা কর্ক ক্যাম্বিয়াম নামে নতুন গৌণ ভাজক কলা গঠিত হয় । এই প্রকার গৌণ ভাজক কলার সক্রিয়তার ফলে পেরিডার্ম নামে গৌণ কলা গঠিত হয় । এর ফলে উদ্ভিদের গৌণ বৃদ্ধি ঘটে ।
বাকলের উৎপত্তি :
ত্বক , অধস্ত্বকের ও সাধারণ বহিঃস্তরের কিছু কোশ বিভাজনক্ষম হয়ে ফেলোজেন ( phellogen ) বা কর্ক ক্যাম্বিয়াম ( cork cambium ) -এর সৃষ্টি করে । এই ফেলোজেন বিভাজনের মাধ্যম বাইরের দিকে ফেলেম ( phellem ) বা কর্ক ( cork ) এবং ভিতরের দিকে ফেলােডার্ম ( phelloderm ) গঠন করে । ফেলেমের কোশগুলি খাদ্যবস্তু ও জল না পেয়ে মৃত ও শুষ্ক কোশে পরিণত হয় । ওইসব মৃত কোষগুলি সম্মিলিতভাবে বাকল গঠন করে ।
লেন্টিসেল :
পেরিডার্ম স্তর গঠিত হলে বহিস্ত্বকের পত্রর কার্যহীন হয়ে পড়ে । কিন্তু পত্ররন্ত্রের কার্য সচল রাখার জন্য পত্ররন্ধের নীচে অন্তঃকোশীয় রন্ধ্রযুক্ত , পাতলা প্রাচীরবিশিষ্ট গােলাকার কোশের স্তর গঠিত হয় ; একে কমপ্লিমেন্টারি কোশ ( complementary cells ) বলে । এই কমপ্লিমেন্টারি কোশের চাপে বহিস্ত্বক বিদীর্ণ হয়ে লেন্টিসেল গঠিত হয় । লেন্টিসেলের নীচে ফেলেম ফেলােডার্ম ও ফেলােজেন স্তর বিদ্যমান ।
একবীজপত্রী উদ্ভিদের গৌণ বৃদ্ধি
একবীজপত্রী উদ্ভিদের নালিকা বান্ডিলগুলি বন্ধ প্রকৃতির হওয়ায় এবং বলয়াকারে সজ্জিত না থাকায় এদের গৌণ বৃদ্ধি পরিলক্ষিত হয় না । তবে কয়েকটি একবীজপত্রী কান্ডে , যেমন— Dracaena , Aloe , Yucca প্রভৃতি কান্ডে গৌণ বৃদ্ধি পরিলক্ষিত হয় । ড্রাসিনার কান্ডের প্রস্থচ্ছেদের অংশগুলি হল— i. বহিস্ত্বক ( epidermis ) , ii. কর্ক কোশস্তর ( cork cell layers ) , iii. বহিঃস্তর বা কর্টেক্স ( cortex ) , iv. প্যারেনকাইমা ( parenchyma ) , v. গৌণ ক্যাম্বিয়াম ( secondary cambium ) এবং vi. যােজক কলা ( connective tissue ) । লেপ্টোসেন্ট্রিক নালিকা বান্ডিলগুলি ( Vascular bundle ) যােজক কলায় বিক্ষিপ্তভাবে অবস্থান করে ।