পত্ররন্ধ্র কাকে বলে
Contents
পত্ররন্ধ্র কাকে বলে

উদ্ভিদের পাতা ও কচি কান্ডের ত্বকে যে অসংখ্য সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম ছিদ্র থাকে সেই ছিদ্রগুলিকে পত্ররন্ধ্র বলে ।
পত্ররন্ধ্রের গঠন
অপরিণত কান্ড ও পাতার ত্বকে অসংখ্য আণুবীক্ষণিক পত্ররন্ধ্র থকে । প্রতিটি পত্ররন্ধ্রে একটি রন্ধ্র এবং দুটি পরস্পর আংশিকভাবে যুক্ত অর্ধচন্দ্রাকার বা বৃক্কাকৃতির রক্ষীকোশ ( Guard Cell ) থাকে । একবীজপত্রী উদ্ভিদের রক্ষীকোশ ডম্বরু বা ডাম্বেল ( Dumbel ) আকৃতির হয় । অনেক ক্ষেত্রে রক্ষীকোশ দুটিতে ত্বক কোশ বেষ্টন করে থাকে । এই ত্বককোশগুলিকে আনুষঙ্গিক কোশ ( Subsidiary cells ) বলে ।
প্রতিটি পত্ররন্ধ্রে ঠিক নীচে একটি বায়ুগহ্বর ( Air chamber ) দেখা যায় । রক্ষীকোশগুলিতে ঘন সাইটোপ্লাজম , একটি নিউক্লিয়াস , এন্ডোপ্লাজমীয় জালক , মাইটোকনড্রিয়া ও ক্লোরােপ্লাস্টিড থাকে । এতে স্টার্চ দানাও সঞ্চিত হয় । রক্ষীকোশ দুটি সমানভাবে স্থূল হয় না । প্রধানত ছিদ্র সংলগ্ন কোশপ্রাচীর স্থূল ও দৃঢ় হয় , কিন্তু অন্যান্য কোশপ্রাচীরের অংশগুলি পাতলা থাকে । পত্ররন্ধ্র সাধারণত ত্বককোশের ( Epidermal cell ) সমউচ্চতায় অবস্থান করে । অনেক উদ্ভিদে পত্ররন্ধ্র ত্বকের গভীরে প্রবেশ করে নিমজ্জিত পত্ররন্ধ্র ( Sunken stomata ) থাকে । উদাহরণ – করবী ( Nerium indicum ) । রক্ষীকোশ দুটির মধ্যবর্তী স্থানের ছিদ্রটি হল রন্ধ্র — যা ক্রমশ নীচের দিকে বড়াে পত্ররন্ধ্র গহ্বরে মিশে যায় ।
পত্ররন্ধ্রের বিস্তৃতি
মূলের বহিস্ত্বকে কোনাে পত্ররন্ধ্র থাকে না । সবুজপাতায় সবচেয়ে বেশি পত্ররন্ধ্র থাকে । বিষমপৃষ্ঠ পত্রের ( Dorsiventral leaf ) শুধুমাত্র নিম্নপৃষ্ঠে এবং সমাঙ্কপৃষ্ঠ পত্রের ( Isobilateral leaf ) উভয়পৃষ্ঠে পত্ররন্ধ্র দেখা যায় । জলে ভাসমান বা অর্ধনিমজ্জিত উদ্ভিদের পাতার উপরিপৃষ্ঠে পত্ররন্ধ্র থাকে কিন্তু জলে নিমজ্জিত সবুজ উদ্ভিদের দেহে পত্ররন্ধ্র থাকে না , অনেক সময় থাকলেও পত্ররন্ধ্রগুলি নিষ্ক্রিয় হয় । জঙ্গল উদ্ভিদের পত্ররন্ধ্র ত্বকের গভীরে অবস্থান করে । এই ধরনের পত্ররন্ধ্রকে নিমজ্জিত পত্ররন্ধ্র ( Sunken Stomata ) বলা হয় ।
পত্ররন্ধ্রের প্রকারভেদ
রক্ষীকোশ ও আনুষঙ্গিক কোশের সংখ্যা ও বিন্যাসরীতির তারতম্য অনুসারে পত্ররন্ধ্র নানা প্রকারের হয় । মেটকাফ ও চক ( Metcaffe and Chalk , 1950 ) সব দ্বিবীজপত্রী উদ্ভিদের পত্রকে মােট চার ভাগে বিভক্ত করেন ।
র্যানানকিউলেসিয়াস টাইপ ( Ranunculaceous type ) বা অ্যানোমােসাইটিক ( Anomocytic ) :
এই প্রকার পত্ররন্ধ্রগুলি কতকগুলি কোশ দিয়ে পরিবৃত থাকে যা অন্যান্য ত্বক কোশ ( Epidermal cell ) থেকে পৃথক করা যায় না । প্রকৃতপক্ষে এখানে কোনাে আনুষঙ্গিক কোশ থাকে না । উদাহরণ — র্যানানকিউলেসি ( Ranunculaceae ) ও ক্যাপারিডিয়েসি ( Capparidaceae ) গােত্রের উদ্ভিদ প্রজাতিতে দেখা যায় । কয়েকটি উদ্ভিদ , যেমন— Ranunculus sceleratus ( Ranunculaceae ) , Cleome viscosa ( Capparidaceae ) ।
ক্রুসিফেরাস টাইপ ( Cruciferous type ) বা অ্যানাইসােসাইটিক ( Anisocytic ) :
এই প্রকার পত্ররন্ধ্র তিনটি আনুষঙ্গিক কোশ দিয়ে ঘেরা থাকে । তিনটি কোশের মধ্যে একটির আকৃতি অপেক্ষাকৃত ছােটো । উদাহরণ – ক্রুসিফেরি Cruciferae ) , সােলানেসি ( Solanaceae ) গোত্রের উদ্ভিদ প্রজাতি । কয়েকটি প্রজাতির নাম – Brassica nigra ( Curcifera ) , Solanum Tuberosum ( Solanaceae ) ।
রুবিয়েসিয়াস টাইপ ( Rubiaceous Type ) বা প্যারাসাইটিক ( Paracytic ) :
এইক্ষেত্রে দুটি আনুষঙ্গিক কোশ পত্ররন্ধ্রকে ঘিরে রাখে । পত্ররন্ধ্রর লম্ব অক্ষ বরাবর উভয় দিকে সমান্তরালভাবে দুটি আনুষঙ্গিক কোশ থাকে । উদাহরণ – রুবিয়েসি ( Rubiaceae ) , ম্যাগনােলিয়েসি ( Magnoliaceae ) গােত্রের উদ্ভিদ । কয়েকটি প্রজাতির নাম হল – Ixora coccinea ( Rubiaceac ) , Magnolia grandi flow ( Magnoliaceae ) ।
ক্যারিওফাইলেসিয়াস টাইপ ( Caryophyllaceae type ) বা ডায়াসাইটিক ( Diacytic ) :
এই প্রকার পত্ররন্ধ্রে দুটি আনুষঙ্গিক কোশ ঘিরে রাখে । এদের সাধারণ প্রাচীর রক্ষীকোশের লম্ব অক্ষের সঙ্গে সমকোণে বিন্যস্ত থাকে । উদাহরণ – ক্যারিওফাইলেসি ( Caryophyllaceae ) ও অ্যাকানথেসি ( Acanthaceae ) গােত্রের উদ্ভিদ প্রজাতি । কয়েকটি প্রজাতির নাম – Dianthus chinensis ( Caryophyllaceae ) , Adhatoda vasica ( Acanthaceae ) ।
পত্ররন্ধ্রের কাজ
পত্ররন্ধ্র উদ্ভিদের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ । এর প্রধান কাজগুলি হল 一
( i ) পত্ররন্ধ্রের মাধ্যমে উদ্ভিদদেহ এবং বায়ুমণ্ডলের মধ্যে গ্যাসীয় বিনিময় ঘটে । শ্বসনের সময় এই রন্ধ্রের মাধ্যমে অক্সিজেন গৃহীত এবং কার্বন ডাইঅক্সাইড বর্জিত হয় ।
( ii ) সালােকসংশ্লেষের সময় কার্বন ডাইঅক্সাইড গৃহীত এবং অক্সিজেন নির্গত হয় ।
( iii ) পত্ররন্ধ্রের রক্ষীকোশে ক্লোরােপ্লাস্ট থাকায় সালােকসংশ্লেষ প্রক্রিয়ায় খাদ্য তৈরি করতে পারে ।
( iv ) বাষ্পমােচন প্রক্রিয়ায় উদ্ভিদের অতিরিক্ত জল বাষ্পাকারে পত্ররন্ধ্র দিয়ে ত্যাগ করে ।