ইতিহাস

বারাণসী বিদ্রোহ

Contents

বারাণসী বিদ্রোহ

কৃষি , শিল্প ও বাণিজ্যে সমৃদ্ধ জায়গির ছিল বিহার প্রদেশের অন্তর্গত বারাণসী । অযােধ্যার নবাবের অধীনস্থ এই জায়গিরটির জায়গিরদার ছিলেন বলবন্ত সিং । কোম্পানি অযােধ্যার নবাবের কাছ থেকে এই জায়গিরটি অধিগ্রহণ করে ( ১৭৭৫ খ্রি . ) বাৎসরিক ২২ লক্ষ ৬৬ হাজার টাকার কর ধার্য করে । বলবন্তের পুত্র চৈত্য সিংহ -এর রাজত্বকালে নির্যাতিত কৃষক প্রজারা ক্ষুদ্ধ হয়ে এই অঞ্চলে যে বিদ্রোহ ঘােষণা করে তা বারাণসী বিদ্রোহ নামে পরিচিত ।

PicsArt 08 16 09.07.21 1
বারাণসী বিদ্রোহ

বারাণসী বিদ্রোহের কারণ

এই বিদ্রোহের কারণগুলি ছিল 一

চৈত্য সিংহের ভূমিকা : 

ব্রিটিশ বলবন্ত সিংহের পুত্র চৈত্য সিংহকে বাংসরিক ২২ লক্ষ ৬৬ হাজার টাকা কর প্রদানের বিনিময়ে বারাণসীর রাজপদে বসায় । চৈত্য সিংহ এই বিশাল পরিমাণ কর আদায় করতে গিয়ে কৃষক প্রজাদের ওপর নির্যাতন শুরু করে । সারাবছর ধরে কৃষকেরা খেতে যে ফসল ফলায় তা সবই খাজনা দিতে গিয়ে হাতছাড়া হওয়ায় তারা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে ।

সন্ন্যাসী বিদ্রোহের প্রভাব : 

১৭৬৩ খ্রিস্টাব্দে সংঘটিত সন্ন্যাসী বিদ্রোহে প্রভাবিত হয়ে বারাণসীর কৃষক প্রজারা অতিরিক্ত কর দিতে অস্বীকার করে বিদ্রোহের পথ বেছে নেয় ।

ব্রিটিশের অর্থলোভ : 

ব্রিটিশ চৈত্য সিংহকে সিংহাসনে বসানোর বিনিময়ে বিশাল পরিমাণ অর্থ লাভ করলেও তাতে সন্তুষ্ট ছিল না । গভর্নর জেনারেল হেস্টিংস চৈত্য সিংহের কাছ থেকে তিন ব্যাটেলিয়ন সৈন্যের বাৎসরিক খরচ চালানাের জন্য অতিরিক্ত ৫০ হাজার পাউন্ড ( ৫ লক্ষ টাকা ) দাবি করেন । ব্রিটিশের এই শােষণমূলক ভূমিকায় রাজা চৈত্য সিং অসহায় বােধ করলেও প্রজারা ক্ষিপ্ত হয়ে বিদ্রোহের রাস্তায় যায় ।

বারাণসী বিদ্রোহের প্রসার ও অবসান

ব্রিটিশের অর্থক্ষুধা মেটাতে ব্যর্থ হলে হেস্টিংস চৈত্য সিংহকে তাঁর নিজের প্রাসাদে বন্দি করে রাখে । এই সংবাদ ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন জায়গা থেকে প্রজারা বারাণসীতে আসতে শুরু করে । সশস্ত্র জনতা ইংরেজ পক্ষের সব সৈন্যকে হত্যা করে । হেস্টিংস গােপনে বিশাল সেনাবাহিনী পাঠানাের নির্দেশ দেন । হেস্টিংসের নির্দেশ মেনে বাংলা , চুনার ও লখনউ থেকে ক্যাপ্টেন মেফেয়ারের নেতৃত্বে , মেজর মর্গ্যানের নেতৃত্বে , মেজর পপহামের নেতৃত্বে পরপর তিনটি বিশাল সেনাবাহিনী বারাণসী বিদ্রোহ দমন করার জন্য এগিয়ে আসে । ক্যাপটেন মেফেয়ারের নেতৃত্বে বিশাল ব্রিটিশবাহিনী লতিফগড় দূর্গের ওপর আক্রমণ চালিয়ে এই বিদ্রোহ দমন করে ( ১৭৮১ খ্রি. ২০ সেপ্টেম্বর ) ।

বারাণসী বিদ্রোহের ফলাফল

বারাণসী বিদ্রোহের ফলাফল ছিল অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ । বিদ্রোহ চলাকালীন অর্থলােভী ব্রিটিশ চৈত্য সিংহের দূর্গ দখল করে নিয়ে প্রচুর ধনসম্পদ কুক্ষিগত করে ।চৈত্য সিহের এক ভাগনাকে বারাণসী রাজপদে বসিয়ে সেখানকার প্রকৃত শাসনক্ষমতা করায়ত্ত করে ব্রিটিশ ।

উপসংহার

এদেশে ব্রিটিশের শাসনের আগে বাংলার মতাে বারাণসীও ছিল সমৃদ্ধিশালী একটি অঞ্চল । এই অঞ্চলটির ওপর তাই ব্রিটিশের লােভাতুর দৃষ্টি পড়ে । প্রচুর অর্থের বিনিময়ে এক একজনকে নবাব পদে বসিয়ে সুচতর ব্রিটিশ যেভাবে সম্পদের বহির্গমন ঘটিয়েছিল , একই উপায়ে বারাণসী থেকেও ব্রিটিশ প্রচুর অর্থাগম করে । কিন্তু এক্ষেত্রে বারাণসী বিদ্রোহের ফলে ব্রিটিশকে চরম বিরোধিতার সম্মুখীন হতে হয়েছিল ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!