জাইলেম কলা কাকে বলে
Contents
জাইলেম কলা কাকে বলে

উদ্ভিদের যে জটিল স্থায়ী কলার মাধ্যমে মূল থেকে শােষিত জল ও জলে দ্রবণীয় খনিজ লবণ উদ্ভিদের পাতায় পরিবাহিত হয় তাকে জাইলেম কলা বা জাইলেম টিস্যু বলে ।
জাইলেম কলার উৎপত্তি
উদ্ভিদদেহে প্রাথমিক বৃদ্ধির সময় প্রোক্যাম্বিয়াম নামক প্রাথমিক ভাজক কলা থেকে যে জাইলেম সৃষ্টি হয় তাকে প্রাথমিক জাইলেম বলে । অপরদিকে ব্যক্তবীজী ও দ্বিবীজপত্রী উদ্ভিদে গৌণ বৃদ্ধির সময় ক্যাম্বিয়াম নামক গৌণ ভাজক কলা থেকে যে জাইলেম কলার সৃষ্টি হয় তাকে গৌণ জাইলেম বলে ।
প্রােক্যাম্বিয়াম থেকে প্রারম্ভিক দশায় গঠিত প্রাথমিক জাইলেমকে প্রোটোজাইলেম ( protoxylem ) এবং পরবর্তী পর্যায়ে গঠিত প্রাথমিক জাইলেমকে মেটাজাইলেম ( metaxylem ) বলে । প্রােটোজাইলেমের উপাদানগুলি আকৃতিতে ছােটো ও স্বল্প ব্যাস যুক্ত এবং মেটাজাইলেমের উপাদানগুলি বড় ও অধিক ব্যাস যুক্ত হয় ।
জাইলেমের কাজ
জাইলেম কলার কাজ গুলি হল一
i. মূলরােম দ্বারা শােষিত জল ও খনিজ লবণ জাইলেম কলার মাধ্যমে পাতায় পৌছােয় ।
ii. উদ্ভিদ অঙ্গে দৃঢ়তা প্রদান করা ।
জাইলেম কলার উপাদান
জাইলেম চার প্রকার সজীব ও মৃত কোশ দিয়ে গঠিত । যথা — ট্রাকিড , ট্রাকিয়া , জাইলেম প্যারেনকাইমা এবং জাইলেম তন্তু ।
ট্রাকিড ও ট্রাকিয়া জল ও খনিজ লবণ পরিবহণে সংশ্লিষ্ট থাকায় এদের একত্রে ট্রাকিয়ারি উপাদান ( tracheary elements ) বলে ।
ট্রাকিড ( Tracheid ) :
পুরু কোশপ্রাচীর যুক্ত , লম্বা , ছুঁচোলাে প্রান্ত বিশিষ্ট মৃত জাইলেম কোশকে ট্রাকিড বলে ।
ট্রাকিড এর অবস্থান : গুপ্তবীজী , ব্যক্তবীজী ও ফার্ন জাতীয় উদ্ভিদের মূল , কান্ড ও পাতায় ট্রাকিড অবস্থিত ।
ট্রাকিড এর গঠন বৈশিষ্ট্য : i. ট্রাকিড কোশগুলি দেখতে লম্বা এবং দু -প্রান্ত সরু । ii. কোশপ্রাচীরে অত্যধিক লিগনিন জমা হওয়ায় কোশপ্রাচীর স্থূল হয় । iii. কোশপ্রাচীরে প্রচুর কূপ বর্তমান । iv. পরিণত কোশে প্রােটোপ্লাজম না থাকায় কোশগুলি মৃত । v. কোশপ্রাচীরে সােপানাকার , বলয়াকার , সর্পিলাকার , কূপাকৃতি প্রভৃতি অলংকরণ দেখা যায় ।
ট্রাকিড এর কাজ : জল সংবহন , জল সঞ্চয় ও দৃঢ়তা প্রদান করা ।
ট্রাকিয়া ( Trachea ) :
প্রান্তপ্রাচীর বিহীন , নলাকার , মৃত জাইলেম কোশগুলিকে ট্রাকিয়া বা বাহিকা ( vessel ) বলে ।
ট্রাকিয়া এর অবস্থান : সকল গুপ্তবীজী ও নির্দিষ্ট কতকগুলি ব্যক্তবীজী উদ্ভিদে ( নিটাম ) ট্রাকিয়া বর্তমান ।
ট্রাকিয়া এর গঠন বৈশিষ্ট্য : i. ট্রাকিয়া কোশগুলি দেখতে লম্বা নলের মতাে । ii. নলাকার কোশগুলির প্রান্তপ্রাচীর ছিদ্রযুক্ত হয় , একে ছিদ্রপাত ( perforation plate ) বলে । ছিদ্রপাত একাধিক বা একটি বড়াে গােলাকার ছিদ্র যুক্ত হয় । iii. প্রথম অবস্থায় কোশগুলিতে প্রান্তপ্রাচীর অর্থাৎ প্রস্থপ্রাচীর থাকলেও পরবর্তীকালে ওই প্রান্তপ্রাচীর বিনষ্ট হয়ে গিয়ে পরস্পর যুক্ত হয়ে লম্বা নল বা বাহিকা গঠন করে । iv. কোশপ্রাচীর লিগনিনযুক্ত হওয়ায় খুব স্থূল । v. কোশপ্রাচীরে কূপ বর্তমান । vi. প্রােটোপ্লাজম না থাকায় কোশগুলি মৃত । vii. কোশপ্রাচীরে ট্রাকিডের মতাে নানারকম অলংকরণ ( যেমন — বলয়াকার , সর্পিলাকার , সােপানাকার , জালিকাকার ও কূপাকৃতি ) দেখা যায় ।
ট্রাকিয়ার কাজ : জল ও খনিজ লবণ সংবহন করা ও দৃঢ়তা প্রদান করা ।
জাইলেম প্যারেনকাইমা ( Xylem parenchyma ) :
পাতলা প্রাচীর যুক্ত , সজীব প্যারেনকাইমা কোশগুলিকে জাইলেম প্যারেনকাইমা বলে ।
জাইলেম প্যারেনকাইমা এর অবস্থান : কয়েকপ্রকার ব্যক্তবীজী উদ্ভিদ ছাড়া ( পাইনাস ) সমস্ত উন্নত উদ্ভিদে জাইলেম প্যারেনকাইমা বর্তমান ।
জাইলেম প্যারেনকাইমা এর গঠন বৈশিষ্ট্য : i. কোশগুলি দেখতে লম্বাটে । ii. প্রােটোপ্লাজম থাকায় কোশগুলি সজীব । iii. কোশপ্রাচীর সেলুলােজ নির্মিত ।
জাইলেম প্যারেনকাইমা এর কাজ : জল ও খনিজ লবণ সংবহন করা এবং খাদ্য ও বর্জ্য পদার্থ সঞ্চয় করা ।
জাইলেম তন্তু ( Xylem fibre ) :
জাইলেম কলায় অবস্থিত স্থূল প্রাচীর বিশিষ্ট , লম্বাটে মৃত স্ক্লেরেনকাইমা তন্তকে জাইলেম তন্তু বা কাষ্ঠল তন্তু ( wood fiber ) বলে ।
জাইলেম তন্তু এর অবস্থান : উদ্ভিদের নালিকা বান্ডিলে অবস্থিত ।
জাইলেম তন্তু এর গঠন বৈশিষ্ট্য : i. জাইলেম তন্তুগুলি দেখতে লম্বা ও ছুঁচোলাে । ii. প্রােটোপ্লাজম না থাকায় কোশগুলি মৃত । iii. কোশপ্রাচীর লিগনিনযুক্ত হওয়ায় স্থূল । iv. কোশপ্রাচীরে কূপ বর্তমান । v. জাইলেম তন্তু দু-প্রকারের হয় , যেমন— লিবরিফরম তন্তু ও তন্তু ট্রাকিড ।
জাইলেম তন্তু এর কাজ : দৃঢ়তা প্রদান করা জাইলেম তন্তুর প্রধান কাজ ।