জীবন বিজ্ঞান

স্ক্লেরেনকাইমা কাকে বলে

Contents

স্ক্লেরেনকাইমা কাকে বলে

সমভাবে স্থূল কোশপ্রাচীর যুক্ত মৃত সরল কলাকে স্ক্লেরেনকাইমা বলে । 

Screenshot ২০২১০৫২২ ১৮২৫০৬
স্ক্লেরেনকাইমা কাকে বলে

স্ক্লেরেনকাইমা টিস্যুর অবস্থান 

সাধারণত একবীজপত্রী উদ্ভিদের কাণ্ডের অধঃত্বকে , দ্বিবীজপত্রী উদ্ভিদের বান্ডিল টুপিতে , তাছাড়া নালিকা বান্ডিল ও পরিচক্রে এই কলা দেখা যায় । আপেল , পেয়ারা , নাসপাতি ইত্যাদি ফলের শাঁসে ; মটর , মুগ , খেসারি ইত্যাদি বীজের বীজত্বকে ; পদ্ম , শালুক , চা ইত্যাদি গাছের কাণ্ডে ও পাতায় এককভাবে বা দলবদ্ধভাবে স্ক্লেরাইড কোশ বর্তমান ।

স্ক্লেরেনকাইমা টিস্যুর গঠন বৈশিষ্ট্য

i) স্ক্লেরেনকাইমা কলার কোশগুলি দেখতে গোলাকার , ডিম্বাকার তারকাকার বা লম্বাকার হয় ।

ii ) পরিণত কোশে প্রােটোপ্লাজম না থাকায় কোশগুলি মৃত । 

iii ) কোশের কোশপ্রাচীর লিগনিন যুক্ত হওয়ায় , খুব শক্ত ও পুর হয় । 

iv ) কোশগুলির মাঝে কোশান্তর স্থান একেবারেই থাকে না । 

v ) কোশপ্রাচীরে অনেক সময় ছােটো ছােটো কূপ বা পিট ( pit ) বা গর্ত সৃষ্টি হয় । 

স্ক্লেরেনকাইমা টিস্যুর প্রকারভেদ 

আকার ও আকৃতি অনুসারে স্ক্লেরেনকাইমা কলার কোশগুলি দু -প্রকারের হয় , যথা — স্ক্লেরেনকাইমা তন্তু এবং স্ক্লেরাইড । 

স্ক্লেরেনকাইমা তন্তু :

i ) স্ক্লেরেনকাইমা তন্তুর কোশগুলি দেখতে লম্বা এবং দু -প্রান্ত  ছুঁচলো । 

ii ) কোশপ্রাচীর সমভাবে স্থূল এবং প্রায়ই লিগনিন যুক্ত হয় । 

iii ) কোশপ্রাচীর অত্যন্ত স্থূল হওয়ায় কোশ মধ্যস্থ গহ্বর খুবই  ক্ষুদ্র হয় । 

iv ) এদের কোশান্তর স্থান থাকে না । 

v ) প্রস্থচ্ছেদে কোশগুলিকে বহুভুজাকৃতি দেখায় । 

vi ) এই তন্তু জাইলেম কলার সঙ্গে অবস্থান করলে তখন তাকে কাষ্ঠল তন্তু ( Wood fibers ) এবং ফ্লোয়েম কলার সঙ্গে অবস্থান করলে তখন তাকে বাস্ট তন্তু ( bast fibres ) বলে । 

vii ) পাট , শণ ইত্যাদি স্লেরেনকাইমা তন্তুর উদাহরণ ।

স্ক্লেরেনকাইমা তন্তুর প্রকারভেদ :

পৃষ্ঠদেশ তন্তু ( Surface fibres ) : এই প্রকার তন্তুগুলি ফলের ত্বকে ও বীজত্বকে উৎপন্ন হয় । তুলাের বীজত্বকে এবং নারকেলের মধ্যত্বকে এই তন্তু বর্তমান । 

কাষ্ঠল তন্তু ( Wood fibres ) : জাইলেম কলার সঙ্গে অবস্থিত স্ক্লেরেনকাইমা তন্তুকে কাষ্ঠল তন্তু বলে । এই তন্তু দু-প্রকারের , যথা— 

( a ) লিবরিফরম তন্তু ( Libriform fibres ) : এই প্রকার জাইলেম তন্তুগুলি পুরু কোশপ্রাচীর ও সরল কূপ যুক্ত হয় । 

( b ) তন্তু ট্রাকিড ( Fibre tracheids ) : এই প্রকার জাইলেম তন্তুগুলি অপেক্ষাকৃত পাতলা প্রাচীর বিশিষ্ট , খর্বকায় ও সপাড় কূপ যুক্ত হয় । 

বাস্ট তন্তু ( Bast fibres ) : এগুলি জাইলেম বহির্ভূত তন্তু ( extra – xylary fibres ) নামেও পরিচিত । এই তন্তুগুলি জাইলেম ব্যতীত অন্যান্য কলাতে , যেমন বহিঃস্তর , পরিচক্র , ফ্লোয়েম প্রভৃতি অংশে থাকে । যেমন- Cannabis sativa- এর পরিচক্রে ; Corchorus capsularis , Hibiscus cannabinus প্রভৃতি উদ্ভিদের ফ্লোয়েমে অবস্থান করে । 

স্ক্লেরাইড বা স্ক্লেরােটিক কোশ ( Sclereids or sclerotic cells ) : 

i ) স্ক্লেরাইড কোশগুলি দেখতে ডিম্বাকার , গােলাকার , তারকাকার বা স্তম্ভকার হয় । 

ii ) স্ক্লেরাইড কোশের কোশপ্রাচীরে লিগনিন , কিউটিন , সুবেরিন সঞ্চিত হওয়ায় এটি অত্যন্ত স্থূল ও শক্ত হয় । 

iii ) স্ক্লেরাইডের প্রাচীর খুব শক্ত হওয়ায় এদের প্রস্তর কোশ ( stone cell ) বলে । 

iv ) কোশপ্রাচীরে শাখান্বিত বা শাখাবিহীন নালিকাযুক্ত কূপ বর্তমান । পেয়ারা , নাসপাতি ইত্যাদির ফলের শাঁসে ; মটর , মুগ ইত্যাদি বীজের বীজত্বকে ; শালুক , পদ্ম ইত্যাদি গাছের কাণ্ডের কোশে স্ক্লেরাইড বর্তমান ।

স্ক্লেরাইডের প্রকারভেদ :

1. ব্র্যাকিস্ক্লেরাইড ( Brachysclerieds ) : এই প্রকার স্ক্লেরাইড খর্বাকার এবং সমব্যাস বিশিষ্ট । এই প্রকার স্ক্লেরাইড কর্টেক্স , মজ্জা , ফ্লোয়েম এবং আপেল , নাসপাতি , পেয়ারা ইত্যাদি ফলের শাঁসে বর্তমান । 

2. অ্যাসট্রোস্ক্লেরাইড ( Astrosclerieds ) : এই প্রকার স্ক্লেরাইড শাখান্বিত ও তারকাকৃতি হয় । পদ্ম , শালুক , চা প্রভৃতির পাতায় দেখা যায় ।

3. ম্যাক্রোস্ক্লেরাইড ( Macrosclerieds ) : এগুলি স্তম্ভকার বা দণ্ডাকৃতির স্ক্লেরাইড । এগুলাে মুগ , মটর প্রভৃতি বীজের বীজত্বকে বর্তমান । 

4. অসটিওস্ক্লেরাইড ( Osteosclerieds ) : এগুলি স্ফীত উভয় প্রান্তবিশিষ্ট অস্থির মতাে স্ক্লেরাইড । এগুলাে শম্বিগােত্রীয় উদ্ভিদের বীজের ত্বকে , হাকিয়া ( Hakea ) নামক উদ্ভিদের পাতায় দেখা যায় । 

5. ট্রাইকোস্ক্লেরাইড ( Trichosclerieds ) : এই প্রকার স্ক্লেরাইড দেখতে অনেকটা তন্তুর মতাে এবং শাখান্বিত । কিছু জলজ উদ্ভিদের পত্রবৃন্তে , জলপাই -এর পাতায় , মনসটেরা ( Monstera ) উদ্ভিদের বায়বীয় মূলে ট্রাইকোস্ক্লেরাইড বর্তমান । 

স্ক্লেরেনকাইমা টিস্যুর কাজ

i ) উদ্ভিদকে দৃঢ়তা প্রদান করে । 

ii ) প্রবল বায়ু প্রবাহের সময় উদ্ভিদদেহে যে চাপ , টান ইত্যাদি পড়ে , তা থেকে উদ্ভিদকে রক্ষা করে এই কলা । 

iii ) বীজত্বকে ও ফলত্বকে অবস্থিত স্ক্লেরেনকাইমা তন্তু ফল ও বীজের বিস্তারে সাহায্য করে ।

error: Content is protected !!