প্যারেনকাইমা কাকে বলে
Contents
প্যারেনকাইমা কাকে বলে

যে সরল স্থায়ী কলার সজীব কোশগুলির কোশপ্রাচীর পাতলা , সেলুলােজ দিয়ে গঠিত এবং কোশগুলি গােলাকার বা ডিম্বাকার বা বহুভুজাকার ও কোশান্তর রন্ধ্র যুক্ত হয় তাকে প্যারেনকাইমা টিস্যু বা প্যারেনকাইমা কলা বলে ।
প্যারেনকাইমা টিস্যুর অবস্থান
উদ্ভিদের বেশিরভাগ অংশেই এই কোলা অবস্থিত থাকে । উদ্ভিদের মূল , কান্ড , পাতা , ফুল , ফল প্রভৃতির নরম অংশে প্যারেনকাইমা দেখা যায় । শৈবাল ও মস জাতীয় উদ্ভিদ কেবল প্যারেনকাইমা কোশ দিয়ে তৈরী ।
প্যারেনকাইমা টিস্যুর বৈশিষ্ট্য
( i ) কোশগুলি সজীব ।
( ii ) কোশপ্রাচীর সেলুলােজ নির্মিত ও পাতলা ।
( iii ) কোশে প্রচুর পরিমাণ সাইটোপ্লাজম থাকে ।
( iv ) সুগঠিত নিউক্লিয়াস থাকে ।
( v ) কোশগুলির মধ্যে কোশগহ্বর ও প্লাসটিডের উপস্থিতি লক্ষ করা যায় ।
( vi ) বিশেষ কোনাে কোনাে জায়গায় এই কলার কোশে ক্লোরােপ্লাস্টিড থাকে । এই প্রকার কলাকে ক্লোরেনকাইমা ( Chlorenchyma ) বলে ।
( vii ) অনেক জলজ উদ্ভিদের প্যারেনকাইমা কোশগুলির মধ্যে বায়ুগহ্বর থাকে । এই কলাকে এরেনকাইমা ( Aerenchyma ) বলে । সাধারণত কচুরিপানা , শালুক প্রভৃতি উদ্ভিদের পত্রবৃন্তে এরেনকাইমা থাকে ।
( viii ) অনেকগুলি বিশেষ ধরনের প্যারেনকাইমা কোশ বিভিন্ন প্রকার তরল ও কঠিন বর্জ্য পদার্থ ( ট্যানিন , তেল , ক্যালশিয়াম অক্সালেট দানা ইত্যাদি ) সঞ্চয় করে । এদের ইডিওব্লাস্ট ( Idioblast ) বলে ।
প্যারেনকাইমা টিস্যুর প্রকারভেদ
বিভিন্ন প্রকার কাজের জন্য প্যারেনকাইমা কলার নিম্নলিখিত বিভিন্ন প্রকার রূপান্তর দেখা যায় , যেমন—
এপিডার্মিস ( Epidermis ) :
প্যারেনকাইমা কলার কোশ উদ্ভিদ দেহের বহির্দেশে আবরণী সৃষ্টি করে , এদের এপিডার্মিস বলে । সব ফুল , পাতা , তরুণ কাণ্ড ও মূল এপিডারমিস দিয়ে আবৃত থাকে ।
ক্লোরেনকাইমা ( Chlorenchyma ) :
পাতার মেসােফিল কলা ও কচি কান্ডের বহিঃস্তরে বর্তমান প্যারেনকাইমা কলার কোশগুলিতে ক্লোরােপ্লাস্ট থাকে ; ক্লোরােপ্লাস্ট সমন্বিত প্যারেনকাইমাকে ক্লোরেনকাইমা বলে । পাতার মেসোফিল কলা , সবুজ কান্ড ও কান্ডের ত্বকে পাওয়া যায় । ক্লোরেনকাইমা সালােকসংশ্লেষে অংশগ্রহণ করে ।
এরেনকাইমা ( Aerenchyma ) :
বেশিরভাগ জলজ উদ্ভিদ এবং কিছু সংখ্যক স্থলজ উদ্ভিদের পত্রবৃন্তের ( যেমন — কলা ) প্যারেনকাইমা কোশের অন্তঃকোশীয় স্থান ( intercellular space ) আকারে বেশ বড়াে হয় এবং সেখানে বায়ু জমা থাকে , এই রকম প্যারেনকাইমাকে এরেনকাইমা বলে । এরেনকাইমা জলজ উদ্ভিদকে ভাসন ক্ষমতা প্রদান করে । এ ছাড়া এরেনকাইমা গ্যাসীয় আদানপ্রদানে সাহায্য করে । শালুক , কচুরি পানা প্রভৃতি উদ্ভিদের পত্রবৃন্তে এই কলা দেখা যায় ।
প্রোসেনকাইমা ( Prosenchyma ) :
যখন প্যারেনকাইমা কোশগুলি লম্বাটে ও স্থূল প্রাচীর বিশিষ্ট হয় , তখন এদের প্রােসেনকাইমা বলে । এই কলা উদ্ভিদকে যান্ত্রিক শক্তি প্রদান করে ।
জাইলেম ও ফ্লোয়েম প্যারেনকাইমা ( Xylem and Phloem parenchyma ) :
জাইলেম ও ফ্লোয়েম কলায় অবস্থানকারী প্যারেনকাইমাকে যথাক্রমে জাইলেম ও ফ্লোয়েম প্যারেনকাইমা বলে । এগুলি জল ও খনিজ লবণ পরিবহণে সহায়তা করে ।
ইডিওব্লাস্ট ( Idioblast ) :
যেসব প্যারেনকাইমা কোশ ট্যানিন , তেল , ক্যালশিয়াম অক্সালেট কেলাস প্রভৃতি উৎপন্ন করে ও সঞ্চয় করে রাখে , তাদের ইডিওব্লাস্ট বলে । বটপাতার ফলকে ও কচুপাতার বৃন্তের প্যারেনকাইমা কোশগুলিতে খনিজ কেলাস এবং অন্যান্য উদ্ভিদে ট্যানিন , তেল প্রভৃতি বর্জ্য পদার্থ সঞ্চিত থাকে ।
সাকুলেন্ট প্যারেনকাইমা ( Succulent parenchyma ) :
কিছু কিছু জাঙ্গল উদ্ভিদে প্যারেনকাইমা কোশ বিশেষভাবে পরিবর্তিত হয়ে জল সঞ্চয় করে রাখে ; এই রকম প্যারেনকাইমাকে সাকুলেন্ট প্যারেনকাইমা বলে ।
প্যারেনকাইমা টিস্যুর কাজ
( i ) মূল , কান্ড ও পাতার ত্বকে এই কলা থাকে এবং ভিতরের অংশগুলিকে রক্ষা করে ।
( ii ) উদ্ভিদের দেহ গঠনে সক্রিয় ভূমিকা গ্রহণ করে ।
( iii ) ক্লোরােপ্লাস্ট যুক্ত প্যারেনকাইমা ( ক্লোরেনকাইমা ) খাদ্য তৈরি করে ।
( iv ) জল ও খাদ্য পরিবহন করে ।
( v ) মূল , কান্ড , পাতা , ফল ও বীজে খাদ্য সঞ্চয় করতে পাবে । এদের সঞ্চয়ী প্যারেনকাইমাও বলে ।
( vi ) বায়ু গহ্বর যুক্ত প্যারেনকাইমা ( এরেনকাইমা ) উদ্ভিদকে জলে ভেসে থাকতে সাহায্য করে ।
( vii ) উদ্ভিদের ক্ষতস্থান নিরাময়ে এদের ভূমিকা বিশেষ উল্লেখযােগ্য ।
( viii ) এই কলা খাদ্য সংবহনের ( জাইলেম প্যারেনকাইমা ) কাজ করে ।
( ix ) জল সঞ্চিত করে রাখা ও ক্ষরণে অংশ গ্রহণ করা প্রভৃতি হল এদের প্রধান কাজ ।