ব্যাকটেরিয়ার অর্থনৈতিক গুরুত্ব
Contents
ব্যাকটেরিয়ার অর্থনৈতিক গুরুত্ব

জীবজগতে ব্যাকটেরিয়ার গুরুত্ব অপরিসীম । নীচে কতকগুলি ব্যাকটেরিয়ার অর্থনৈতিক গুরুত্ব অর্থাৎ উপকারিতা এবং অপকারিতা আলােচনা করা হল ।
ব্যাকটেরিয়ার উপকারী ভূমিকা ( Beneficial role of Bacteria )
উদ্ভিদের খাদ্য প্রস্তুতিতে :
ব্যাকটেরিয়ার ভূমিকা কতকগুলি ব্যাকটেরিয়া মৃত জীবদেহের পচনক্রিয়া ঘটিয়ে তাদের দেহাবশেষ মাটির সঙ্গে মিশিয়ে উদ্ভিদের গ্রহণযােগ্য খাদ্য তৈরি করতে পারে ।
জমির উর্বরতা বৃদ্ধি :
রাইজোবিয়াম ( Rhizobium ) , ক্লসট্রিডিয়াম ( Clostridium ) , অ্যাজোটোব্যাক্টর ( Azotobacter ) প্রভৃতি ব্যাকটেরিয়া নাইট্রোজেন স্থিতিকরণ ( Netrogeration ) পদ্ধতিতে মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি করে । ক্লসট্রিডিয়াম ও অ্যাজোটোব্যাক্টর মাটিতে বসবাস করে এবং স্বাধীনজীবী রাইজোবিয়াম মটর , ছােলা প্রভৃতি উদ্ভিদের মুলের অর্বুদে ( Nodule ) বাস করে । এই মিথােজীবী ব্যাকটেরিয়া বায়ু থেকে নাইট্রোজেন নিয়ে মাটিতে মিশিয়ে উর্বরতা বাড়ায় ।
সালফার ব্যাকটেরিয়ার ভূমিকা :
থিওব্যাসিলাস ( Thiobacillus ) নামে সালফার ব্যাকটেরিয়া H2S থেকে H2SO4 প্রস্তুত করে । এই H2SO4 মাটির মধ্যে সালফেটে পরিণত হয় এবং উদ্ভিদ তা গ্রহণ করে ।
ভিনিগার উৎপাদন :
অ্যাসিটোব্যাক্টর অ্যাসিটি ( Acetobacter aceti ) কোহলকে অ্যাসিটিক অ্যাসিডে পরিণত করে ভিনিগার প্রস্তুতিতে সহায়তা করে ।
কাগজ শিল্পে :
কাগজ শিল্পে ব্যাসিলাস সাবটিলিস ( Bacillus subtilis ) নামে ব্যাকটেরিয়া কার্বোহাইড্রেট জাতীয় বস্তু থেকে পেকটিন উৎপন্ন করে ।
পাট শিল্পে :
ক্লসট্রিডিয়াম বিউট্রিকাম ( Clostridium butyricum ) নামে ব্যাকটেরিয়া মৃতজীবী । এরা জলে পাট গাছের পেকটিক পদার্থকে ভেঙে তন্তু নিষ্কাশনে সহায়তা করে ।
চা ও তামাক শিল্পে :
ব্যাসিলাস মেগাথেরিয়াম ( Bacillus megaterium ) ব্যাকটেরিয়া চা ও তামাক সুগন্ধিকরণে ব্যবহার করা হয় ।
ভিনিগার প্রস্তুতে :
কতকগুলি ব্যাকটেরিয়া শর্করা জাতীয় দ্রবণে কোহল সন্ধান ঘটিয়ে ভিনিগাব প্রস্তুতে সহায়তা করে । উদাহরণ — অ্যাসিটোব্যাক্টর ( Acetobacter )।
পরিবেশ দূষণ মুক্ত করতে :
সাধারণত বিভিন্ন প্রকার বর্জ্য পদার্থ , যেমন— মৃত জীবজন্তু , আবর্জনা , গাছের পাতা , কাপড় , চামড়া , কাগজ জাতীয় পদার্থ , মল-মূত্র , ছাই প্রভৃতি পরিবেশ দূষণ ঘটায় । এ সব পদার্থকে নানারকম ব্যাকটেরিয়া বিশ্লেষিত করে পরিবেশ দূষণ মুক্ত করে । এই সব বর্জ্য পদার্থ থেকে জৈব সার উৎপাদন করা যায় । জৈব সারের মধ্যে নাইট্রোজেন , ফসফেট ও অনুখাদ্য থাকে যা উদ্ভিদের বৃদ্ধির জন্য প্রয়ােজন ।
জীবদেহে মিথােজীবী হিসাবে :
ই. কোলাই ( E. coli ) , ব্যাসিলাস কোলাই ( B. coli ) প্রভৃতি ব্যাকটেরিয়া মানুষ ও অন্যান্য প্রাণীর ক্ষুদ্রান্ত্রে বসবাস করে । এশেরিকিয়া কোলাই ভিটামিন B12 সংশ্লেষ করে । ব্যাসিলাস কোলাই খাদ্য পরিপাকে বিশেষ সাহায্য করে । তৃণভােজী প্রাণীর পরিপাকনালিতে ট্রাইকোডরমা কোনিগী ( Tricioderma conigi ) ব্যাকটেরিয়া সেলুলেজ উৎসেচক উৎপন্ন করে সেলুলােজ পরিপাকে সাহায্য করে ।
জামাকাপড়ের দাগ তুলতে ব্যাকটেরিয়ার ভূমিকা :
ব্যাকটেবিয়া থেকে তৈরি প্রােটিয়েজ উৎসেচক জামাকাপড়ের দাগ তুলতে ব্যবহার করা হয় ।
প্রাকৃতিক গ্যাস উৎপাদনে :
মিথেন গ্যাস মিথেনােব্যাসিলাস ( Methano – bacillus ) ব্যাকটেরিয়ার সাহায্যে উৎপন্ন হয় । এর গােবর , পুকুর ও জলার মৃত জৈব পদার্থে উৎপন্ন হয় ।
পতঙ্গের জৈবিক নিয়ন্ত্রণে :
ব্যাসিলাস জাতীয় ব্যাকটেরিয়া ক্ষতিকারক পতঙ্গের লার্ভাগুলিকে ধ্বংস করে । একে জৈবিক নিয়ন্ত্রণ ( Biological Control ) বলা হয় । উদাহরণ— bacillus thuringiensis ।
ব্যাকটেরিয়ার অপকারী ভূমিকা ( Harmful role of Bacteria )
রােগ সৃষ্টি :
( i ) মানুষের দেহে নিউমােনিয়া , যক্ষ্মা , টাইফয়েড , কলেরা , উদরাময় প্রভৃতি রােগ ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণে দেখা দেয় ।
( ii ) উদ্ভিদের বিভিন্ন রকমে রােগ ব্যাকটেরিয়ার মাধ্যমে হয় , যেমন — কুমড়াে গাছে উইল্ট ( wilt ) , লেবু জাতীয় গাছে ক্যাঙ্কার ( Canker ) , আলুর রিংরট ( Ringrot ) , টম্যাটোর ক্যাঙ্কার , ধান ও সিম এর লেট ব্লাইট ( Late blight ) প্রভৃতি ।
( iii ) অন্যান্য প্রাণীর রােগও ব্যাকটেরিয়ার মাধ্যমে হয় । যেমন — গবাদি পশুর যক্ষ্মা , ভেড়ার অ্যানথ্রাক্স , ছাগল ও ভেড়ার কলেরা প্রভৃতি ।
খাদ্যের বিষাক্তকরণ :
স্ট্যাফাইলোকক্কাস ( Staphylococcus ) , ক্লস্ট্রিডিয়াম ( Clostridium ) প্রভৃতি ব্যাকটেরিয়া কোশ থেকে টক্সিন ক্ষরণ করে শাকসবজি , দুধ , ফুল ও নানারকম খাবার নষ্ট করে ।
জমির উর্বরতা হ্রাসে :
ভেজা মাটিতে সিউডোমোনাস , মাইক্রোকক্কাস নামে এক বিশেষ ব্যাকটেরিয়া থাকে । এরা মাটির নাইট্রোজেন বায়ুতে মুক্ত করে মাটির উর্বরতা হ্রাস করে ।