ব্যাকটেরিয়া কাকে বলে
Contents
ব্যাকটেরিয়া কাকে বলে

ব্যাকটেরিয়ার বিভিন্ন সংজ্ঞা প্রচলিত আছে , যেমন 一
1. সরল এককোশী আদি নিউক্লিয়াস যুক্ত , উদ্ভিদ বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন ক্ষুদ্রতম আণুবীক্ষণিক জীব , যারা সর্বত্র বিরাজমান তাদের ব্যাকটেরিয়া বলে ।
2. মাইক্রোব নামে পরিচিত সর্বত্র বিরাজমান সরলতম এককোশী আণুবীক্ষণিক কোশপ্রাচীর যুক্ত জীবকে ব্যাকটেরিয়া বলা হয় ।
প্রায় 300 বছর আগে অণুবীক্ষণ যন্ত্রের আবিষ্কারক , ওলন্দাজ বিজ্ঞানী লিউয়েন হক ( Leeuwen Hock , 1676 ) সর্বপ্রথম জীবাণু আবিষ্কারের ঘটনা জানান । নিজের হাতে তৈরি অত্যন্ত সরল এক অণুবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্যে এক বিন্দু জল পরীক্ষার সময় কতকগুলি অতিক্ষুদ্র জীবের অস্তিত্ব উপলব্ধি করেন । তিনি এই জীবাণুর বর্ণনা দেন ও নামকরণ করেন , “ অতিক্ষুদ্র দন্ডাকৃতি প্রাণী ” ।
বিজ্ঞানী এহরেনবার্গ ( Ehrenberg , 1828 ) ব্যাকটেরিয়া নামকরণ করেন ।
আজ পর্যন্ত প্রায় 2500 রকম ব্যাকটেরিয়া শনাক্তকরণ ও এদের বিবরণ লিপিবদ্ধ করা হয়েছে । আজকাল বিজ্ঞানের একটি বিশেষ শাখাকে ব্যাকটেরিওলজি ( Bacteriology ) বলা হয় । এই শাখা অধ্যয়ন করলে ব্যাকটেরিয়া সম্বন্ধে বিশদভাবে জানা যায় ।
ব্যাকটেরিয়ার বৈশিষ্ট্য ( Characteristic of Bacteria )
( i ) ব্যাকটেরিয়া এক ধরনের অতি ক্ষুদ্র এককোশী আণুবীক্ষণিক জীব ।
( ii ) এদের দেহে নির্দিষ্ট কোশপ্রাচীর থাকে । আবার কিছু সংখ্যক ব্যাকটেরিয়ার কোশপ্রাচীরের বাইরে একটি পিচ্ছিল স্তর থাকে ।
( iii ) কোশে নিউক্লিয়াস থাকে না । শুধু একটি প্যাঁচানো DNA তন্তু থাকে । একে ব্যাকটেরিয়ার ক্রোমোজোম বলে । এই প্রকার অনুন্নত নিউক্লিয়াসকে আদি বা প্রোক্যারিওটিক নিউক্লিয়াস বলে ।
( iv ) ব্যাকটেরিয়ায় মাইটোকন্ড্রিয়া এবং ভ্যাকুওল থাকে না , কিন্তু মেসােজোম ও 70S রাইবােজোম থাকে ।
( v ) সাধারণত কোশে ক্লোরােফিল থাকে না । তাই এবা পরজীবী , মৃতজীবী বা মিথােজীবী । সামান্য কিছু ব্যাকটেরিয়াতে ব্যাকটেরিও ক্লোরোফিল থাকে । তাই এরা সালােকসংশ্লেষ প্রক্রিয়ায় খাদ্য তৈরি করতে পারে । উদাহরণ – ক্লোরােবিয়াম ( Chlorobium )
( vi ) ব্যাকটেরিয়ায় শ্বসন প্রক্রিয়া ঘটে । অবাত ও সবাত উভয় প্রক্রিয়া দেখা গেলেও বেশির ভাগ ব্যাকটেরিয়াতে অবাত শ্বসন প্রক্রিয়া চলে । শ্বসন প্রক্রিয়া সাইটোপ্লাজমীয় পর্দা ও কোশ প্রাচীরের মধ্যবর্তী স্থান থেকে নিঃসৃত এক প্রকার উৎসেচকের সহায়তায় ঘটে ।
( vii ) ব্যাকটেরিয়ার কোশ মাইটোসিস পদ্ধতিতে বিভাজিত হয় না । এরা প্রধানত অ্যামাইটোসিস পদ্ধতিতে বিভক্ত হয় ।
( viii ) এরা প্রধানত কোশ বিভাজন ও রেণুর ( Spore ) সাহায্যে বংশ বৃদ্ধি করে । বিশেষ ধরনের যৌন জনন বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়াতে দেখা যায় ।
( ix ) বহু ব্যাকটেরিয়া পরজীবী হিসাবে উদ্ভিদ ও প্রাণী দেহে নানারকম রােগ সৃষ্টি করে এবং আবার বহু ব্যাকটেরিয়া আছে উদ্ভিদ ও প্রাণীর উপকার সাধন করে ।
( x ) ব্যাকটেরিয়া মাটি থেকে জৈব বস্তু অপসারণ এবং মাটির নাইট্রোজেন সংযােজন ঘটায় । এরা মাটির উর্বরতা রক্ষা করে । মাটি থেকে জৈব বস্তু অপসারণ এবং মাটির নাইট্রোজেন সংযােজন করে ।
( xi ) অ্যালকোহল তৈরি করতে এবং নানা প্রকার অ্যান্টিবায়োটিক ( antibiotic ) ওষুধ তৈরিতে ব্যাকটেরিয়া ব্যবহার করা হয় ।
ব্যাকটেরিয়াকে আদি জীব বা প্রোক্যারিওটিক বলার কারণ
ব্যাকটেরিয়াকে আদি জীব বা প্রোক্যারিওটিক বলার কারণগুলি হল 一
( i ) ব্যাকটেরিয়াতে নিউক্লিয়াস নেই ।
( ii ) কোশীয় অঙ্গাণু দেখা যায় না ।
( iii ) রাইবােজোম 70s প্রকৃতির হয় ।
( iv ) সুগঠিত নিউক্লিয়াস নেই ।
( v ) কোশ বিভাজন অ্যামাইটোসিস পদ্ধতিতে ঘটে । মাইটোসিস প্রক্রিয়ায় বিভাজন দেখা যায় না ।
ব্যাকটেরিয়াকে উদ্ভিদ বলার কারণ ( Reasons for considering Bacteria as Plants )
ব্যাকটেরিয়াকে উদ্ভিদ বলার কারণগুলি হল 一
( i ) ব্যাকটেরিয়াতে উদ্ভিদের মতাে কোশপ্রাচীর আছে ।
( ii ) ফটোট্রপিক ব্যাকটেরিয়া উদ্ভিদের মতাে ক্লোরােফিল দিয়ে খাদ্য সংশ্লেষ করে ।
( iii ) উদ্ভিদের মতাে অঙ্গজ জনন পদ্ধতি দেখা যায় ।
( iv ) উদ্ভিদের মতাে ভিটামিন সংশ্লেষ করতে পারে ।
( v ) ব্যাপন ও অভিস্রবণ পদ্ধতিতে উদ্ভিদের মতাে খাদ্য গ্রহণ করে ।
( vi ) অজৈব নাইট্রোজেন থেকে ব্যাকটেরিয়ার কোশ সব রকম অ্যামাইনাে অ্যাসিড সংশ্লেষ করতে পারে ।
( vii ) কিছু ব্যাকটেরিয়া বায়বীয় নাইট্রোজেন স্থিতিকরণ করতে পারে ।
ব্যাকটেরিয়াই জৈব বিবর্তনে সর্বাপেক্ষা প্রাচীন — এরূপ মনে হওয়ার কারণ
( i ) প্রায় 50 কোটি বছর আগে আর্কিওজোয়িক যুগে ব্যাকটেরিয়ার উদ্ভব হয়েছিল ।
( ii ) এদের প্রকৃত নিউক্লিয়াস নেই ।
( iii ) এদের রাইবােজোম 70s প্রকৃতির হয় ।
( iv ) এদের লাইসােজোম নেই ।
( v ) জনন প্রক্রিয়া প্রাচীন ধরনের ।
( vi ) প্রায় সব জায়গাতেই এদের দেখা যায় ।
( vii ) অনেক ব্যাকটেরিয়া অক্সিজেন ছাড়া বাঁচতে পারে ।
( viii ) বহু ব্যাকটেরিয়া বাতাসের নাইট্রোজেনকে স্থিতিকরণ করতে পারে । এই সব কারণের জন্য জৈব বিবর্তনে ব্যাকটেরিয়া প্রাচীন ।
জীবজগতে ব্যাকটেরিয়ার স্থান ( Position of Bacteria in Living Organism )
কিছু কিছু ব্যাকটেরিয়া ফ্লাজেলার সাহায্যে চলতে পারে বলে অনেকে এদের প্রাণীগােষ্ঠীভুক্ত মনে করেন । কিন্তু কন্ ( Cohn ) ব্যাকটেরিয়ার নির্দিষ্ট কোশপ্রাচীর , নীলাভ সবুজ শৈবালের সঙ্গে প্রকৃতিগত ও অন্তর্গঠনে মিল থাকায় , এদের উদ্ভিদ গোষ্ঠী বলে মনে করেন । অন্য গােষ্ঠীর বিজ্ঞানীরা এদের আদি জীবগােষ্ঠীর ( Protista ) অন্তর্ভুক্ত করেছেন । ডি বেরী ( de Barry ) ব্যাকটেরিয়াকে সমাঙ্গদেহী উদ্ভিদের মধ্যে একটি বিশেষ শ্রেণিভুক্ত করেন । বর্তমানে ব্যাকটেরিয়াকে আদি নিউক্লিয়াসযুক্ত জীব ( Prokaryota organism ) গােষ্ঠীভুক্ত করা হয়েছে ।
ব্যাকটেরিয়ার অবস্থান ( Occurrence of Bacteria )
ব্যাকটেরিয়া পৃথিবীর সর্বত্র অর্থাৎ জলে , স্থলে ও অন্তরীক্ষে দেখা যায় । সুউচ্চ পর্বতশৃঙ্গ থেকে সমুদ্রের অতল গভীরে , উষ্ণ প্রস্রবণ থেকে ঠাণ্ডা বরফাবৃত জায়গায়ও ব্যাকটেরিয়া থাকে । বিভিন্ন খাদ্যদ্রব্য , ফলমূল , বস্ত্র , উদ্ভিদ ও প্রাণীদেহে , মানুষের মুখগহ্বর , শ্বাসনালি , অন্ত্র প্রভৃতিতেও ব্যাকটেরিয়া দেখা যায় । -190°C থেকে 75°C পর্যন্ত উষ্ণতা ব্যাকটেরিয়া সহ্য করতে পারে । সাধারণত এরা প্রাণী ও উদ্ভিদদেহে মৃতজীবী বা পরজীবী হিসেবে অবস্থান করে । সুগভীর নলকূপে ও প্রবল বৃষ্টির জলে ব্যাকটেরিয়া পাওয়া যায় না । কতকগুলি ব্যাকটেরিয়ার বাসস্থান নীচে দেওয়া হল ।
1. মাটিতে বসবাসকারী ব্যাকটেরিয়া — নাইট্রোসোমোনাস ( Nitrosomonas ) , নাইট্রোব্যাকটার ( Nitrobacter ) , অ্যাজোটোব্যাকটার ( Azotobacter ) , রাইজোবিয়াম ( Rhizobium ) প্রভৃতি ।
2. জলে বসবাসকারী ব্যাকটেরিয়া — সালমোনেলা টাইফোসা ( Salmonella Typhosa ) , ক্লসট্রিডিয়াম টিটানি ( Clostridium tetani ) , ভিব্রিও কোমা ( Vibrio comma ) প্রভৃতি ।
3. বাতাসে বিচরণকারী ব্যাকটেরিয়া — ব্যাসিলাস সাবটিলিস ( Bacillus subtilis) , ক্লসট্রিডিয়ামের কয়েকটি প্রজাতি ( Some species of Clostridium ) , সারসিনা লুটিয়া ( Sarcina lutea ) প্রভৃতি ।
4. দুধে বসবাসকারী ব্যাকটেরিয়া — ল্যাকটোব্যাসিলাস ( Lactobacillus ) , স্ট্রেপটোকক্কাস ল্যাকটিস ( Streptococcus lactis ) , এসচিরিচিয়া কোলাই ( Escherichia coli ) , অ্যারােব্যাকটার অ্যারােজেনস ( Aerobacter aerogens ) ইত্যাদি ।
5. মাংস ও ডিমে বসবাসকারী ব্যাকটেরিয়া — প্রােটিয়াস ( Proteus ) , সিউডোমোনাস ( Pseudomonas ) প্রজাতি প্রভৃতি ।
6. মানুষের দেহে রোগ সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়া — সালমোনেলা টাইফি ( Citronella typhi ) , ভিব্রিও কলেরি ( Vibrio cholerae ) , মাইকোব্যাকটেরিয়াম টিউবারকিউলোসিস ( Mycobacterium tuberculosis ) ইত্যাদি ।
7. উদ্ভিদ দেহে রোগ সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়া — জ্যান্থোমােনাস সাইট্রি ( Xanthomonas citri ) , জ্যান্থোমােনাস ওরাইজি ( xanthomonas oryzae ) , করিনিব্যাকটেরিয়াম সেপিডােনিকাম ( corynebacterium sepidonicum ) প্রভৃতি ।
ব্যাকটেরিয়ার আয়তন ( Size of Bacteria )
ব্যাকটেরিয়া জীবের মধ্যে সবচেয়ে ছােটো । সর্বাপেক্ষা ছােটো ব্যাকটেরিয়া মানুষের শ্বাসনালিতে রােগ সৃষ্টি করে । এর নাম ডায়ালিস্টার নিউমােসিন্টেস ( Dialister pneumosintes ) , এর লম্বায় 0.15μm । সবচেয়ে বড়াে ব্যাকটেরিয়া হল ব্যাসিলাস বুটসচিল্লি ( bacillus butschlii ) এরা লম্বায় 80μm পর্যন্ত হতে পারে । দন্ডাকার ব্যাকটেরিয়া চওড়ায় 0.2 – 3μm এবং লম্বায় 0.3 – 10μm পর্যন্ত হয় । সর্পিলাকার ব্যাকটেরিয়া লম্বায় প্রায় 500μm পর্যন্ত হতে পারে । স্পাইরিলাম জাতীয় ব্যাকটেরিয়া চওড়ায় 2 – 3μm এবং লম্বায় 10 – 15μm পর্যন্ত হয় । সাধারণত রােগসৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়ার ব্যাস 0.2 – 10μm পর্যন্ত হয় ।
ব্যাকটেরিয়া সম্বন্ধীয় কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য
1. ব্যাকটেরিয়া শব্দটি প্রথম ব্যবহার করেন — এহরেনবার্গ ( Ehrenberg. 1828 ) ।
2. ক্ষুদ্রতম ব্যাকটেরিয়া — Dialister pneumosintes ( 0.15μm লম্বা )
3. সবচেয়ে বড়াে ব্যাকটেরিয়া — Bacillus Butschlii ( 80μm লম্বা )
4. বহুরূপতা ( Pleomorphism ) — পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে চলার জন্য অনেক সময় ব্যাকটেরিয়ার আকৃতির পরিবর্তন ঘটে । একে বহুরূপতা বলে ।
SIR,
ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়ার পার্থক্য দিলে খুব উপকৃত হতাম
Thank you