জীবন বিজ্ঞান

ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস এর সংজ্ঞা বৈশিষ্ট্য ও গঠন

Contents

ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস এর সংজ্ঞা বৈশিষ্ট্য ও গঠন

index 15
ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস এর সংজ্ঞা বৈশিষ্ট্য ও গঠন

যে ভাইরাসের মাধ্যমে ইনফ্লুয়েঞ্জা রােগ সংক্রমণ ঘটে তাকে ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস বলে । 

ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস এর বৈশিষ্ট্য

1. ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস প্রাণী ভাইরাসের অন্তর্ভুক্ত একপ্রকার রাইবো ভাইরাস । এদের অর্থোমিক্সোভাইরাসও ( Orthomyxovirus ) বলে । 

2. এদের আকৃতি গােলাকার এবং পরিধি 80nm-120nm । 

3. এদের বহিরাবরণ অর্থাৎ ক্যাপসিডের বাইরে প্রােটিন-লিপিড নির্মিত এনভেলপ বর্তমান । তাই এদের লিপোভাইরাস বলে । 

4. এনভেলপের ওপরে গ্লাইকোপ্রােটিন নির্মিত অসংখ্য স্পাইক ( spike ) বা কীলক বর্তমান । 

5. প্রােটিনের প্রকারভেদে এরা তিন প্রকারের , যথা— A , B ও C। এর মধ্যে A স্ট্রেন ( strain ) -এর বিস্তৃতি ও রােগ সৃষ্টি করার ক্ষমতা বেশি ।

6. ক্যাপসিডের মধ্যে ৪ টি নেগেটিভ ( – ) একতন্ত্রী RNA -র স্ট্র্যান্ড থাকে । 

ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস এর গঠন

ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস এনভেলপ যুক্ত ; গােলাকার আকৃতি বিশিষ্ট ভাইরাস । এদের আয়তন 80nm-120nm | এদের আকৃতি পরিবর্তনশীল ( pleomorphic ) । এদের দেহ প্রধান তিনটি অংশে বিভক্ত , যথা — ক্যাপসিড , এনভেলপ এবং নিউক্লিওয়েড ।

ক্যাপসিড ( Capsid ) :

ভাইরাস দেহের বাইরের আবরণটিকে ক্যাপসিড বলে । এটি প্রধানত প্রােটিন দিয়ে গঠিত । ক্যাপসিড কতকগুলি উপ-একক দিয়ে গঠিত , এদের ক্যাপসসামিয়ার ( capsomere ) বলে । ক্যাপসসামিয়ার গুলি সর্পিলাকারে বিন্যস্ত ( helical symmetry ) থাকে । এই অংশ প্রােটিয়েজ উৎসেচকের প্রতি সংবেদনশীল । ক্যাপসিড নিউক্লিওয়েডকে রক্ষা করে । 

এনভেলপ ( Envelope ) : 

ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের ক্যাপসিডের বাইরে প্রােটিন-লিপিড নির্মিত একটি স্তর থাকে , একে এনভেলপ বলে । এই স্তরটি 10–18μm পুরু হয় । এনভেলপের বহিস্থ অংশটি লিপিড এবং কেন্দ্রস্থ অংশটি প্রােটিন দ্বারা গঠিত । প্রােটিন স্তরের উপরিতলে গ্লাইকোপ্রােটিন নির্মিত অসংখ্য স্পাইক ( spike ) বা কীলক বর্তমান । কীলকগুলি দু প্রকারের , যথা — হিমাগ্লুটিনিন ( haemagglutinin ) বা H এবং নিউরামিনিডেজ ( neuraminidase ) বা N কীলক । H কীলকগুলি লােহিতকণিকার সংস্পর্শে এলে লােহিতকণিকার দলবদ্ধকরণে ( agglutination ) সাহায্য করে । N কীলকগুলির সাহয্যে এরা সংক্রমণের সময় পােষক কোশ গাত্র চিনে নিয়ে আটকাতে পারে । H ও N কীলকগুলি অ্যান্টিজেন হিসেবে কাজ করে এবং অ্যান্টিবডি সৃষ্টিতে উদ্দীপনা জোগায় ।

মানবদেহ সংক্রমণকারী ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের হিমাগ্লুটিনিন বা H অ্যান্টিজেন 4 প্রকারের— H-O , H-1 , H-2 এবং H-3 এবং নিউরামিনিডেজ বা N অ্যান্টিজেন 2 প্রকারের N-1 এবং N-2 । দুটি ভিন্ন অ্যান্টিজেন যুক্ত ভাইরাসের মধ্যে সংকরায়ণের ফলে নিয়তই এদের অ্যান্টিজেন বৈশিষ্ট্যের পরিবর্তন লক্ষ করা যায় , একে অ্যান্টিজেনিক শিফট ( antigenic shift ) বলে । ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য । এর ফলে অনেক সময়ই মানুষের অনাক্রম্যতন্ত্র ( immune system ) ভাইরাসটিকে চিনে নিতে পারে না এবং ইনফ্লুয়েঞ্জা মহামারির ( epidemic ) আকার ধারণ করে । বহির্গাত্রে অ্যান্টিজেন ছাড়াও এনভেলপের ভিতর বর্তমান রাইবােনিউক্লিওপ্রােটিন অভ্যন্তরীণ অ্যান্টিজেন হিসেবে কাজ করে । এদের RNP অ্যান্টিজেন বলে । বহিস্থ অ্যান্টিজেন অভ্যন্তরীণ অ্যান্টিজেন অপেক্ষা কম পরিবর্তনশীল । এনভেলপ প্রােটিন স্তরের ভিতরের দিকে ‘ M ’ প্রােটিন থাকে যা সমগ্র লিপিড স্তরসমেত সামগ্রিকভাবে এনভেলপকে দৃঢ়তা জোগায় ।

নিউক্লিওয়েড ( Nucleoid ) 

ক্যাপসিড মধ্যস্থ অংশকে নিউক্লিওয়েড বলে । এটি নিউক্লিক অ্যাসিড দ্বারা গঠিত । এইজন্য একে ভাইরাস জিনোমও বলা হয় । ক্যাপসিডের ভিতর পৃথক আণবিক ভর যুক্ত ( molecular wt. ) 8 টি নেগেটিভ ( – ) একতন্ত্রী RNA এর স্ট্র্যান্ড ( strand ) থাকে । এগুলি সাধারণত 10,000 13,000 নিউক্লিওটাইড সমন্বিত । এদের প্রত্যেকটি স্ট্র্যান্ড পৃথক পৃথক জিন বহন করে এবং ভিতরে RNA পলিমারেজ উৎসেচক তৈরির জিন থাকে । নেগেটিভ RNA স্ট্র্যান্ডগুলি mRNA সংশ্লেষের জন্য টেমপ্লেট হিসাবে কাজ করে । ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস পােষক কোশে প্রবেশ করার পর রেপ্লিকেজ উৎসেচক সংশ্লেষ করে । এই উৎসেচকের সাহায্যে সরাসরি ‘জিনােমিক RNA‘- র অসংখ্য প্রতিলিপি গঠন করে । বংশবিস্তারের প্রতিটি পর্যায়ে এদের নিয়ত জিনের পুনর্বিন্যাস ঘটতে দেখা যায় । যার ফলে ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের বৈশিষ্ট্য ও সংক্রমণ ক্ষমতার পরিবর্তন সচরাচর লক্ষ করা যায় । 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!