ভাইরাসের গঠন আলোচনা করো
Contents
ভাইরাসের গঠন আলোচনা করো

একটি সংক্রমণযোগ্য ভাইরাস কণাকে ভিরিয়ন ( Virion ) বলে । ভাইরাসের গঠনগত প্রধান দুটি উপাদানকে ক্যাপসিড ( প্রােটিন ) ও নিউক্লিক অ্যাসিড বলে ; এদের নিউক্লিওক্যাপসিড বা নিউক্লিওপ্রোটিন কণাও বলা হয় । প্রাণী ভাইরাসের ক্ষেত্রে সাধারণত নিউক্লিওক্যাপসিড কণার বাইরে একটি বহিরাবরণ থাকে , একে এনভেলপ ( Envelope ) বলে । স্বল্প কয়েকটি ক্ষেত্রে ভাইরাসের দেহে কয়েকটি উৎসেচকের সন্ধান পাওয়া গেছে ।
ক্যাপসিড ( Capsid )
ভাইরাস দেহে কেন্দ্রস্থ নিউক্লিক অ্যাসিডকে ঘিরে থাকা প্রােটিন আবরণকে ক্যাপসিড বলে । ক্যাপসিড অসংখ্য একক নিয়ে গঠিত এদের ক্যাপসসামিয়ার ( capsomere ) বলে । ক্যাপসিড গঠনে ক্যাপসােমিয়ারের সজ্জাক্রমে প্রতিসাম্য ( symmetry ) লক্ষ করা যায় । ক্যাপসিড প্রতিসাম্য দুই প্রকারের — সর্পিলাকার ( helical ) এবং ঘনকাকার বা বহুতলক ( cuboidal or icosahedral ) । বহুতলক বিশিষ্ট ক্যাপসিডে ক্যাপসসামিয়ার দু-প্রকারের হয় , যথা — পেন্টামার ( pentamer ) এবং হেক্সামার ( hexamer ) । এরা যথাক্রমে 5 টি ও 6 টি মনোমার এককের গুচ্ছ নিয়ে গঠিত হয় ।
সাধারণত ক্যাপসিড প্রােটিন দ্বারা গঠিত হলেও ক্ষেত্র বিশেষে তারতম্য লক্ষ করা যায় । TMV তে প্রােটিন ছাড়া 2.5% শর্করা এবং 2.5% অন্যান্য যৌগ থাকে । ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসে স্নেহপদার্থ ও শ্বেতসার থাকে । ভ্যাকসিনিয়া ভাইরাসে প্রােটিনের সঙ্গে স্নেহপদার্থ , শর্করা , ভিটামিন-রাইবোফ্ল্যাভিন ও বায়ােটিন থাকে ।
ক্যাপসিডের কাজ
নিউক্লিওয়েডকে রক্ষা করা ক্যাপসিডের প্রধান কাজ । ভাইরাস-ক্যাপসিড পােষক দেহ আক্রমণের সময় গ্রাহক স্থানে ( receptor site ) যুক্ত হতে সাহায্য করে । এছাড়া ক্যাপসিড অ্যান্টিজেন হিসেবে কাজ করে ।
*** ক্যাপসিড বিহীন ভাইরাস : ক্যাপসিড বিহীন ভাইরাস সংক্রমণযােগ্য নগ্ন RNA যুক্ত হয় , এদের ভাইরয়েড ( viroid ) বলে । যথা — পটেটো স্পিন্ডল টিউবার ভাইরাস ( PSTV ) , রাউস ভাইরাস ( Rous virus ) ইত্যাদি ।
নিউক্লিওয়েড ( Nucleoid )
ক্যাপসিড মধ্যস্থ নিউক্লিক অ্যাসিডকে নিউক্লিওয়েড বলে । নিউক্লিওয়েড সর্বদাই যেকোনাে একপ্রকার নিউক্লিক অ্যাসিড ( DNA অথবা RNA ) নিয়ে গঠিত । ভাইরাসের ক্ষেত্রে DNA দ্বিতন্ত্রী ( ds DNA ) এবং একতন্ত্রী ( ss DNA ) উভয় প্রকারের হয় আবার RNA- ও একতন্ত্রী ( ss RNA ) এবং দ্বিতন্ত্রী ( ds RNA ) উভয় প্রকারের হয় । দ্বিতন্ত্রী DNA যুক্ত ভাইরাস হল T2 , T4 , ফাজ ভাইরাস , একতন্ত্রী DNA ভাইরাস হল কলিফাজ fd , ф x 174 ইত্যাদি । একতন্ত্রী RNA যুক্ত ভাইরাস হল TMV । দ্বিতন্ত্রী RNA যুক্ত ভাইরাস হল রিও ভাইরাস ।
সাধারণত একটিমাত্র নিউক্লিক অ্যাসিড অণু নিয়ে নিউক্লিওয়েড গঠিত হয় তবে কোনাে কোনাে ক্ষেত্রে একাধিক অণু বর্তমান থাকে যথা — রেট্রো ভাইরাসে দুই অণু একতন্ত্রী RNA থাকে । আবার ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসে একতন্ত্রী RNA 8 টি খণ্ড ( segmented ) যুক্ত হয় । সাধারণত সকল RNA ভাইরাসে এবং অধিকাংশ DNA ভাইরাসে নিউক্লিক অ্যাসিড রৈখিক ( linear ) প্রকৃতির হয় তবে সিমিয়ন ভাইরাস 40 ( Simian virus 40 ) এবং ф x 174 ভাইরাসে DNA চক্রাকার ( circular ) । আবার ব্যাকটেরিওফাজ λ ( lamda ) তে DNA রৈখিক হয় কিন্তু পােষক কোশে প্রবেশের পর চক্রাকার হয়ে যায় ।
নিউক্লিওয়েড সাধারণত কয়েক সহস্র নিউক্লিওটাইড জোড়া থেকে 2,50000 নিউক্লিওটাইড জোড়া ( bp ) পর্যন্ত হয় । জিনের সংখ্যা 10 থেকে কয়েক শত পর্যন্ত জানা গেছে । ভাইরাস নিউক্লিক অ্যাসিড পলিঅ্যামিন বা অন্তঃস্থ প্রােটিন দ্বারা কুন্ডলিত অবস্থায় থাকে ।
নিউক্লিওয়েড এর কাজ
নিউক্লিওয়েড হল ভাইরাসের বংশগতি বস্তু । পােষক দেহ সংক্রমণ এবং প্রতিলিপি গঠনে নিউক্লিওয়েড প্রধান ভূমিকা পালন করে ।
এনভেলপ ( Envelope )
কিছু সংখ্যক প্রাণী ভাইরাস এবং খুব স্বল্প সংখ্যক উদ্ভিদ ও ব্যাকটেরিয়াল ভাইরাসে ক্যাপসিডের বাইরে একটি 10-15 nm পুরু আবরণী থাকে , একে এনভেলপ বলে । এনভেলপ প্রােটিন ( ভাইরাস থেকে প্রাপ্ত ) , লিপিড এবং শর্করা ( পােষক থেকে প্রাপ্ত ) নিয়ে গঠিত । এনভেলপের গঠনগত একককে পেলপােমিয়ার ( Pelpomere ) বলে । এনভেলপ যুক্ত ভাইরাসকে লিপোভাইরাস ( Lipovirus ) বলে । এনভেলপের বহিঃতল মসৃণ অথবা কাঁটা যুক্ত হতে পারে , কাঁটা গুলিকে স্পাইক ( spike ) বলে । স্পাইক উৎসেচক বা অ্যান্টিজেন যুক্ত হতে পারে । এনভেলপ যুক্ত ভাইরাস হল HIV , হারপিস ভাইরাস , ভ্যাকসিনিয়া ভাইরাস প্রভৃতি । এনভেলপ বিহীন ভাইরাসকে নগ্ন ভাইরাস ( Naked virus ) বলে ।
উৎসেচক ( Enzymes )
ভাইরাসের দেহে সর্বদা উৎসেচক থাকে না । যে সকল ক্ষেত্রে উৎসেচকের উপস্থিতি লক্ষ করা যায় সেগুলি হল ব্যাকটেরিওফাজের ক্ষেত্রে লাইসোজাইম , ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসে নিউরামিনিডেজ অন্যান্য উৎসেচকের মধ্যে আছে RNA পলিমারেজ , RNA ট্রান্সক্রিপটেজ , রিভার্স ট্রান্সক্রিপ্টেজ ইত্যাদি ।
*** ভাইরাসের বাইরে প্রোটিন আবরণের সার্থকতা
( i ) প্রােটিন আবরণ ভাইরাসের নিউক্লিক অ্যাসিডকে সুরক্ষিত রাখে ।
( ii ) এটি অ্যান্টিজেন সমৃদ্ধ হওয়ায় ভাইরাসকে নির্দিষ্ট পােষকের সঙ্গে সংলগ্ন হতে সাহায্য করে ।
( ii ) এতে উৎসেচক থাকায় পােষক কোশে নিউক্লিক অ্যাসিড প্রবেশে সহায়তা করে ।