উদ্ভিদ জগতের শ্রেণীবিন্যাস
Contents
উদ্ভিদ জগতের শ্রেণীবিন্যাস

উদ্ভিদ জগতের সাধারণ শ্রেণীবিভাগ ( General Clastification of Plant Kingdom )
পৃথিবীর সমস্ত প্রকার উদ্ভিদ নিয়ে গঠিত হয়েছে উদ্ভিদ জগৎ । উদ্ভিদ জগৎকে প্রধান দুটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে , যথা –
1. অপুষ্পক বা ক্রিপটোগ্যামস ( Cryptogams ) এবং
2. সপুষ্পক বা ফ্যানারােগ্যামস ( Phanerogams ) ।
অপুষ্পক ( Cryptogams ) :
যেসব উদ্ভিদের ফুল , ফল ও বীজ গঠিত হয় না তাদের অপুষ্পক উদ্ভিদ বলে । এদের তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে , যথা —
i. থ্যালােফাইটা ,
ii. ব্রায়ােফাইটা এবং
iii. টেরিডোফাইটা ।
i. থ্যালোফাইটা বা সমাঙ্গদেহী ( Thallophyta ) : এদের দেহ মূল , কাণ্ড ও পাতায় বিভক্ত নয় । ক্লোরােফিলের উপস্থিতি অনুসারে এরা দুভাগে বিভক্ত যথা —
শৈবাল ( Algae ) : এরা ক্লোরোফিল যুক্ত , স্বভােজী সমাঙ্গদেহী উদ্ভিদ । স্পাইরোগাইরা ( Spirogyra — সূত্রাকার শৈবাল ) , ক্ল্যামাইডােমােনাস ( Chlamydomonus — এককোশী শৈবাল ) , ভলভক্স ( Volvox — উপনিবেশ গঠনকারী শৈবাল )।
ছত্রাক ( Fungi ) : এরা ক্লোরােফিল বিহীন , মৃতজীবী বা পরজীবী সমাঙ্গদেহী । ইস্ট ( Saccharomyces — এককোশী ছত্রাক ) , মিউকর ( Mucor — অণু সূত্রাকার ছত্রাক ) , পেনিসিলিয়াম ( Penicillium ) , অ্যাগারিকাস ( Agaricus ) ইত্যাদি ।
ii. ব্রায়ােফাইটা ( Bryophyta ) : এরা ‘ মস ’ জাতীয় উদ্ভিদ , এদের দেহে কাণ্ড ও পাতা এবং মূল থাকে না । এদের মূলের পরিবর্তে রাইজয়েড থাকে । এদের দেহে ক্লোরােফিল থাকায় এরা স্বভােজী । সংবহন কলাতন্ত্র অনুপস্থিত এবং জননাঙ্গ বহু কোশযুক্ত হয় । পােগােনেটাম ( Pogonatun ) , রিকসিয়া ( Riccia ) , মারক্যানসিয়া ( Marchantia ) , পলিট্রিকাম ( Polytrichum ) ইত্যাদি কয়েকটি সাধারণ মস ।
iii. টেরিডােফাইটা ( Pteridophyta ) : এরা ‘ ফার্ন ’ জাতীয় উদ্ভিদ । এদের দেহে মূল , কাণ্ড ও পাতা উপস্থিত । এদের ক্লোরােফিল থাকায় এরা স্বভােজী । অপুষ্পক উদ্ভিদদের মধ্যে ফার্ন সর্বাপেক্ষা উন্নত , কারণ এদের দেহে সংবহন কলাতন্ত্র উপস্থিত। ড্রায়ােপটেরিস ( Dryopteris ) , মারসিলিয়া ( Marsilea — শুশনি ) , লাইকোপােডিয়াম ( Lycopodium ) , সেলাজিনেলা ( Selaginella ) ফার্ন জাতীয় উদ্ভিদ ।
সপুষ্পক ( Phanerogam ) :
যেসব উদ্ভিদের ফুল , ফল ও বীজ গঠিত হয় , তাদের সপুষ্পক উদ্ভিদ বলে । ফলের উৎপত্তি অনুসারে সপুষ্পক উদ্ভিদদের দুভাগে ভাগ করা হয়েছে , যথা ( i ) ব্যক্তবীজী ও ( ii ) গুপ্তবীজী ।
( i ) ব্যক্তবীজী ( Gymnosperm ) : এইপ্রকার উদ্ভিদের ফল সৃষ্টি না হওয়ায় বীজগুলি নগ্ন প্রকৃতির হয় । সাইকাস ( Cycas ) , পাইনাস ( Pinus ) , নিটাম ( Gnetum ) ব্যক্তবীজী উদ্ভিদ ।
( ii ) গুপ্তবীজী ( Angiosperm ) : এইপ্রকার উদ্ভিদের ফল সৃষ্টি হওয়ায় বীজগুলি ফলের মধ্যে আবৃত থাকে । বীজপত্রের সংখ্যা অনুসারে এরা দুরকমের , যথা — একবীজপত্রী ও দ্বিবীজপত্রী ।
একবীজপত্রী ( Monocotyledonous ) : যেসব উদ্ভিদের বীজে একটি বীজপত্র থাকে , তাদের একবীজপত্রী উদ্ভিদ বলে । যেমন — ধান , ভুট্টা , গম , তাল , সুপারি , নারকেল ইত্যাদি ।
দ্বিবীজপত্রী ( Dicotyledonous ) : যেসব উদ্ভিদের বীজে দুটি বীজপত্র থাকে , তাদের দ্বিবীজপত্রী উদ্ভিদ বলে । যেমন — আম , জাম , কাঁঠাল , মটর , ছােলা , রেড়ি , পাট , কলা ইত্যাদি ।
কোশ সংস্থান অনুসারে উদ্ভিদের শ্রেণিবিন্যাস ( Classification according to Cytological basis )
স্টেনিয়ার ( Stanier ) , নিয়েল ( Niel – 1962 ) এবং রাউন্ড ( Round , 1965 ) প্রমুখ কোশ বিজ্ঞানীরা কোশ সংস্থান অনুসারে জীব জগতকে নিম্নরুপে শ্রেণিবিভাগ করেছেন—
পুষ্টি অনুসারে উদ্ভিদ জগতের শ্রেণিবিভাগ ( Classification of Plant Kingdom on the basis of Nutrition ) :
পুষ্টি অনুসারে উদ্ভিদ জগত গুলি হল—
স্বভােজী পুষ্টি সম্পন্নকারী উদ্ভিদ : যে উদ্ভিদ নিজেদের পুষ্টি নিজেরাই সম্পন্ন করতে পারে । উদাহরণ – শৈবাল , মস , ফার্ন , ব্যক্তবীজী ও গুপ্তবীজী উদ্ভিদ সমূহ ।
পরভােজী পুষ্টি সম্পন্নকারী উদ্ভিদ : যেসব উদ্ভিদ নিজেদের পুষ্টি সম্পন্ন করতে পারে না । যেমন —
i. মৃতজীবী উদ্ভিদ
ii. পরজীবী উদ্ভিদ
iii. মিথোজীবী উদ্ভিদ
iv. পতঙ্গভুক উদ্ভিদ
i. মৃতজীবী উদ্ভিদ : যেসব উদ্ভিদ মৃত জৈব বস্তু থেকে পুষ্টিরস সংগ্রহ করে পুষ্টি সম্পন্ন করে , তাদের মৃতজীবী উদ্ভিদ বলা হয় যেমন – বিভিন্ন প্রকার ছত্রাক ।
ii. পরজীবী উদ্ভিদ : যেসব উদ্ভিদ অন্য কোন সজীব পোষক উদ্ভিদ থেকে পুষ্টি রস শোষণ করে পুষ্টি সম্পন্ন করে , তাদের পরজীবী উদ্ভিদ বলা হয় । যেমন স্বর্ণলতা , র্যাফ্লেসিয়া , ফাইটোপথােরা , পাক্সিনিয়া ।
iii. মিথােজীবী উদ্ভিদ : যেসব উদ্ভিদ পুষ্টির জন্য অপর কোনাে জীবের সাহচর্যে জীবন ধারণ করে , তাদের মিথোজীবী উদ্ভিদ বলা হয় । যেমন – লাইকেন , রাইজোবিয়াম ।
iv. পতঙ্গভুক উদ্ভিদ : যেসব উদ্ভিদ নাইট্রোজেন ঘটিত প্রােটিন খাদ্যের জন্য পতঙ্গদের দেহ থেকে পুষ্টিরস শােষণ করে , তাদের পতঙ্গভুক উদ্ভিদ বলা হয় । যেমন – কলশপত্রী , ড্রসেরা , পাতাঝাঁজি ।