জীবন বিজ্ঞান

প্রাচীন ভারতীয় জীববিজ্ঞানে সুশ্রুত এর অবদান

প্রাচীন ভারতীয় জীববিজ্ঞানে সুশ্রুত এর অবদান

index 9
প্রাচীন ভারতীয় জীববিজ্ঞানে সুশ্রুত এর অবদান

বেদের বক্তব্য অনুসারে সুশ্রুত ঋষি বিশ্বামিত্রের পুত্র ছিলেন । মনে করা হয় তিনি কাশীরাজ ধন্বন্তরির মতান্তরে দিবােদাসের নিকট চিকিৎসাশাস্ত্র শিক্ষা করেন এবং পরে কাশী বিশ্ববিদ্যালয়ে শল্যবিদ্যা বিশারদ হিসাবে কাজ করেন । সুশ্রুতের স্থায়িত্বকাল বৈদিক যুগের মাঝামাঝি থেকে শেষভাগ পর্যন্ত ব্যাপ্ত ছিল । 

হােয়ের্নলের মতে , সুশ্রুত খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতকে জন্মগ্রহণ করেন । সুশ্রুতের রচনা সুশ্রুত সংহিতা নামে পরিচিত । যদিও এই রচনাটি সুশ্রুতের একাধিক শিষ্য কর্তৃক পরিবর্তিত হয়েছে । সুশ্রুত তার সংহিতায় সমগ্র জীবন্ত বস্তুকে দুটি গােষ্ঠীতে ভাগ করেছেন । যথা 一

( ক ) স্থাবর ( Sthavara = Immobile ) অর্থাৎ অনড় , উদাহরণ — উদ্ভিদ ।

( খ ) জঙ্গম ( Jangama = Mobile ) অর্থাৎ চলনশীল । উদাহরণ — সকল প্রাণী । উদ্ভিদদের আবার চারটি উপবিভাগ আছে । যেমন ,

( i ) বনস্পতি ( Vanaspati ) : অপুষ্পক উদ্ভিদ । 

( ii ) বৃক্ষ ( Vriksa ) : পুষ্পক , ফলদায়ী বৃক্ষ । 

( iii ) বিরুদ্ধ ( Virudha ) : গুল্ম এবং আরােহী । 

( iv ) ঔষধি ( Osadhi ) : ফল পেকে গেলে যে গাছ মারা যায় ।

সশ্রুত সংহিতায় গাছের বিভিন্ন অংশের ও বর্ণনা পাওয়া যায় । যেমন , অঙ্কুর ( Ankura ) = ভ্ৰূণ ( sprout ) , মূল ( Mula ) = মূল ( root ) , কাণ্ড ( Kanda ) = stem ; পত্র ( Patra = the leaf ) , পুষ্প ( Pushpa = the flower ) এবং ফল ( Phala = the fruit ) । সুশ্রুত সংহিতায় প্রাণীকে নিম্নলিখিত ভাগে বিভাজিত করা হয়েছে । 

( i ) কুলকারা ( Kulacara ) : নদীর তীরে বিচরণশীল শাকাশী , হস্তী , মহিষ প্রভৃতি প্রাণী । 

( ii ) মৎস্য ( Matsya ) : মাছ । 

( iii ) জঙ্গল ( Janghala ) : হরিণ জাতীয় চতুষ্পদ তৃণভােজী প্রাণী । 

( iv ) গুহাশয় ( Guhasaya ) : বাঘ এবং সিংহের মত মাংসাশী চতুষ্পদ প্রাণী । 

উদ্ভিদ এবং প্রাণীদের বর্ণনা ছাড়াও সুশ্রুত সংহিতা থেকে জানা যায় সে মানুষের অঙ্গ সংস্থান বিদ্যায় সে যুগে তিনি ছিলেন অগ্রগণ্য ব্যক্তিত্ব । সুশ্রুত সংহিতায় মৃত মানুষের অঙ্গের ব্যবচ্ছেদ সহ প্লাস্টিক সার্জারির মতাে আধুনিক চিকিৎসারও উদাহরণ পাওয়া যায় । শল্য পদ্ধতিতে চোখের ছানি অপসারণের মতাে জটিল চিকিৎসা , নকল নাসিকা সংস্থাপন করা যা রাইনোপ্লাস্টি ( rhinoplasty ) নামে পরিচিত সেই কাজেও সুশ্রুত অতীব দক্ষ ছিলেন । তাই সুশ্রুতকে শল্য চিকিৎসার জনক নামে অভিহিত করা হয় । উনবিংশ শতাব্দীতে সুশ্রত সংহিতা ল্যাটিন , জার্মান , ইংরেজি প্রভৃতি ভাষায় অনুবাদ হয় ।

সুশ্রুতের শল্যবিদ্যা 

অর্থব বেদ এবং আয়ুর্বেদে শল্য চিকিৎসার উল্লেখ থাকলেও সুশ্রুত এই বিষয়টির প্রভূত উন্নতি ঘটান । তাঁর পুস্তকে প্রায় 121 টি শল্য যন্ত্রের উল্লেখ পাওয়া যায় । বর্তমানে শল্যবিদ্যায় ব্যবহার হয় এমন অনেক যন্ত্রই সুশ্রুতের শল্যযন্ত্রের আধুনিকতম রূপ হিসাবে গণ্য করা যায় । 

*** সুশ্রুত শল্য চিকিৎসার জনক । 

*** সুশ্রুতের বিখ্যাত রচনার নাম সুশ্রুত সংহিতা । 

*** সুশ্রুত সংহিতায় মােট 66 টি অধ্যায় আছে । এদের মধ্যে চিকিৎসা বিষয়ক অধ্যায়টি 7 টি ভাগে বিভক্ত । 

*** সুশ্রুতের পুস্তকে 121 টি শল্যযন্ত্রের উল্লেখ আছে ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!