জীববিদ্যা কাকে বলে
জীববিদ্যা কাকে বলে

যে বিজ্ঞানে জীব সম্পর্কিত সকল জ্ঞান লাভ করা যায় এবং যে বিদ্যায় জীবের সকল জৈবনিক ক্রিয়া সম্বন্ধে , পরিবেশের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক , তাদের অভিযােজন ও বিবর্তন সম্বন্ধে জানা যায় তারই নাম জীববিদ্যা ।
যে সব বিজ্ঞানী জীব বিদ্যার বিভিন্ন শাখায় গবেষণা করেন তাদের জীব বিজ্ঞানী বলে । তাঁদের গবেষণা ও অনুসন্ধিৎসার ফলেই অতীতের ও বর্তমানের বহু উদ্ভিদ ও প্রাণী সম্বন্ধে আমরা জেনেছি ও নিয়ত জানতে পারছি । বিজ্ঞানীদের নিরলস সাধনার ফলেই বিজ্ঞানের জীববিদ্যা ( Biology ) নামক একটি শাখার সৃষ্টি হয়েছে । এই বিজ্ঞান থেকে মানুষসহ সকল জীবদের জীবন ও জীবনের কার্যাবলী সম্বন্ধে জানা যায় বলে একে জীবনের বিজ্ঞানও বলে ।
জীব বিদ্যার বিষয়ে নানা তথ্য প্রাচীন ভারতের ও গ্রিক দেশের বিজ্ঞানীদের গবেষণা থেকে জানা যায় । ফরাসি বিজ্ঞানী ল্যামার্ক যার পুরাে নাম জাঁ ব্যাপ্টিস্ট ডা মােনেট ল্যাম্যার্ক ( Jean Baptiste de Monet Lamarck ) প্রথম 1801 খ্রিস্টাব্দে ‘ Biology ‘ শব্দটির প্রণয়ন ও প্রবর্তন করেন । জীববিদ্যার বিজ্ঞান বিষয়ক সকল শব্দই নেওয়া হয়েছে গ্রিক ও ল্যাটিন ভাষা থেকে । প্রতিটি শব্দই অঙ্গের গঠনগত অথবা কাজের নির্দেশ করে । যেমন— Biology শব্দটির বিশ্লেষণ করলে পাওয়া যায় , গ্রিক শব্দ Bios এর অর্থ Life বা জীবন ; logos এর অর্থ discourse বা জ্ঞান , একত্রে জীবন সম্বন্ধে জ্ঞান ।
জীববিদ্যার বিস্তার
কোনাে বিষয় সম্বন্ধে বিশেষরূপে জ্ঞানার্জনই বিজ্ঞান । জীববিজ্ঞানও এর অন্যথা নয় । জীববিজ্ঞানেও পর্যবেক্ষণ ( observation ) , বিশ্লেষণ ( analysis ) , আলােচনা ( discussion ) প্রভৃতির মাধ্যমে কোনাে তথ্য সম্বন্ধে সঠিক মতে ( conclusion ) উপনীত হওয়াই বিজ্ঞানীগণের প্রাথমিক কর্তব্য । বর্তমানে পরীক্ষার ফলাফল এবং পরিসংখ্যান সূত্রের ( statistical formula ) প্রয়ােগের দ্বারা সত্যাখ্যান ( verification ) করে গ্রহণ করা হয় ।
( ১ ) প্রথমদিকে জীববিদ্যা ছিল একটি বর্ণনামূলক বিজ্ঞান । জীবের ( উদ্ভিদ ও প্রাণী ) বহিরাকৃতির বৈশিষ্ট্য ( external morphology ) , আভ্যন্তরীণ বৈশিষ্ট্য ( internal morphology or anatomical peculiarities ) বর্ণনা করে জীবের জীবজগতে স্থান নির্ণয় করা হতাে । এর বেশি তখন কিছু করা সম্ভব ছিল না , কারণ তখন অণুবীক্ষণ যন্ত্রের ( microscope ) আবিষ্কার হয়নি ।
( ২ ) অণুবীক্ষণ যন্ত্র আবিষ্কারের পর জীববিজ্ঞানের এক নতুন যুগের সূচনা হয় । একদিকে অণুবীক্ষণ যন্ত্রের যত উন্নতি হতে থাকে তার সঙ্গে সমতা রেখে জীববিদ্যার পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণেরও তত উন্নতি হতে থাকে । ইলেকট্রন অণুবীক্ষণ যন্ত্র আবিষ্কারের পর কোশ ও কোশ মধ্যস্থ অঙ্গাণু সম্বন্ধে বিশেষ ধারণা জন্মাতে থাকে । এরই ফলে সৃষ্ট হয় কোষতত্ত্ব ( cytology ) নামক বিষয় । কোশ সম্বন্ধে বিশেষ জ্ঞানার্জনের মাধ্যমেই জানা যায় কোশের জৈব অণুগুলি ( biomolecules ) রসায়ন শাস্ত্র , পদার্থবিদ্যা প্রভৃতির নিয়মেই জৈবিক বিক্রিয়াগুলি করে থাকে । এই তথ্য উৎঘাটনে সৃষ্টি হল জৈব রসায়ন বিদ্যার ( biochemistry ) , জৈব পদার্থ বিদ্যা ( biophysics ) , আণবিক জীববিদ্যা ( molecular biology ) , বংশগতিবিদ্যা ( genetics ) ইত্যাদি ।
অ্যারিস্টটলের সময়ে জীববিদ্যার সঙ্গে ভূগােলের মেলবন্ধনে গড়ে উঠেছিল জীব-ভূগোল বিদ্যা ( bio-geography ) । জীববিদ্যার অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখার সঙ্গে অঙ্কশাস্ত্র থেকে শুরু করে পরিসংখ্যান শাস্ত্র অবধি এর যােগসূত্র স্থাপিত হয় ।
ঊনবিংশ শতাব্দীতে চালর্স ডারউইনের প্রবর্তিত প্রাকৃতিক নির্বাচন মতবাদ , মেন্ডেল প্রবর্তিত বংশগতি মতবাদ জীববিদ্যাকে এক গুরুত্বপূর্ণ আসনে প্রতিষ্ঠিত করে । বিংশ শতাব্দীতে প্রায়ােগিক জীববিদ্যা এমন একটি পর্যায়ে উন্নীত হয় যে একবিংশ শতাব্দীকে জৈব প্রযুক্তির ( biotechnology ) শতক বলে চিহ্নিত করা হয়েছে ।