জল দূষণের কারণ ও ফলাফল
Contents
জল দূষণের কারণ ও ফলাফল

জলের সঙ্গে কোনাে বর্জ্য পদার্থ মিশে যাওয়ার ফলে যদি জল নােংরা হয় এবং জলের ভৌত , রাসায়নিক ও জৈব বৈশিষ্ট্যের পরিবর্তন ঘটে এবং তার ফলস্বরূপ জলজ উদ্ভিদ , প্রাণী ও মানুষের ক্ষতির আশঙ্কা থাকে তাহলে তাকে জল দূষণ বলে ।
জল দূষণের কারণ
জলের দূষকগুলি আসে কেন্দ্রভিত্তিক উৎস ( কলকারখানা , হাসপাতাল , আবাসস্থল , শ্মশান , ভাগাড়ের মতাে নির্দিষ্ট কিছু স্থান থেকে ) এবং অ-কেন্দ্রভিত্তিক উৎস ( শস্য চাষের জমি , ফুলের বাগান , চা বাগান , ময়লা ফেলার জায়গা প্রভৃতি ) অনির্দিষ্ট স্থান থেকে । এসব উৎস থেকে নির্গত দূষক ভূপৃষ্ঠস্থ এবং ভূগর্ভস্থ — উভয় প্রকার জলকেই দূষিত করে ।
শিল্প ও কলকারখানার বর্জ্য পদার্থ :
রং , পেট্রো-রসায়ন , তেলশােধন প্রভৃতি শিল্পের বর্জ্য পদার্থ জলকে সবচেয়ে বেশি দূষিত করে । এসব কারখানা থেকে নির্গত হয় ধাতব পদার্থ , যেমন — তামা , সিসা , ক্রোমিয়াম , দস্তা , পারদ , ক্যাডমিয়াম ; রাসায়নিক পদার্থ , যেমন — অজৈব সালফার যৌগ , ফসফরাস ইত্যাদি এবং প্রােটিন ও স্নেহজাতীয় জৈব পদার্থ , যেমন — তেল , চর্বি , কার্বোহাইড্রেট , গ্রিজ ইত্যাদি । উদাহরণ — হলদিয়া শিল্পাঞ্চলের কাছে হলদি নদীর জল এভাবে দূষিত হচ্ছে ।
গৃহস্থালীর প্রাত্যহিক আবর্জনা :
গৃহস্থালির কাজে ব্যবহৃত জল এবং হােটেল , রেস্তোরা প্রভৃতি থেকে নির্গত জলে খাদ্যদ্রব্যের ফেলে দেওয়া অংশ , তরিতরকারির পচা অংশ , মলমূত্র , সাবান , ডিটারজেন্ট ইত্যাদি মিশে থাকে । রােগজীবাণু , ব্যাকটেরিয়া , প্রােটোজোয়া ইত্যাদি মিশ্রিত এই নােংরা জল নর্দমা , পয়ঃপ্রণালী দিয়ে নদনদী , হ্রদ , খাল বা সমুদ্রের জলে পড়ে ও দূষণ ঘটায় ।
নদৰ্মা নিষ্কাশিত আবর্জনা :
শহরের আবর্জনা , কসাইখানার ময়লা , কলকারখানার ময়লা জল , খাটাল , ভাগাড় ও শ্মশান ধোয়া জলের অধিকাংশই খাল , নদনদী ও জলাশয়কে দূষিত করে । উদাহরণ — কলকাতা মহানগরীর অন্তর্গত আদি গঙ্গা খাল , বাগজোলা খাল বাগবাজার খাল , বেলেঘাটা খালের জল অতিমাত্রায় নােংরা ও দূষিত ।
কৃষিতে ব্যবহৃত রাসায়নিক পদার্থ :
কৃষিজ ফসলের উৎপাদন বাড়ানাের জন্য জমিতে ব্যবহৃত রাসায়নিক সার , কীটনাশক , আগাছা নাশক , ছত্রাক নাশক প্রভৃতি মাটিতে মিশে থাকে । ধৌত প্রক্রিয়ায় এগুলি মাটির নীচে গিয়ে ভূগর্ভস্থ জলকে দূষিত করে । এ ছাড়া কৃষিজমি ধুয়ে আসা জল , পুকুর , জলাশয় , নদীনালায় মিশেও জলকে দূষিত করে ।
পরিপোষক পদার্থ :
স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে বেশি পরিমাণ পরিপােষক বা পুষ্টিকর পদার্থ জলে মিশে থাকলেও তা দূষকরূপে কাজ করে । নাইট্রেট , পটাশ , ফসফরাস ইত্যাদি সার মিশ্রিত জল যা কারখানা , পয়ঃপ্রণালী থেকে কিংবা কৃষিজমি ধুয়ে আসে তা পরিপােষকরূপে কাজ করে । সার মিশ্রিত জলে শ্যাওলা বা আগাছা জাতীয় উদ্ভিদের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি ঘটে । একে ইউট্রোফিকেশন বলে । ফলে জলাশয়ে BOD ( Biological Oxygen Demand ) বেড়ে যায় এবং জলজ উদ্ভিদ ও প্রাণী মরে জলাশয়ের তলদেশে থিতিয়ে পড়ে । ফলে জলাশয় ভরাট হয়ে আসে । সেইসঙ্গে জল দূষিত হয়ে ওঠে । উদাহরণ — কাশ্মীরের ডাল হ্রদ ।
শিল্পকেন্দ্রের উষ্ণ জল দূষণ :
তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র , পরমাণু শক্তি কেন্দ্র , লৌহ-ইস্পাত শিল্পকেন্দ্রের নির্গত উষ্ণ জল জলাশয় , নদীনালা বা হ্রদ যেখানেই পড়ে , সেখানে জলের ভৌত রাসায়নিক ধর্ম ও জৈব উপাদানের পরিবর্তন ঘটায় । ফলে জলজ প্রাণীর মৃত্যু ঘটে ।
খনিজ তেলের মিশ্রণ :
উপকূলবর্তী অঞ্চলে খনিজ তেল উত্তোলনের সময় , তেলবাহী জাহাজ ডুবে গেলে কিংবা জাহাজ , স্টিমার ইত্যাদি থেকে ডিজেল , পিচ্ছিলকারক পদার্থ ইত্যাদি চুইয়ে পড়ে জলে মিশলেও জল দূষিত হয় ।
পলি সঞ্চয় :
কাদা , বালি , পলি দ্বারা জল ঘােলাটে হয় এবং নদীখাতে বসবাসকারী সবুজ উদ্ভিদ ও উদ্ভিদ প্ল্যাটন চাপা পড়ে এবং প্রয়ােজনীয় সূর্যালােকের অভাবে মারা যায় । এভাবে জল দূষিত হয় ।
অম্ল বৃষ্টি :
শিল্পাঞ্চলগুলিতে অম্ল বৃষ্টি হয়ে থাকে । এই বৃষ্টির জল জলাশয় , হ্রদ ও নদীনালার জলকে দূষিত করে ।
পাইরাইট -এর আর্সেনিকে রূপান্তর :
পাললিক শিলায় অবস্থিত পাইরাইট বাতাসের অক্সিজেনের সংস্পর্শে এলে রাসায়নিক বিক্রিয়ায় আর্সেনিকে পরিবর্তিত হয় । ওই আর্সেনিক ভৌম জলকে দূষিত করে । পশ্চিমবঙ্গের নদিয়া জেলার ভৌম জলস্তরে সবচেয়ে বেশি আর্সেনিক পাওয়া গেছে ।
প্রতিমা বিসর্জন :
প্রতিমা বিসর্জনের ফলে প্রতিমায় ব্যবহৃত রং , তেল জলে মিশে জলকে যেমন দূষিত করে তেমনি মাটি , খড় , জলে ছুড়ে ফেলা ফল , ফুল ইত্যাদি উপকরণ জলাশয় বা নদীগর্ভকে ভরাট করে দূষণ ঘটায় ।
তেজস্ক্রিয় পদার্থ :
ইউরেনিয়াম , থােরিয়াম প্রভৃতি তেজস্ক্রিয় পদার্থ উত্তোলন ও শােধনের সময় এর ক্ষতিকারক রশ্মি ও বর্জ্য জল দূষণ ঘটায় ।
জল দূষণের ফলাফল বা প্রভাব
জল দূষণের ফলে মানুষ , সামুদ্রিক উদ্ভিদ ও প্রাণীজগতের ব্যাপক ক্ষতি হয় এবং মাটি দূষিত হয়ে পড়ে । যেমন—
মানুষের ওপর প্রভাব :
দূষিত জল ব্যবহার করার ফলে আন্ত্রিক , আমাশয় , কলেরা , জন্ডিস , টাইফয়েড , চর্মরােগ , কিডনির অসুখ , অ্যালার্জি , এমনকি ক্যানসার পর্যন্ত হতে পারে ।
সামুদ্রিক উদ্ভিদ ও প্রাণী জগতের ওপর প্রভাব :
সামুদ্রিক খাদ্যশৃঙ্খলের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ে বলে ক্ষুদ্র প্ল্যাঙ্কটন থেকে শুরু করে বিভিন্ন আকৃতির মাছ এবং সামুদ্রিক পাখি এর মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত হয় ।
মৃত্তিকার ওপর প্রভাব :
কৃষিকাজে দূষিত জল ব্যবহার করার ফলে মৃত্তিকার ক্ষারকীয়তা বা অম্লতা বৃদ্ধি পায় , উপকারী ব্যাকটেরিয়া ও জীবাণুর ক্ষতি হয় এবং উর্বরতা বিনষ্ট হয় । ফলে ফসলের উৎপাদন হ্রাস পায় ।
Hii guys , I am AK ,,, so very nice note
Very nice Answer 😁👍💝🙏🏻
Thanks
Hmm 😏😏𝑨𝒌,So very nice, S̥ͦo̥ͦ m̾y̾ 🅽︎🅰︎🅼︎🅴︎ 🄸🅂 , ㋛︎N̸o̸b̸i̸r̸u̸l̸,シ︎
Thank you so much 🙏🏻🤗
Thank you
It was such a helpful note…
Hii
Very useful 👍👍
It’s very helpful 👍👍👍
👌👌👌👌👌👌👌👌👌😏😏😏😏😏
খুব ভালো লেখাটা 😊👍👍👍👍
Good ans