অরণ্য ধ্বংসের কারণ
Contents
অরণ্য ধ্বংসের কারণ

বনভূমির আর্থ-সামাজিক ও পরিবেশগত গুরুত্ব অপরিসীম । কিন্তু মানুষ পরিবেশের কথা বিবেচনা না করে মূলত অর্থনৈতিক প্রয়োজনে নির্বিচারে অরন্যের গাছপালা কেটে ফেলছে , কিন্তু সেই তুলনায় বৃক্ষরোপণ করছে না । তাই অরণ্য ক্রমশ ধ্বংস বা নিশ্চিহ্ন হয়ে আসছে । বনসৃজন এর পরিবর্তে অবিবেচনাপ্রসূত বৃক্ষ ছেদনের মাধ্যমে অরণ্যের বিনাশকে বন বিনাশ বা অরণ্য বিনাশ বা অরণ্য ধ্বংস বলা হয় ।
প্রাকৃতিক কারণে বনভূমি যেমন ধ্বংস হয় তেমনি মানুষ নিজের চাহিদা পূরণের জন্যও বনভূমিকে ধ্বংস করে । অরণ্যের বিনাশ পরিবেশ এবং দেশের অর্থনীতির ওপর কুপ্রভাব ফেলে । বিভিন্ন কারণে বনভূমি ধ্বংস হতে পারে ―
অরণ্য ধ্বংসের প্রাকৃতিক কারণ
অরণ্য ধ্বংসের বা অরণ্য বিনাশের প্রাকৃতিক কারণ গুলি হল ―
দাবানল :
বজ্রপাত কিংবা তীব্র গরম বাতাসের প্রবাহে বনভূমিতে আগুন লেগে দাবানলের সৃষ্টি হয় । এতে বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে গাছপালা পুড়ে নষ্ট হয় , পশুপাখি মারা যায় , মাটির ভৌত-রাসায়নিক পরিবর্তন ঘটে এবং সর্বোপরি প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হয় । উদাহরণ : আফ্রিকার সাভানা তৃণভূমি এভাবে দাবানলে ক্ষতিগ্রস্ত হয় ।
ধস :
প্রবল বৃষ্টিপাতের জন্য পাহাড়ি অঞ্চলে ভূমিধস ঘটলে অরণ্য ধ্বংস হয় । উদাহরণ : দার্জিলিং কিংবা উত্তর-পূর্বের পার্বত্য অঞ্চলে এজন্য বনভূমির বিনাশ ঘটেছে ।
ভূমিকম্প :
ভূমিকম্পের ফলে বনভূমি মাটির নীচে চাপা পড়ে যায় ।
লাভা প্রবাহ :
অগ্ন্যুৎপাতের সময় ভূপৃষ্ঠে গরম লাভা প্রবাহের কারণে অরণ্য ধ্বংস হয় ।
অরণ্য ধ্বংসের অর্থনৈতিক ও সামাজিক কারণ
অরণ্য ধ্বংসের বা অরণ্য বিনাশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক কারণ গুলি হল ―
বসতি স্থাপন ও কৃষি জমির সম্প্রসারণ :
উন্নয়নশীল দেশগুলিতে দ্রুতহারে জনসংখ্যা বাড়ছে । খাদ্য ও বাসস্থানের চাহিদা মেটাতে বনভূমি পরিষ্কার করা হচ্ছে । উদাহরণ : পৃথিবীতে এজন্য বছরে প্রায় 25 লক্ষ হেক্টর বনভূমির বিনাশ ঘটছে ।
ঝুম চাষ বা স্থানান্তর কৃষি :
পৃথিবীর উপজাতি বসবাসকারী এলাকাগুলিতে ( বিশেষত দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ সমূহে ) বনভূমি পরিষ্কার করে স্থানান্তর কৃষি ব্যবস্থার প্রচলন আছে । উত্তর-পূর্ব ভারতে এটি ঝুম চাষ নামে পরিচিত । ভারতে এ পর্যন্ত প্রায় 44 লক্ষ হেক্টর বনভূমি এই জাতীয় কৃষিজমিতে রূপান্তরিত হয়েছে । উদাহরণ : ভারতে ওড়িশা রাজ্যে স্থানান্তর কৃষিকাজ সবচেয়ে বেশি হয় ।
বনভূমির পশুচারণ ভূমিতে রূপান্তর :
দুগ্ধজাত দ্রব্য , মাংস ও চামড়ার উত্তরােত্তর চাহিদা বৃদ্ধির জন্য পশুচারণ এলাকার বিস্তৃতির সঙ্গে সঙ্গে বনভূমিও হ্রাস পাচ্ছে । উদাহরণ : ভূমধ্যসাগরীয় ও নাতিশীতােষ্ণ অঞ্চলের মিশ্র কৃষি এলাকায় বনভূমির এরকম পরিবর্তন দেখা যায় ।
নিয়ন্ত্রণহীন পশুচারণ :
সুষ্ঠুভাবে পশুচারণ না হওয়ায় বনভূমি এলাকায় নতুন করে স্বাভাবিক উদ্ভিদ জন্মাতে পারে না । উদাহরণ : অতিরিক্ত পশুচারণের জন্য সাভানা তৃণভূমি ধ্বংস হচ্ছে ।
কাঠ সংগ্রহ :
গৃহস্থালির প্রয়ােজনে , বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে , কাগজ উৎপাদন ও জ্বালানি কাঠ সংগ্রহের জন্য প্রচুর পরিমাণে গাছকাটা হলে অরণ্য ধ্বংস হয় । উদাহরণ : কাগজ শিল্পের জন্য কানাডার তৈগা ( বােরিয়াল ) বনভূমির বিনাশ ঘটছে ।
বহুমুখী নদী পরিকল্পনা :
প্রধানত কৃষিতে জলসেচ ও জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য নদীতে বাঁধ দিয়ে জল ধরে রাখা হয় । এতে বিস্তীর্ণ এলাকা জলে ডুবে থাকে ও বনভূমি নষ্ট হয় । উদাহরণ : দামােদর নদী পরিকল্পনার বিভিন্ন নদী বাঁধ সংলগ্ন বনভূমি নষ্ট হয়েছে ।
নগরায়ণ ও শিল্পায়ন :
শহরের উপকণ্ঠ এলাকায় রিয়েল এস্টেটগুলির জন্য , নতুন শহর ( রাজারহাট নিউটাউন ) গড়ে ওঠার জন্য , শিল্প স্থাপনের জন্য ( পূর্ব মেদিনীপুরের নয়াচরে প্রস্তাবিত কেমিক্যাল হাব ) প্রচুর পরিমাণে বৃক্ষচ্ছেদন হয়ে থাকে ।
আধুনিক কৃষি পদ্ধতি :
বনের নিকটবর্তী কৃষিজমিতে কীটনাশক ও রাসায়নিক সার ব্যবহার করায় পােকামাকড় , ক্ষুদ্র জীব , মাছি প্রভৃতি কৃষিজমি ত্যাগ করে বনের মধ্যে প্রবেশ করে ও গাছপালাকে নষ্ট করে ।
বেআইনি বৃক্ষচ্ছেদন :
বহু অরণ্যাঞ্চলেই বেআইনিভাবে এবং যথেচ্ছ গাছ কাটা হয় । এতে বন বিনাশ ঘটে ।