কৃষ্ণ মৃত্তিকা

কৃষ্ণ মৃত্তিকা

দাক্ষিণাত্য মালভূমির উত্তর-পশ্চিমাংশে মহারাষ্ট্র মালভূমি বা ডেকান ট্র্যাপ অঞ্চলে সবচেয়ে বেশি কৃষ্ণ মৃত্তিকা দেখা যায় । এছাড়া গুজরাতের ব্রোচ , ভাদোদরা ও সুরাত , মধ্যপ্রদেশের পশ্চিমাংশ এবং কর্ণাটকের উত্তরাংশেও কৃষ্ণ মৃত্তিকা লক্ষ করা যায় । সব নিয়ে ভারতের প্রায় ১৭ শতাংশ স্থানে এই মাটি দেখা যায় । 

কৃষ্ণ মৃত্তিকার বৈশিষ্ট্য

কৃষ্ণ মৃত্তিকার প্রধান বৈশিষ্ট্য গুলি হল— 

( ১ ) লাভা জমাট বেঁধে সৃষ্ট ব্যাসল্ট শিলা ক্ষয় হয়ে এই মাটি উৎপন্ন হয়েছে । ব্যাসল্ট শিলার রং কালাে বলে এই মাটির রংও কালাে । এই মাটির আর এক নাম রেগুর । 

( ২ ) এর মধ্যে কাদা ও পলি বেশি থাকে এবং বালি কম থাকে , এজন্য মাটির দানাগুলি খুব সূক্ষ্ম হয় । 

( ৩ ) নাইট্রোজেন ও জৈব পদার্থ কম থাকলেও এই মাটিতে ক্যালশিয়াম , পটাশ , চুন , অ্যালুমিনা ও ম্যাগনেশিয়াম কার্বোনেট আছে বলে মাটি অত্যন্ত উর্বর । 

( ৪ ) এই মাটির জলধারণ ক্ষমতা খুব বেশি । 

( ৫ ) তুলাে চাষ খুব ভালাে হয় বলে এই মাটিকে অনেকে কালাে তুলাে মাটি বলেন । 

( ৬ ) শুধু তুলাে নয় , এই মাটিতে প্রচুর পরিমাণে আখ , চিনাবাদাম , জোয়ার , কমলালেবু , পিঁয়াজ প্রভৃতি উৎপন্ন হয় ।

কৃষির উপর রেগুর মৃত্তিকার প্রভাব 

কৃষ্ণ মৃত্তিকার অপর নাম রেগুর । তেলেগু শব্দ ‘ রেগাডা ’ থেকে এই রেগুর নামের উৎপত্তি । এটি দাক্ষিণাত্য মালভূমির সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ মৃত্তিকা । এই মৃত্তিকায় ফসফরাস , নাইট্রোজেন এবং জৈব পদার্থ কম থাকলেও লােহা , চুন , ম্যাগনেশিয়াম , পটাশ ও অ্যালুমিনা যথেষ্ট পরিমাণে থাকে । এজন্য এই মৃত্তিকা খুবই উর্বর । তা ছাড়া মাটির কণাগুলি খুব সূক্ষ্ম হয় এবং এর জলধারণ ক্ষমতাও বেশি । ফলে রেগুর মাটিতে চাষ-আবাদ খুব ভালাে হয় । বিশেষত তুলাে চাষ খুব ভালাে হয় বলে রেগুরকে ‘ কৃষ্ণ কার্পাস মৃত্তিকা‘ও বলা হয় । 

প্রসঙ্গত উল্লেখ করা যায় যে , রেগুর মৃত্তিকা অঞ্চলেই ভারতের সবচেয়ে বেশি তুলাে উৎপাদিত হয় । তবে কেবলমাত্র তুলাে নয় , এই মৃত্তিকায় আখ , চিনাবাদাম , তিসি , তামাক , পিঁয়াজ , কমলালেবু প্রভৃতি ফসলও প্রচুর পরিমাণে উৎপন্ন হয় । প্রকৃতপক্ষে , দাক্ষিণাত্যের রেগুর মৃত্তিকা অঞ্চল ভারতের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কৃষি সমৃদ্ধ এলাকা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!