ভূগোল

ক্রান্তীয় চিরহরিৎ অরণ্য কাকে বলে

ক্রান্তীয় চিরহরিৎ অরণ্য কাকে বলে

index 37
ক্রান্তীয় চিরহরিৎ অরণ্য কাকে বলে

যেসব অঞ্চলে প্রায় সারা বছর বা বছরের অধিকাংশ সময় বৃষ্টিপাত হয় এবং বার্ষিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ২০০ সেন্টিমিটারেরও বেশি , সেইসব অঞ্চলে চিরহরিৎ বা চিরসবুজ অরণ্য সৃষ্টি হয় । 

এই চিরহরিৎ বা চিরসবুজ অরণ্য সৃষ্টির কারণ হলো ー বেশি বৃষ্টির জন্য ওইসব অঞ্চলে মাটি সব সময় ভিজে থাকে , গাছের কখনও জলের অভাব হয় না । আর দেহের অতিরিক্ত জল যাতে পত্ররন্ধের মাধ্যমে প্রস্বেদন প্রক্রিয়ায় সারা বছরই বার করে দিতে পারে , তাই গাছগুলি তাদের সব পাতা একসঙ্গে না ফেলে ( সারা বছরই ) দু – একটি করে ফেলে । ( পর্ণমােচী গাছ বছরের একটি নির্দিষ্ট সময়ে অধিকাংশ পাতা ফেলে দেয় । ) এরফলে সারা বছরই গাছটি সবুজ দেখায় । আর এই ধরনের গাছের মাধ্যমে যে অরণ্য গড়ে ওঠে তাকে চিরসবুজ বা চিরহরিৎ অরণ্য বলে । ক্রান্তীয় চিরহরিৎ অরণ্য নিরক্ষীয় বৃষ্টি অরণ্য বা ক্রান্তীয় বৃষ্টি অরণ্য নামে পরিচিত । 

পূর্ব হিমালয়ের তরাই অঞ্চল , অসমের পার্বত্য অঞ্চল , পশ্চিমঘাট পর্বতের পশ্চিম ঢাল , আন্দামান নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ প্রভৃতি অঞ্চলে চিরহরিৎ অরণ্য দেখা যায় । এইসব অরণ্যে শিশু , গর্জন , তুন , পুন , বিশপকাঠ , গােলাপকাঠ প্রভৃতি চিরসবুজ গাছ জন্মায় ।

নিরক্ষীয় চিরহরিৎ অরণ্যের বৈশিষ্ট্য

মাটিতে জলের জোগান এবং বাতাসে আর্দ্রতা বেশি থাকে । এছাড়া জৈব সার সমৃদ্ধ গভীর মাটির স্তর সৃষ্টি হয় । এজন্য নিরক্ষীয় জলবায়ু অঞ্চলের ক্রান্তীয় চিরহরিৎ অরণ্য বা নিরক্ষীয় বৃষ্টি অরণ্য বা ক্রান্তীয় বৃষ্টি অরণ্যের বেশ কিছু বৈশিষ্ট্য দেখা যায় । যেমন— 

( i ) বনভূমি অসংখ্য প্রজাতির গাছে পরিপূর্ণ । এত বেশি সংখ্যক প্রজাতি অন্য কোনাে বনাঞ্চলে দেখা যায় না । এই অরণ্যাঞ্চলে কয়েক হাজার প্রজাতির উদ্ভিদ জন্মায় । 

( ii ) সমস্ত উদ্ভিদ খুব দ্রুত জন্মায় ও দ্রুত বাড়ে । কয়েক দিনের মধ্যে গাছগুলি দু-এক মিটার বেড়ে যায় । 

( iii ) বনভূমি অত্যধিক ঘন এবং জঙ্গলে পরিপূর্ণ । বনভূমি এত ঘন যে , সূর্যালােক মাটি পর্যন্ত পৌছাতে পারে না । স্থানে স্থানে দিনের বেলায় যেন রাতের অন্ধকার নেমে আসে । তাই , এই বনাঞ্চলকে চিরগােধূলি অঞ্চল ( Land of Eternal Twilight ) বলে । 

( iv ) বনভূমি আর্দ্র ও স‍্যাঁতসেঁতে , মাটি খুবই নরম । বনের মধ্যে প্রবেশ করা খুবই কষ্টসাধ্য । 

( v ) বনভূমির গাছগুলি খুবই লম্বা । গাছুগলি লম্বায় প্রায় ৪০-৫০ মিটার কিংবা তারও বেশি হয় । বনভূমিতে সূর্যের আলাে ঢুকতে পারে না । সূর্যালােকের জন্য গাছগুলির মধ্যে এক অদৃশ্য প্রতিযােগিতা চলে এবং তারা দ্রুত লম্বা হয় । 

( vi ) গাছের পাতাগুলি বেশ প্রশস্ত ও লম্বা হয় এবং সারা বছর ধরে সবুজ থাকে । তাই , এই অঞ্চলের বনভূমি চিরহরিৎ অরণ্য নামে পরিচিত । 

( vii ) গাছগুলি ডালপালা বিস্তার করে গায়ে গায়ে লেগে থাকে এবং খােলা ছাতার মতাে চাঁদোয়া ( canopy ) তৈরি করে । বড়াে বড়াে গাছগুলি মাথার উপরে এরূপ নিচ্ছিদ্র আচ্ছাদন তৈরি করে বলে সূর্যালােক বনের ভিতরে প্রবেশ করতে পারে না । 

( viii ) বনভূমির তলদেশ লতাগুল্ম , আগাছা ইত্যাদিতে পরিপূর্ণ থাকে । ফলে , বনের মধ্যে এক স্থান থেকে অন্যত্র যাওয়া দুষ্কর হয়ে ওঠে । এজন্য এই অরণ্য দুর্গম । 

( ix ) এই অরণ্যে বিভিন্ন প্রজাতির গাছ পাশাপাশি জন্মায় । প্রতি হেক্টরে প্রায় ২০ থেকে ৪০ টি প্রজাতির গাছ দেখা যায় । এজন্য গাছ নির্বাচন করা এবং তা কেটে ফেলা কষ্টসাধ্য । 

( x ) গাছের শাখা প্রশাখায় অর্কিড জাতীয় পরগাছা জন্মায় । এক গাছ থেকে অন্য গাছে মােটা কাছির মতাে লতানে গাছ বিস্তৃত হয় । এদের লায়না বলে । এক একটি লায়না কয়েক কিলােমিটার দীর্ঘ হয় । 

5 thoughts on “ক্রান্তীয় চিরহরিৎ অরণ্য কাকে বলে

  • Anonymous

    চমৎকার

    Reply
  • Anonymous

    চমৎকার, খুব সুন্দর হয়েছে

    Reply
  • uttam lahiri

    চমৎকার

    Reply
    • Anonymous

      Khub bhalo uposthapana

      Reply

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!