ক্রান্তীয় চিরহরিৎ অরণ্য কাকে বলে
ক্রান্তীয় চিরহরিৎ অরণ্য কাকে বলে

যেসব অঞ্চলে প্রায় সারা বছর বা বছরের অধিকাংশ সময় বৃষ্টিপাত হয় এবং বার্ষিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ২০০ সেন্টিমিটারেরও বেশি , সেইসব অঞ্চলে চিরহরিৎ বা চিরসবুজ অরণ্য সৃষ্টি হয় ।
এই চিরহরিৎ বা চিরসবুজ অরণ্য সৃষ্টির কারণ হলো ー বেশি বৃষ্টির জন্য ওইসব অঞ্চলে মাটি সব সময় ভিজে থাকে , গাছের কখনও জলের অভাব হয় না । আর দেহের অতিরিক্ত জল যাতে পত্ররন্ধের মাধ্যমে প্রস্বেদন প্রক্রিয়ায় সারা বছরই বার করে দিতে পারে , তাই গাছগুলি তাদের সব পাতা একসঙ্গে না ফেলে ( সারা বছরই ) দু – একটি করে ফেলে । ( পর্ণমােচী গাছ বছরের একটি নির্দিষ্ট সময়ে অধিকাংশ পাতা ফেলে দেয় । ) এরফলে সারা বছরই গাছটি সবুজ দেখায় । আর এই ধরনের গাছের মাধ্যমে যে অরণ্য গড়ে ওঠে তাকে চিরসবুজ বা চিরহরিৎ অরণ্য বলে । ক্রান্তীয় চিরহরিৎ অরণ্য — নিরক্ষীয় বৃষ্টি অরণ্য বা ক্রান্তীয় বৃষ্টি অরণ্য নামে পরিচিত ।
পূর্ব হিমালয়ের তরাই অঞ্চল , অসমের পার্বত্য অঞ্চল , পশ্চিমঘাট পর্বতের পশ্চিম ঢাল , আন্দামান নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ প্রভৃতি অঞ্চলে চিরহরিৎ অরণ্য দেখা যায় । এইসব অরণ্যে শিশু , গর্জন , তুন , পুন , বিশপকাঠ , গােলাপকাঠ প্রভৃতি চিরসবুজ গাছ জন্মায় ।
নিরক্ষীয় চিরহরিৎ অরণ্যের বৈশিষ্ট্য
মাটিতে জলের জোগান এবং বাতাসে আর্দ্রতা বেশি থাকে । এছাড়া জৈব সার সমৃদ্ধ গভীর মাটির স্তর সৃষ্টি হয় । এজন্য নিরক্ষীয় জলবায়ু অঞ্চলের ক্রান্তীয় চিরহরিৎ অরণ্য বা নিরক্ষীয় বৃষ্টি অরণ্য বা ক্রান্তীয় বৃষ্টি অরণ্যের বেশ কিছু বৈশিষ্ট্য দেখা যায় । যেমন—
( i ) বনভূমি অসংখ্য প্রজাতির গাছে পরিপূর্ণ । এত বেশি সংখ্যক প্রজাতি অন্য কোনাে বনাঞ্চলে দেখা যায় না । এই অরণ্যাঞ্চলে কয়েক হাজার প্রজাতির উদ্ভিদ জন্মায় ।
( ii ) সমস্ত উদ্ভিদ খুব দ্রুত জন্মায় ও দ্রুত বাড়ে । কয়েক দিনের মধ্যে গাছগুলি দু-এক মিটার বেড়ে যায় ।
( iii ) বনভূমি অত্যধিক ঘন এবং জঙ্গলে পরিপূর্ণ । বনভূমি এত ঘন যে , সূর্যালােক মাটি পর্যন্ত পৌছাতে পারে না । স্থানে স্থানে দিনের বেলায় যেন রাতের অন্ধকার নেমে আসে । তাই , এই বনাঞ্চলকে চিরগােধূলি অঞ্চল ( Land of Eternal Twilight ) বলে ।
( iv ) বনভূমি আর্দ্র ও স্যাঁতসেঁতে , মাটি খুবই নরম । বনের মধ্যে প্রবেশ করা খুবই কষ্টসাধ্য ।
( v ) বনভূমির গাছগুলি খুবই লম্বা । গাছুগলি লম্বায় প্রায় ৪০-৫০ মিটার কিংবা তারও বেশি হয় । বনভূমিতে সূর্যের আলাে ঢুকতে পারে না । সূর্যালােকের জন্য গাছগুলির মধ্যে এক অদৃশ্য প্রতিযােগিতা চলে এবং তারা দ্রুত লম্বা হয় ।
( vi ) গাছের পাতাগুলি বেশ প্রশস্ত ও লম্বা হয় এবং সারা বছর ধরে সবুজ থাকে । তাই , এই অঞ্চলের বনভূমি চিরহরিৎ অরণ্য নামে পরিচিত ।
( vii ) গাছগুলি ডালপালা বিস্তার করে গায়ে গায়ে লেগে থাকে এবং খােলা ছাতার মতাে চাঁদোয়া ( canopy ) তৈরি করে । বড়াে বড়াে গাছগুলি মাথার উপরে এরূপ নিচ্ছিদ্র আচ্ছাদন তৈরি করে বলে সূর্যালােক বনের ভিতরে প্রবেশ করতে পারে না ।
( viii ) বনভূমির তলদেশ লতাগুল্ম , আগাছা ইত্যাদিতে পরিপূর্ণ থাকে । ফলে , বনের মধ্যে এক স্থান থেকে অন্যত্র যাওয়া দুষ্কর হয়ে ওঠে । এজন্য এই অরণ্য দুর্গম ।
( ix ) এই অরণ্যে বিভিন্ন প্রজাতির গাছ পাশাপাশি জন্মায় । প্রতি হেক্টরে প্রায় ২০ থেকে ৪০ টি প্রজাতির গাছ দেখা যায় । এজন্য গাছ নির্বাচন করা এবং তা কেটে ফেলা কষ্টসাধ্য ।
( x ) গাছের শাখা প্রশাখায় অর্কিড জাতীয় পরগাছা জন্মায় । এক গাছ থেকে অন্য গাছে মােটা কাছির মতাে লতানে গাছ বিস্তৃত হয় । এদের লায়না বলে । এক একটি লায়না কয়েক কিলােমিটার দীর্ঘ হয় ।
Vary nice
চমৎকার
চমৎকার, খুব সুন্দর হয়েছে
চমৎকার
Khub bhalo uposthapana