ভূগোল

ম্যানগ্রোভ অরণ্য কাকে বলে

ম্যানগ্রোভ অরণ্য কাকে বলে

images 11
ম্যানগ্রোভ অরণ্য কাকে বলে

সমুদ্রোপকূল সংলগ্ন বদ্বীপের লােনা মাটিতে এক বিশেষ ধরনের শ্বাসমূল ও ঠেসমূল বিশিষ্ট চিরসবুজ উদ্ভিদ , যেমন সুন্দরী , গরান , গেওয়া , হেঁতাল প্রভৃতি বৃক্ষের অরণ্য দেখা যায় । একেই ম্যানগ্রোভ অরণ্য বলা হয় । গঙ্গা বদ্বীপের দক্ষিণভাগে অবস্থিত সুন্দরবন এই ম্যানগ্রোভ অরণ্যের উদাহরণ । সাধারণত লোনা মাটিতে ম্যানগ্রোভ অরণ্য সৃষ্টি হয় কারণ— 

( ১ ) লােনা মাটি নরম ও আঠালাে হওয়ায় মাটির ভিতরে ঠিকমতাে বায়ু চলাচল করতে পারে না । ফলে গাছের শ্বাসপ্রশ্বাস কার্যে অসুবিধা হয় । এজন্য লােনা মাটিতে সাধারণ গাছপালা জন্মাতে পারে । যেসব গাছের শ্বাসমূল থাকে অর্থাৎ কিছু মূল মাটি খুঁড়ে ওপরে উঠে থাকে সেগুলিই কেবলমাত্র এখানে জন্মায় । 

( ২ ) এইসব এলাকায় অনবরত জোয়ারভাটা খেলে , সমুদ্রের বড়াে বড়াে ঢেউ এসে আঘাত করে এবং প্রচণ্ড জোরে বাতাস প্রবাহিত হয় । এর ফলে সাধারণ গাছপালা উপড়ে পড়ে যায় । কিন্তু ম্যানগ্রোভ অরণ্যের গাছগুলির গােড়ায় ঠেসমূল থাকে বলে এই ধরনের প্রতিকূল পরিবেশেও গাছগুলি স্বচ্ছন্দে বেড়ে ওঠে । 

( ৩ ) জলময় পরিবেশে এই অরণ্য গড়ে ওঠে । এই অবস্থায় গাছের ফল বা বীজগুলি জলে পড়ে যাতে নষ্ট না হয় বা ভেসে অন্য কোথাও চলে না যায় তাই ফলগুলি মাটিতে পড়ামাত্র বা পড়ার আগেই তা থেকে অঙ্কুর বেরােয় । এরকম বিভিন্নভাবে জলময় লােনা পরিবেশে খাপ খাইয়ে নিতে পারে বলেই বদ্বীপের লবণাক্ত মাটিতে ম্যানগ্রোভ অরণ্য গড়ে ওঠে ।

ম্যানগ্রোভ অরণ্যের বৈশিষ্ট্য

ম্যানগ্রোভ অরণ্যের উল্লেখযােগ্য বৈশিষ্ট্য হল— 

( ১ ) লােনা মাটিতে শ্বাস-প্রশ্বাসে অসুবিধা হয় বলে গাছগুলির কিছু শিকড় মাটি কুঁড়ে ওপরে উঠতে থাকে , এগুলিকে বলে শ্বাসমূল । 

( ২ ) জোয়ারভাটা এবং ঢেউ -এর হাত থেকে নিজেদের রক্ষা করার জন্য গাছগুলি গােড়ার দিকে অনেক ঠেসমূল রেখে দেয় । 

( ৩ ) এইসব অঞ্চলে অনবরত জোয়ারভাটা হয় বলে মাটি লােনা এবং সব সময় ভিজে থাকে । মাটি থেকে প্রচুর পরিমাণে জল পাওয়া যায় বলে গাছে সারা বছর পাতা থাকে অর্থাৎ গাছগুলি চিরসবুজ হয় । এজন্য এই অরণ্যের অপর এক নাম চিরসবুজ উপকূলীয় বনভূমি । ম্যানগ্রোভ অরণ্যে সুন্দরী , গরান , গেওয়া , হেঁতাল , কেয়া , গােলপাতা প্রভৃতি গাছ বেশি দেখা যায় ।

গঙ্গাব্ৰহ্মপুত্র বদ্বীপের ম্যানগ্রোভ অরণ্যে সুন্দরী গাছ বেশি দেখা যায় বলে এই অরণ্যের নাম সুন্দরবন । মহানদী বদ্বীপের ম্যানগ্রোভ বনভূমির নাম ‘ ছােটো সুন্দরবন ‘ । ম্যানগ্রোভ অরণ্যের গাছগুলির কাঠ খুব মূল্যবান । গােরুর গাড়ির চাকা , নৌকা , লাঙল , বাড়িঘরের খুঁটি প্রভৃতি তৈরির জন্য এই কাঠ ব্যবহার করা হয় । এছাড়া এই অরণ্য থেকে প্রচুর পরিমাণে মধু সংগ্রহ করা হয় ।

One thought on “ম্যানগ্রোভ অরণ্য কাকে বলে

  • ম্যান গ্রাফ অরণ্য

    Reply

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!