ভারতের স্বাভাবিক উদ্ভিদের উপর জলবায়ুর প্রভাব
Contents
ভারতের স্বাভাবিক উদ্ভিদের উপর জলবায়ুর প্রভাব

মানুষের বিনা চেষ্টায় প্রকৃতির বুকে স্বাভাবিকভাবে যে উদ্ভিদ জন্মায় তাকেই বলে স্বাভাবিক উদ্ভিদ । এই স্বাভাবিক উদ্ভিদই বন বা অরণ্য তৈরি করে ।
স্বাভাবিক উদ্ভিদের ওপর জলবায়ু , বিশেষত বৃষ্টিপাতের প্রভাব অপরিসীম । ভারতের বিভিন্ন অংশে এই জলবায়ুর তারতম্যে সাত প্রকার স্বাভাবিক উদ্ভিদ দেখা যায় , যেমন— ( ১ ) চিরসবুজ বনভূমি , ( ২ ) আর্দ্র পর্ণমােচী বনভূমি , ( ৩ ) শুষ্ক পর্ণমােচী বনভূমি , ( ৪ ) কাঁটাঝােপ ও গুল্ম উদ্ভিদ , ( ৫ ) মরু উদ্ভিদ , ( ৬ ) হিমালয় পার্বত্য অঞ্চলের বনভূমি এবং ( ৭ ) উপকূলের লবণাক্ত জলাভূমির বনভূমি বা ম্যানগ্রোভ অরণ্য ।
চিরসবুজ বনভূমি
ভারতের যেসব অঞ্চলে বার্ষিক ২০০ সেমির বেশি বৃষ্টিপাত হয় সেখানে চিরসবুজ অরণ্য দেখা যায় । উত্তর-পূর্ব ভারতের পার্বত্য অঞ্চল বা পূর্বাচল , পূর্ব হিমালয়ের পাদদেশের তরাই অঞ্চল , পশ্চিমঘাট পর্বতের পশ্চিম ঢাল , আন্দামান-নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ প্রভৃতি এলাকায় চিরসবুজ বনভূমি আছে । এই বনভূমিতে যেসব গাছ জন্মায় সেগুলির মধ্যে শিশু , গর্জন , তুন , পুন , বিশপকাঠ , গােলাপ কাঠ প্রভৃতি উল্লেখযােগ্য ।
আর্দ্র পর্ণমোচী বনভূমি
যেসব এলাকায় বছরে ১০০ থেকে ২০০ সেমি বৃষ্টিপাত হয় , সেখানে আর্দ্র পর্ণমােচী বনভূমির সৃষ্টি হয়েছে । অসমের সমভূমি এলাকা , ঝাড়খণ্ড মালভূমি ও গঙ্গা সমভূমির পূর্বাংশ , পশ্চিমবঙ্গের সমভূমি ও মালভূমি এলাকা , ওড়িশার মালভূমি ও উপকূলভাগ , পশ্চিমঘাট পর্বতমালার পূর্ব ঢাল প্রভৃতি এলাকায় এই জাতীয় বনভূমি দেখা যায় । শাল , সেগুন , পলাশ , আবলুশ , জারুল , মহুয়া , শিরীষ , কুসুম , খয়ের প্রভৃতি এই বনভূমির উল্লেখযােগ্য গাছ ।
শুষ্ক পর্ণমোচী বনভূমি
ভারতের যেসব স্থানে বার্ষিক ৫০ থেকে ১০০ সেমি বৃষ্টিপাত হয় সেখানে নানা ধরনের ঘাস , বিশেষত হাতি ঘাস , শরচাপড়া ঘাস ও সাবাই ঘাস এবং মাঝে মাঝে শাল , পলাশ , শিমুল জাতীয় কিছু গাছ জন্মায় । এগুলিকেই একসঙ্গে বলে শুষ্ক পর্ণমোচী বনভূমি । বিহারের পশ্চিমাংশ , উত্তরপ্রদেশের পশ্চিমাংশ এবং কর্ণাটক , মহারাষ্ট্র , তামিলনাড়ু , অন্ধ্রপ্রদেশ প্রভৃতি রাজ্যের শুষ্ক মালভূমি অঞ্চলে এই জাতীয় বনভূমি দেখা যায় ।
কাঁটা ঝোপ ও গুল্ম উদ্ভিদ
যেসব স্থানে বার্ষিক বৃষ্টিপাত ২০ থেকে ৫০ সেমি এবং উষ্ণতা খুব বেশি সেখানে বাবলা , ফণিমনসা বা ক্যাকটাস , খেজুর প্রভৃতি গাছ জন্মায় । রাজস্থানের মরুপ্রান্তে , গুজরাতের কচ্ছ কাথিয়াবাড়ে এবং দাক্ষিণাত্য মালভূমির মধ্যভাগের এক সংকীর্ণ শুষ্ক এলাকায় এই জাতীয় উদ্ভিদ দেখা যায় ।
মরু উদ্ভিদ
রাজস্থানের মরু অঞ্চলে বার্ষিক বৃষ্টিপাত হয় গড়ে ২০ সেন্টিমিটার বা তারও কম এবং উষ্ণতা অত্যন্ত বেশি । এরকম এক শুষ্ক অবস্থার জন্য এখানে উদ্ভিদ খুবই কম জন্মায় । শুধু মাঝে মাঝে কাঁটাগাছ , ফণিমনসা এবং বালির ওপর দু একটি করে ঘাস দেখা যায় ।
হিমালয় পার্বত্য অঞ্চলের বনভূমি
হিমালয় পার্বত্য অঞ্চলে উচ্চতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে উষ্ণতা ও বৃষ্টিপাতের তারতম্য হয় বলে পর্বতের পাদদেশ থেকে ক্রমশ ওপরের দিকে স্বাভাবিক উদ্ভিদের অনেক বৈচিত্র্য লক্ষ করা যায় , যেমন—
( i ) পূর্ব হিমালয়ে পর্বতের পাদদেশ এলাকা থেকে ১,০০০ মিটার উচ্চতা পর্যন্ত শিশু , চাপলাস , গর্জন প্রভৃতি গাছের চিরহরিৎ বনভূমি আছে । ( ii ) পূর্ব হিমালয়ে ১,০০০ থেকে ২,৫০০ মিটার এবং পশ্চিম হিমালয়ে ৫০০ থেকে ২,০০০ মিটার উচ্চতায় পপলার , ওক , ম্যাপল , বার্চ , লরেল প্রভৃতি গাছের মিশ্র বনভূমি আছে ।
( iii ) পূর্ব হিমালয়ে ২,৫০০ থেকে ৪,০০০ মিটার এবং পশ্চিম হিমালয়ে ২,০০০ থেকে ৩,২০০ মিটার উচ্চতা পর্যন্ত পাইন , ফার , লরেল , দেবদারু প্রভৃতি সরলবর্গীয় গাছের বনভূমি আছে ।
( iv ) সরলবর্গীয় অরণ্যের পর প্রায় ৪,৫০০ মিটার উচ্চতা পর্যন্ত জুনিপার , রডােডেনড্রন , ভুর্জ এবং নানা রকমের তৃণ ও গুল্ম জন্মায় । এগুলিকে একসঙ্গে বলে আল্পীয় উদ্ভিদ ।
উপকূলের লবণাক্ত জলাভূমির বনভূমি বা ম্যানগ্রোভ অরণ্য
গঙ্গা , মহানদী , গােদাবরী বদ্বীপের যেসব স্থানে মাটি লবণাক্ত এবং নিয়মিত জোয়ারভাটা হয় সেখানে কিছু বিশেষ ধরনের গাছ জন্মায় । এইসব গাছের শ্বাসমূল ও ঠেসমূল থাকে । পশ্চিমবঙ্গের সুন্দরবন অঞ্চলের এক বিরাট এলাকা জুড়ে ম্যানগ্রোভ বনভূমি দেখা যায় , যেখানে সুন্দরী , গরান , গেওয়া , হেঁতাল , কেয়া , গােলপাতা প্রভৃতি বিভিন্ন ধরনের উদ্ভিদ জন্মায় ।
Thanks☺️☺️
Thanku so much 🥰
I love you too baby
Very bad